পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা সেইদিন

শিক্ষা

স্বদেশবাণী ডেস্ক: পৌষ মানেই ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো প্রকৃতি, পৌষ মানেই শিশিরে ভেজা ঘাসের ডগায় সূর্যিমামার সোনালী আবরণের রাশি। পৌষ মানেই বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলুদ সরষে ফুলের সমাহার, পৌষ মানেই বাংলার বুকে অতিথি পাখিদের সাদরে আমন্ত্রণ।

তবে এই উপচে পড়া পৌষের সৌন্দর্যের ভিড়ে বন্ধু-বান্ধব, আনন্দ-উল্লাস, হৈ-হুল্লোড় ব্যতীত ক্যাম্পাসে পৌষের রৌদ্র আলিঙ্গন আপনাকে কী মুগ্ধ করতে পারছে? জানতে চাওয়া হয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুইটি মনির কাছে।

তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কাটানো প্রতিটি শীত আমাকে শিখিয়েছে বন্ধু-বান্ধবকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে। আনন্দ-উল্লাসে বন্ধুত্বের অস্তিত্বকে সাদরে গ্রহণ করতে। অথচ মনে হচ্ছে- এবারের শীত এক দীন-হীন বেশ ধারণ করেছে। কারণ, এই পৌষে আমি যে সঙ্গী হারা। বিগত বছরগুলোতে বন্ধুরা মিলে দাপিয়ে বেড়িয়েছি ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে। আমাদের দুষ্টুমিতে মুখরিত ছিল পিঠা চত্ত্বর। মিষ্টি রোদকে সঙ্গী করে সবুজে আবৃত মাঠে গোল চায়ের আড্ডা ছিল বন্ধুদের। সত্যিই, বন্ধু-বান্ধব ব্যতীত ক্যাম্পাসে পৌষের রৌদ্র আলিঙ্গন আমাকে মুগ্ধ করতে পারেনা।’

উত্তুরে হিমেল হাওয়াকে সঙ্গী করে প্রকৃতির মাঝে একাকার হয়ে যাওয়ার নামই শীতকাল। ঋতুচক্রের আবর্তে পৌষ এবং মাঘ এই দুই মিলে শীতকাল। তবে পৌষের শীতের রয়েছে সৌন্দর্যে মোড়ানো স্বতন্ত্র নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য। আর পৌষের আড্ডা মানেই তো কুয়াশার বুক ভেদ করে ফুটে ওঠা আলোর রেখা। তাহলে ক্যাম্পাস এবং বাসার পৌষের আড্ডার মধ্যে পার্থক্য কতটুকু বলে আপনি মনে করেন?

এমন প্রশ্নের প্রতিত্তোরে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী আখলাকুল ইসলাম লিমন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মানেই ক্যাম্পাস, বন্ধু, আড্ডা, বড় ভাইয়া-আপুদের অকৃত্রিম ভালোবাসা আর বিস্তর পরিসরে নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরা। এই অনুভূতিগুলো আসলে বিরল। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আমার ক্ষেত্রেও অনুভূতিগুলো একই রকমের। প্রিয় ক্যাম্পাস, প্রিয় লালবাস, বন্ধু, আড্ডা এবং নিজেকে মেলে ধরার মধ্যে আমি আমার জীবনের তৃপ্তি খুঁজে পাই। গোল হয়ে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটানোর উপযুক্ত সময় শীতকাল। বাদাম তলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ কিংবা একাডেমি ভবনের বি-ব্লক এর সামনে পড়ন্ত বিকেল অথবা সকালের মিষ্টি রোদে আড্ডা বেশ উপভোগ্য। কিন্তু এই করোনা মহামারী আসার পর সব কিছু যেন পরিবর্তন হয়ে গেছে, এখন চাইলেও সেই আড্ডাগুলো আর দেওয়া যায় না। বন্ধু ব্যতীত পৌষের আড্ডা ঠিক জমে না। তাইতো বাসায় সময় কাটানো, আড্ডা দেওয়ার প্রতিটি মুহূর্তে বন্ধুদের খুব মনে পড়ে।’

শীতের সকালের আড্ডা বড়ো মনোরম। বন্ধুরা মিলে শীতের রোদকে উপভোগ করার মাঝে কী যে প্রশান্তি তা বলে বুঝানো যায়না! যদিও ক্যাম্পাসের সবকিছু আগের মতোই আছে। পিঠার দোকানও বসেছে, বন্ধুরা আড্ডাও দিচ্ছে। তবে আগের সেই আমেজগুলো কী খুঁজে পাচ্ছেন?

এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সেই আমেজগুলো আর নেই! বন্ধুত্বের আড্ডাগুলো আজ বড়ো ছন্নছাড়া, এখন আর এক প্লেটে পিঠাপুলির আড্ডাও নেই। ক্লাসের ফাঁকে রোদ্দুর স্নানে চায়ের কাপের মাঝে সেই সুখ দুঃখের খুনসুটিগুলোও আজ আর নেই। যদিও ক্যাম্পাসে সবকিছু আগের মতোই স্থির হয়ে আছে। আর আমি উন্মুখ হয়ে আছি বন্ধুত্বের সেই দুষ্টুমি মিশ্রিত আমেজগুলো ফিরে পেতে।’

দিগন্ত বিস্তৃত সাদা শাড়ির মধ্যে থেকে উঁকি মেরে সূর্যের মুখ দেখতে চাওয়ার নামই পৌষমাস। এক সময় সূর্য ওঠে, আস্তে আস্তে রোদ ছড়িয়ে পড়ে, উত্তাপ বাড়তে থাকে। আর প্রস্তুতি চলতে থাকে ক্যাম্পাস মাতোয়ারা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসমুখী হওয়ার। যদিও এই মহামারি করোনা আমাদের এবারের পৌষের ক্যাম্পাসকে করেছে প্রাণশূন্য। তবে আগামী পৌষের প্রত্যাশাকে তো আমরা বিমুখ করতে পারি না।

প্রিয় ক্যাম্পাসে আগামী পৌষের প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার কলি বলেন, ‘ক্যাম্পাস মানেই প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে একটি আবেগের জায়গা। আর ক্যাম্পাসে শীত মানেই ক্যান্টিনে বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা। ক্যাম্পাসের শীতের একটি বড়ো আকর্ষণ হলো- পৌষের পিঠা উৎসব। চলতি বছরে মহামারির কারণে আমরা এই অবিচ্ছেদ্য আনন্দে শামিল হতে পারিনি। আগামী পৌষে আমি চাইলেও ক্যাম্পাসে পৌষ উদযাপন করতে পারবো না। তবে আমার মন পড়ে থাকবে ক্যাম্পাসের বাদামতলায়, পিঠা চত্ত্বরে। আর প্রত্যাশা থাকবে একটাই- আগামী পৌষের ক্যাম্পাস মুখরিত হোক নবীন এবং প্রবীণদের কোলাহলে।’

রাতের ঝরা শিশিরকে বিদায় জানিয়ে যেমন এক সময় সোনালী সূর্যের আগমণ ঘটে। তেমনি আমাদের জীবনেও এই রিক্ত-শূন্য পৌষকে মুছে ফেলে বারবার ফিরে পেতে চাই- বন্ধু-বান্ধব মিলে আনন্দ-উল্লাসে মুখরিত পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা সেইদিন।

লেখক- ধীরা ঢালী, শিক্ষার্থ, ভাষা যোগাযোগ ও সংস্কৃতি বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *