তানোরে আমন ধান কাটা মাড়ায়ে ব্যস্ত কৃষক

কৃষি

সারোয়ার হোসেন, তানোর: যেদিকে তাকায় চোখ যায় যতদূরে শুধুই সোনালী ফসলে ভরা কৃষকের তৃপ্তি জাগানো রক্ত ঘামানো জীবনের সব উজাড় করে দিয়ে মাঠে ফলিয়েছেন বাঙালি জাতির প্রধানতম খাবার ধান। অনেক প্রতিকূলতা পার করে উত্তরবঙ্গের ধান ফলানোর অন্যতম এলাকা রাজশাহীর তানোর উপজেলা। উপজেলার প্রতিটি এলাকা জুড়ে মাঠের জমিতে শোভা পাচ্ছে কেটে রাখা সোনালী ধানের শীষ। প্রতিটি মাঠে একসাথে পেকেছে ধান। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে এক সাথে কাটাও পড়েছে বেশিরভাগ ধান। বারবার প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা করে সোনালী ধান দেখে মন উজাড় করছেন হাজারো কৃষকের মন। সেই ধান কাটতে আগমন ঘটছে বহিরাগত কৃষি শ্রমিক সহ স্থানীয় শ্রমিকদের। ফলে গার্হস্থ্য কৃষকদের মনে একপ্রকার উল্লাসের ছাপ লক্ষ করা গেলেও ধানের কাঙ্কিত দাম নিয়ে একটু বেজার রয়েছে কৃষক।

জানা যায়, উপজেলার জনসাধারণ কৃষির উপর নির্ভরশীল। তার মধ্যে আমনের ফসল সবচেয়ে বেশি জমিতে চাষ হয়। শুরু থেকেই বন্যা সহ নানা দূর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে চাষিদের। অনেকের জমি পানিতে ডুবে গেছে। চারার অভাবে পুনরায় রোপন করতে পারেন নি নিচু এলাকার জমির মালিকরা। আবার ধীর গতিতে পানি নামার কারণে অনেকের রোপিত জমি ডুবে গেলেও পানি না নামার কারণে রোপন হয়নি জমি। সেই সাথে দেখা দেয় ব্যাপক হারে কারেন্ট পোকা সবচেয়ে মহা দুশ্চিন্তাই ফেলে কৃষকের কপালে চরম ভাঁজ পড়েগেছিল।

সব প্রতিকূলতা পিছনে ফেলে তৃপ্তির ঢেকুর ফেলা শুরু হয়েছে কৃষকদের মনে। কারণ এ আমন ধানের উপর নির্ভরশীল হাজারো কৃষক। কৃষকরা বলছেন, সোনালী রঙে সেজেছে দিগন্ত জোড়া আমন ধানের মাঠ। ধান কাটা পড়ে কমবেশি এক সাথে। এজন্যে ধান কাটা শ্রমিক সংকট দেখা দেয় চরম তাকে। উপজেলার হাজারো কৃষকের শ্রমিক হিসেবে ধান কেটে থাকেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের কৃষি শ্রমিকরা। তাঁরাও আসা শুরু করেছেন গার্হস্থ্যদের বাড়ীতে। বাড়ীর বারান্দা খৈলানে অস্থায়ী বসত গড়ে তোলেন বহিরাগত শ্রমিকরা। আর দু’এক সপ্তার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে ধান কাটা। কৃষক তোফাজ্জুল হোসেন জানান, এবারে আমন চাষ করেছি ১৭ বিঘা জমিতে। ধান চাষে প্রয়োজন পানি। কিন্তু পানির সমস্যা তো থাকে সেই সাথে কারেন্ট পোকার আক্রমণ ছিল প্রচুর। বাধ্য হয়ে কারেন্ট পোকা দমনে মাটিতে শুয়ে পড়া শীষের উপর বিশ স্প্রে করতে হয়েছে। যার কারণে বিঘা প্রতি ৫/৭ মন করে ফলন কম হচ্ছে ও হবে বলে আশংকা করছেন তিনি। তারপরও সোনালী ধানের শীষ দেখে মন উজাড় হচ্ছে কৃষকের। কারণ উঠতে শুরু করেছে কৃষকের রক্ত ঘামের ফসল ঘরে। ফসল আশা মানেই এক প্রকার শান্তি। তবে তুলনামূলক ফলন কম হবে। তিনি আরো জানান বহিরাগত চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা থেকে ১৫/২০ জন শ্রমিক এসে আমার খৈলানে বসতি গড়ে তুলে এলাকার বিভিন্ন কৃষকের ধান কেটে থাকেন। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে ঘটবে তাদের আগমন। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে চলতি আমন ধান রোপন হয়েছে প্রায় ২২ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে। তানোরে ১০ জাতের ধান রোপন করেছেন উপজেলার কৃষকরা। তার মধ্যে ৪৯ জাতের ধান রোপন হয়েছে ১৫৪৭ হেক্টর জমিতে, ৫২ জাতের ১৫০ হেক্টর, ৫১ জাতের ১১৬০ হেক্টর, ৬২ জাতের ১৫০ হেক্টর, ৫৬ জাতের ১২৫ হেক্টর, ৩৪ জাতের ৩২০ হেক্টর, ৫৭ জাতের ২০ হেক্টর, বিনা ৭ জাতের ১৯৫০ হেক্টর, স্বর্ণা ১৪ হাজার ৮১২ হেক্টর, স্থানীয় জাতের ১২৬৪ হেক্টর জমিতে।

গুবিরপাড়া গ্রামের কৃষক মতিউর জানান ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগানো হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে কাটা পড়বে। কাচি হিসেবে ২৫/২৬ মন করে বিঘা প্রতি ফলন হতে পারে। তবে গত আমন মৌসুমে ৩০/৩২ মন করে বিঘা প্রতি ফলন হয়েছিল। এবারেও আগের মতই ফলন হত। কিন্তু সেচের অভাবে ও কারেন্ট পোকা দমনে ৬/৭ বার করে বিশ দিতে হয়েছে। বর্তমানে ধানের বাজার কাচি একমন ৪৮০/৫১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২৮ কেজি ধানে কাচিতে হয় এক মন। আর পাকি একমন ধান বিক্রি হচ্ছে ৮১০/৮২০ টাকা দরে। ৩৭ কেজি ধানে পাকিতে হয় একমন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন আবহাওয়া অনুকূলে আছে। এবারে আমনের ফলন ভালো হবে। ধানের দামও ভালো আছে। হেক্টর প্রতি ৬ মেঃ টন করে ফলন ধরা হয়েছে। সে হিসেবে ২২ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের ফলন হবে ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৯০০ মেঃ টন। যা উপজেলার জনসাধারণের চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। আর আমন আবাদ হয় সবচেয়ে বেশি। ধান কাটা শুরু হয়েছে কৃষকের মনে আনন্দের ছাপও লেগেছেবলে তিনি জানান।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *