বাণিজ্যিকভাবে দেশেই চাষ হচ্ছে ভিনদেশী ড্রাগন ফল

কৃষি

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ভিনদেশী ড্রাগন ফল। ভেষজ জাতীয় এ ফল অত্যান্ত লাভজনক। এই ফল চাষ করার জন্য জৈব সারই যথেষ্ট। অতিরিক্ত অন্য কোনো সার বা কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলকা থেকে খরিদ্দাররা বাগানে এসে কিনে নিয়ে যায়।

যশোর জেলার চৌগাছায় স্থানীয় উদ্যোক্তা ইসমাইল হোসেন প্রথমে ড্রাগন চাষে বিনিয়োগ করে সফলতা অর্জন করেন। তার সফলতা দেখে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ইতোমধ্যেই ১০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন বাগানের মালিকরা।

চাষিরা জানিয়েছেন, চৌগাছায় ড্রাগন চাষ ইতিমধ্যেই শতবিঘা ছাড়িয়ে গেছে। উপজেলার তিলকপুর গ্রামের একছের আলীর ছেলে এনামুল হোসেন ওরফে ইসলামাইল। তার ছোট বেলার শখ ছিল কৃষির উপর ব্যতিক্রম কিছু করা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে চাকরি নেন একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে। পরে চাকরি ছেড়ে থাই পেয়ারা, আপেল ও বাউ কূলের বাগান করেন তিনি। নতুন কিছু করার চিন্তায় ইন্টারনেটে ড্রাগন ফল চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। ২০১৫ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারা এনে নিজের দুই বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেন। বর্তমানে ১০ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ রয়েছে তার। তিনি জানান, প্রতিবছর প্রতি একর বাগান থেকে বছরে প্রথম পর্যায়ে ৬/৭ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করা সম্ভব। এছাড়া চারা বিক্রি করে আরো কয়েক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

কয়েকজন চাষী জানান, প্রতি বছরই এই গাছ বড় হবে এবং ফলের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। একটানা বছরের ৭ মাস এই ফল পাওয়া যায়। এবং একবার চারা লাগালে ৩০ থেকে ৪০ বছর একইভাবে ফল হয়। ফলে কাঙ্খিত পরিমাণে লাভবান হওয়া সম্ভব।

উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বুন্দলিতলা গ্রামের চাষী সোলাইমান হোসেন বলেন, প্রথম পর্যায়ে এই বাগানে এতো টাকা বিনিয়োগ করে ড্রাগন ফল চাষ করা স্বপ্নে দেখা কল্পকাহিনীর মত মনে করতাম। তার পরেও ড্রাগন বাগান তৈরি করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। এক পর্যায়ে নিজের ভূষি মালের ব্যবসা বন্ধ করে প্রথমে ১ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করি। এক বিঘা জমিতে বছরে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বাগানের দেড় বছর বয়সে চারা ও ড্রাগন ফল বিক্রি করে ৪ লাখেরও বেশি টাকা আয় করেছি। প্রতি কেজি ড্রাগন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। ভালা লাভ হওয়ায় এ বছরে আরো এক বিঘা জমিতে নতুন বাগান করেছি। সোলাইমান জানান, ড্রাগনের সাথে সাথি ফসল হিসেবে পেয়ারা চাষ রয়েছে। যেখান থেকে ড্রাগন পরিচর্যার সকল খরচ উঠে আসে বরং কিছু টাকা লাভ থাকে।

সিংহঝুলী গ্রামের প্রবাস ফেরত হেলাল উদ্দিন ওরফে মিঠু খান বলেন, বিদেশ থেকে বাড়ি এসে কি করবো চিন্তা করছিলাম। এ সময় সৌখিন চাষ হিসেবে ড্রাগন চাষের কথা মাথায় আসে। আবার বাজারে ড্রাগন ফলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যে কারণে আমি ৯ বিঘা জমিতে ড্রাগন বাগান করি। বাগানের বয়স ১ বছর হয়েছে। গাছ ফল আসতে শুরু করেছে। অল্প কিছু ড্রাগন ফল প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।

চাষিরা জানান, ভেষজ জাতীয় এ ফল অত্যান্ত লাভজনক। এই ফল চাষ করার জন্য জৈব সারই যথেষ্ট। অতিরিক্ত অন্য কোনো সার বা কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলকা থেকে খরিদ্দাররা বাগানে এসে কিনে নিয়ে যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন বলেন, চৌগাছা এলাকা ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযোগী। উপজেলায় প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান রয়েছে। জমি থেকে ড্রাগন ফল সংগ্রহ করে বিক্রি শুরু করেছেন চাষিরা। মিষ্টি ও হালকা টক জাতীয় স্বাদের নানা পুষ্টিগুণে ভরা ড্রাগন ফল চাষ লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ করার জন্য আমরা চাষিদের উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করছি।
সূত্র : বাসস

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *