রাজশাহীর বাগমারায় সরিষা ভালো ফলনের আশা কৃষকদের

কৃষি রাজশাহী লীড

বাগমারা প্রতিনিধি : শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি আর উপকরণ খরচ কমাতে বাগমারায় বিগত বছরের চেয়ে অধিক জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। কম খরচে বেশি লাভের আশায় এবার এলাকায় সরিষার চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং মৌমাছিরা ফুলে সঠিকভাবে পরাগায়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হলে এ উপজেলায় এবার সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করছেন কৃষকেরা। তবে গত দুই ধফা ঝিরি-ঝিরি বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশায় সরিষা ক্ষেতের পচনে কিছুটা শঙ্কা দেখা দেয়।

এদিকে ফলন বিপর্যয় এড়াতে কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকরা ছত্রানাশক কীটনাশক স্প্রে করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

জানা যায়, এ এলাকার মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। এখানে কৃষকরা ব্যাপক হারে পাট, ধান, আলুসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করেন। ধান চাষে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের মূল্য হ্রাসে উৎপাদন খরচ জুটছে না। বোর মওসুমে ধান বিক্রি করেছেন ৬০০/৭০০/-টাকা মণ। পাট বিক্রয় করেছেন ১২০০/-টাকা থেকে ১৩০০ টাকা মন প্রতি বিক্রি। এতে কৃষকরা উৎপাদনে মুলধন হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

মহাজন ও ব্যাংক ঋণের টাকায় ফসল করে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ভিটে-মাটি বিক্রি করে নিঃস্ব হতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে অল্প খরচে অধিক লাভজনক সরিষা চাষে কৃষক ঝুঁকেছেন।

উপজেলার বালানগর গ্রামের কৃষক, ফসির উদ্দিন, মজিবর রহমান, কাজেম আলী, মাধাইমুড়ি গ্রামে শামসুদ্দীমসহ অনেকে জানান, বহুদিন ধরে তারা কৃষি কাজ করে আসছেন। কিন্তু বর্তমানে কৃষি উপকরণ ও শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধিতে বর্তমানে লোকশান গুণতে হচ্ছে। ধান, পাট ও আলু চাষ করে এবছরে কোন অর্থ তার যোগাতে পারেননি। লোকশানের পরিমান এত বেশি হয়েছে মহাজনের ঋণের টাকা যোগাতে তার গরু বিক্রি করতে হয়েছে। তাই স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে কম খরচের ফসল সরিষা চাষ করেছেন।

সরেজমিনে বাগমারার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌর এলাকার দিগন্ত জোড়া মাঠে এখন সরিষার ফুলের হাতছানি। এ বছর টরি ১৪,৭, ও ৮ জাতের সরিষার আবাদ কৃষককের নজর কেড়েছে। গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে ও নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে একটানা ভারি বর্ষণের কারণে সঠিক সময়ে জমিতে সরিষার বীজ বপন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে গত বছর এ অঞ্চলে সরিষার আবাদ কিছুটা কম হয়েছিলো। তবে চলতি মওসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় অক্টোবরের মাঝামাঝি দিকেই কৃষকেরা জমিতে সরিষা বীজ বপন করেছে।

এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ঝাঁকে-ঝাঁকে মৌমাছিরা মধু আহরণের লক্ষ্যে সরিষা গাছের ফুটন্ত ফুলে বসে পরাগায়ন সৃষ্টি করছে। তবে গত কয়েক দিনে দুই দফা ঝিরি-ঝিরি বৃষ্টি ও দফায়-দফায় শৈত্যপ্রবাহ ঘন কুয়াশায় ফলন বিপর্যয় শঙ্কা করছেন কৃষকরা। তবে উপজেলার কৃষি অফিসের তদারকিতে রোগ প্রতিরোধে কৃষকরা ছত্রানাশষ স্প্রে করছেন বলে উপজেলায় কর্মরত বাসুপাড়া ইউনিয়নের দায়িত্বশীল উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহাগ ইসলাম জানিয়েছেন।

গত শনিবার তিনি উপজেলার বাসুপাড়ার বালানগর গ্রামে মোফাজ্জল হোসেনের সরিষার একটি কৃষি প্রদর্শনী ক্ষেত পরিদর্শন ও পরামর্শ প্রদান করেন। এ সময় তিনি বলেন, জমিতে সরিষার গাছ পরিপুর্ণ হয়ে উঠছে। ঘনকুয়াশা নামতে শুরু করায় শঙ্কা ছিল আবহাওয়া মোটামোটি কেটে গেছে। এছাড়া সন্ধ্যার আগে কীটনাশক দিতে পরামর্শ দেয়া চলছে। এ ক্ষেত্রে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ ব্যাপারে বাগমারা উপজেলা কৃষি অফিসার রাজিবুর রহমান বলেন, চলতি রবি মওসুমে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু কৃষকেরা কম খরচে স্বল্প সময়ের সরিষার আবাদ চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়ায় লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে গেছে। উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভা এলাকায় চলতি মওসুমে ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে টরি-৭ ও ১৪ জাতের সরিষার চাষ করা হয়েছে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে।

অবশিষ্ট ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে রাই, জাপানী ও দেশি জাতের সরিষা। এবছরে অন্য বড় ধরনের দুর্যোগ বালাই না হলে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *