গবেষণায় ‘উদাসীন’ শিক্ষক

লীড শিক্ষা

স্বদেশবাণী ডেস্ক: দেশে অর্ধেকের বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম নেই। গবেষণা না থাকায় এক শতাংশ শিক্ষকেরও নেই মৌলিক গ্রন্থ। আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনার সংখ্যাও খুবই কম। দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষক পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়াই কাজ করছেন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা আরও করুণ।

এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপকের সংখ্যা মাত্র সাড়ে ১২ শতাংশ। এর অর্ধেকই খণ্ডকালীন। ২০১৯ সালে ইউজিসি গবেষণার জন্য ১২৮৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। নানা কারণে বাতিল করেছে ৪৬৯টি। শেষ হয়েছে ১৫১টি। করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে গবেষণার মাধ্যমে টিকা আবিষ্কার করেছে পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়।

কিন্তু দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ধরনের কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, জবাবদিহিতা ও বিধানের অভাবসহ পাঁচ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গবেষণায় শিথিলতা বিরাজ করছে। তারা মনে করেন, কাঙ্ক্ষিত গবেষণা কার্যক্রম না থাকায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিণত হয়েছে শ্রেণি কার্যক্রমভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শিক্ষার্থী ভর্তি আর তাদের পাশ করানোই প্রধান কাজে পরিণত হয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ হচ্ছে মৌলিক গবেষণা ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টি। যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই চিত্র।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা আর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে শিক্ষার্থী পড়ানোর মূল দায়িত্ব শিক্ষকের। শিক্ষার্থীদের হালনাগাদ জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত করানোর পাশাপাশি গবেষণায় নেতৃত্ব দিতে শিক্ষকদের আগে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া দরকার। কিন্তু ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরই দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি নেই।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এ অবস্থা আরও করুণ। পিএইচডি ডিগ্রি দূরের কথা, এসব প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র শিক্ষকের সংকটই প্রকট। মোট ১৬০৭০ শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক মাত্র ২১১৩ জন বা সাড়ে ১২ শতাংশ। তাদের মধ্যে আবার ১৩০৮ জনই খণ্ডকালীন। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ খাতে কমবেশি বরাদ্দ থাকলেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগই বরাদ্দ রাখে না। কাগজে-কলমে রাখলেও তা আবার খরচ না করার নজির আছে।

২০১৯ সালে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ওই বছর ৪৬টির মধ্যে ১৯টির একটি গবেষণা প্রকাশনাও নেই। দিনাজপুরের হাজী দানেশ, সিলেট কৃষি ১টি করে, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ২টি করে এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৩টি প্রকাশনা বের করে তালিকায় নাম টিকিয়ে রেখেছে।

২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি গবেষণা প্রকাশনা বের করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ৯ হাজার ৪শ। এছাড়া রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১৭৩৯, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৫৭১, রুয়েট ৫৬৬, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ৫১৮ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৭২টি প্রকাশনা হয়েছে বলে ইউজিসিকে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

২০১৯ সালে সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট এমফিল গবেষণা হয়েছে ২২০টি এবং পিএইচডি ২৩৩টি। এছাড়া চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমএস/এমফিল/পিএইচডি, এমএমএস/এমএমএড/এফসিপিএ হয়েছে ৮৮৬টি। এগুলোর মধ্যে এফসিপিএসে পাশের হার মাত্র ৫১ শতাংশ, এমএস/এমফিল/পিএইচডিতে পাশের হার ৬৪ শতাংশ।

এমফিলে এই হার ৯০ শতাংশ। ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৪টিতেই এমফিল-পিএইচডি গবেষণা হয়নি। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রকাশনার তথ্য দিলেও প্রতিষ্ঠানটিতে একটি এমফিল-পিএইচডি গবেষণাও হয়নি। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল-পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার অনুমতি এখনো অনুমোদন পায়নি।

তবে ৮৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮৫টিই দাবি করেছে যে তারা বিভিন্ন হারে গবেষণার জন্য ব্যয় করেছে। এই দাবিদারদের মধ্যে শিক্ষকদেরকে ১২ হাজার টাকা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। তাই গবেষণায় আদৌ ব্যয় করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান যুগান্তরকে বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশে শিক্ষকদের ১ শতাংশেরও মৌলিক গ্রন্থ নেই। পিএইচডি ছাড়া এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত ‘কলাম ধরনের’ আর্টিকেল দিয়েই পদোন্নতি নিচ্ছেন অনেকে।

এই প্রক্রিয়ায় অধ্যাপকও হয়ে যাচ্ছেন। তার মতে, মূলত পাঁচটি কারণে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গবেষণায় শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে : শিক্ষকের জবাবদিহিতা ও তদারকির ঘাটতি, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় বিধিবিধানের অভাব এবং অপ্রতুল তহবিল।

শিক্ষক যদি জানতেন যে গবেষণা না থাকলে পদোন্নতি তো মিলবেই না, চাকরিও থাকবে না। রাজনৈতিক পরিচয় বা ভিসির সঙ্গে সুসম্পর্ক পদোন্নতির মানদণ্ড নয়; কিংবা একটা সময়ের পর গবেষণার জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে যেতে হবে-তাহলে গবেষণা হতো। গবেষণার জন্য তহবিল সংকট বড় কোনো সমস্যা নয় বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, যারা চাইছেন তারা বিদেশ থেকে তহবিল নিয়েও গবেষণা করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা ধরনের কাজে জড়িয়ে যাওয়ায় গবেষণা দূরের কথা, পাঠদানের প্রস্তুতিও নিতে পারেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক। এ অবস্থার মধ্যেও গবেষণার নামে যা হচ্ছে তাতে সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগজনক তথ্য বেরিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে ‘প্লেজিয়ারিজম’ বা (গবেষণায়) চুরির ঘটনা ধরা পড়েছে।

প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে এ ধরনের অন্তত একডজন ঘটনার তদন্ত চলছে। মৌলিক গবেষণা না হওয়ায় তা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে সব মিলিয়ে শুধু গবেষণা নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্নাতক-স্নাতকোত্তর লেখাপড়াও চলছে খুঁড়িয়ে। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশের উচ্চশিক্ষা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ অবশ্য বলছেন, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গবেষণা না হওয়া বা মানসম্মত গবেষণার দেখা না পাওয়ার প্রধান প্রতিবন্ধকতা তহবিল ঘাটতি। বিভিন্ন গবেষণা প্রস্তাবে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ না পাওয়ায় কাজটি যথাযথভাবে করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দও মিলছে না।

যে পরিমাণ গবেষণা হয়েছে, তার বেশিরভাগই ব্যক্তি উদ্যোগে। দেশি-বিদেশি উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করে তারা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার গবেষণার জন্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং ল্যাবরেটরি ঘাটতি আছে। গবেষণা প্রকল্প প্রদানে স্বজনপ্রীতি, ভালো গবেষণার স্বীকৃতি না পাওয়া, পদোন্নতিতে গবেষণার চেয়ে রাজনৈতিক মতাদর্শকে প্রাধান্য দেওয়ায় মেধাবী শিক্ষকরা গবেষণাবিমুখ হচ্ছেন।

এ ছাড়া পদোন্নতিতে গবেষণার শর্তে উদারতাও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গবেষণা না করলে চাকরি হারানো কিংবা পদোন্নতি না দেওয়ার বিধান থাকলে শিক্ষকরা আগ্রহী থাকতেন। জবাবদিহিতা আর বাধ্যবাধকতা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন প্রধানত ডিগ্রি প্রদানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া যে পরিমাণ গবেষণা হয়ে থাকে সেগুলো প্রায় সবই প্রচারবিমুখ।

তবে শিক্ষকদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, তহবিল ঘাটতির চেয়েও বড় সংকট উদ্যম, উদ্যোগ আর ব্যবস্থাপনায়। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়েই এই খাতে কম-বেশি অর্থ বরাদ্দ থাকে। সরকার প্রতিবছর যে অর্থ দেয় তার মধ্যে খুবই অল্প অংশ রাখা হয় গবেষণা খাতে। সিংহভাগ ব্যয় করা হয় বেতন-ভাতাসহ অন্য খাতে।

যতটুকু বরাদ্দ রাখা হয় তা টুকরো টুকরো বণ্টন করা হয়। ফলে তা সিরিয়াস-গবেষকের উপকারে আসছে না। একই কাজ করে ইউজিসিও। বরাদ্দের অর্থ এত ভাগ হয়ে থাকে যে, এক একজন শিক্ষক-গবেষক খুব অল্প পরিমাণে পান, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বড় ব্যয়ের গবেষণার জন্য যথেষ্ট নয়। আবার যে গবেষণা হচ্ছে তার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। মানসম্মত না হওয়ায় ৯০ ভাগের বেশি আন্তর্জাতিক জার্নালে ছাপার সুযোগ পাচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের সহযোগী অধ্যাপক ড. গৌতম সাহা যুগান্তরকে বলেন, গবেষণার জন্য তিনটি দিক নিশ্চিত করা জরুরি। সেগুলো হচ্ছে- তহবিল, অবকাঠামো এবং পরিবেশ। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সার্বিকভাবে তিনটিরই ঘাটতি আছে। এছাড়া জবাবদিহিতার বিষয়েও নজর দেয়া যেতে পারে।

কেননা, বিদেশে গবেষণা না করলে পদোন্নতি না দেয়া এমনকি চাকরি চলে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা নেই। তবে শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় একটি অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তহবিল ঘাটতি পূরণ হওয়ায় এখন অনেক শিক্ষকই গবেষণায় মনোনিবেশ করেছেন।

ইউজিসি পরিচালক মো. ওমর ফারুখ যুগান্তরকে বলেন, গবেষণা যে একেবারে হচ্ছে না তা বলা যাবে না। ইউজিসি প্রতি বছর গড়ে ১৫ কোটি টাকা গবেষণার জন্য বণ্টন করে। এমফিল, পিএইচডি এবং বিশেষায়িত গবেষণার জন্য এ অর্থ পান সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে ইউজিসিরই ৩৯১টি গবেষণাকর্ম পরিচালিত হচ্ছে।

এছাড়া এ বছর শুধু বিশেষায়িত গবেষণা প্রকল্পের জন্যই প্রায় ১১শ’ আবেদন জমা পড়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় গবেষণায় আগ্রহ আছে। এক বছর মেয়াদি এসব গবেষণায় ২ লাখ ৬০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব এবং ইউজিসির তহবিলের বাইরে সরকারের অন্তত ৫টি মন্ত্রণালয় গবেষণায় বিনিয়োগ করে থাকে। এগুলোর মধ্যে আছে- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং পরিকল্পনা কমিশন (সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ)।

ইউজিসি পরিচালক ওমর ফারুখ বলেন, অনেকে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে তহবিল নিয়ে গবেষণা করছেন। সরকারেরও কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে। বিআইডিএস (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ), এশিয়াটিক সোসাইটির মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানও আছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষকরা কম-বেশি গবেষণার সুযোগ পান।

আসলে এ ক্ষেত্রে মূল সমস্যা দুটি। একটি হচ্ছে, প্রায় শতভাগ গবেষণার সঙ্গে শিল্পের (ইন্ডাস্ট্রি) সম্পর্ক নেই। ফলে যা প্রায়োগিক মূল্য পায় না তা নিয়ে আলোচনাও হয় না। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, গবেষণার প্রয়োজনীয় প্রচার নেই। গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে প্রচারের মাধ্যমে পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে।

বিনিয়োগ-বরাদ্দের চিত্র : ২৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করে ইউজিসি। এতে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে গবেষণা খাতে ব্যয় হয় ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ৩৯১ শিক্ষক এ তহবিল নিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ৩১৬ শিক্ষক প্রকল্প নেন।

সংস্থাটি এ যাবত ১২৮৯টি প্রকল্প দিলেও নানান কারণে ৪৬৯টি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। আর সমাপ্ত হয়েছে মাত্র ১৫১টি। এছাড়া সংস্থাটি পোস্ট ডক্টরাল ও পিএইচডি ফেলোশিপ দিচ্ছে। ইউজিসি প্রফেসরশিপ ও রোকেয়া চেয়ার নির্ধারণ করা হয় সিনিয়র অধ্যাপকদের মধ্য থেকে, যার একমাত্র উদ্দেশ্য গবেষণা।

অন্যদিকে ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে গবেষণা খাতে মাত্র ৬৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। অথচ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নিট বাজেট ছিল ৩ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। গবেষণায় ব্যয়ের দিক থেকে শীর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি ৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।

এক্ষেত্রে ৬ ও সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ খাতে কোনো ব্যয় নেই। এদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার চিত্র উদ্বেগজনক। সবক’টি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে ২০১৯ সালে ১ কোটি ২০ লাখ ২ হাজার টাকা খরচ করেছে। এটা অবশ্য আগের বছরের চেয়ে ৩ লাখ বেশি। তবে ২০১৫ সালে সবক’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ খাতে ব্যয় ছিল ১৫৩ কোটি টাকা। এক দশকের মধ্যে সেটাই সর্বোচ্চ ব্যয়।

ইউজিসির চেয়ারম্যানের বক্তব্য : এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, গবেষণায় প্রতি বছরই ব্যয় ও বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। ২০১৮-১৯ বর্ষে এ খাতে ব্যয় ছিল সাড়ে ১১ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ৫ কোটি দেড় লাখ টাকা। আর চলতিবর্ষে এ খাতে প্রায় ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে।

সুতরাং, গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোয়ালিটি এসুরেন্স সেল গঠন করার কাজ চলছে। ইউনিভার্সিটি ডিজিটাল লাইব্রেরি (ইউডিএল) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্বের ১৩টি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ৪৪ হাজার ই-রিসোর্সে প্রবেশ করা যাচ্ছে। ইউজিসি কর্তৃক শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালা এবং স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান করা হয়েছে।

তা বাস্তবায়ন করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। তবে সার্বিকভাবে গবেষণার জন্য শিক্ষকদেরকেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আর টানাটানির সংসারে সীমাবদ্ধতা থাকে। সেসব জয় করেই উন্নততর পর্যায়ে এগিয়ে যেতে হয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *