অভিনেতা দিলদারকে সিনেমার মানুষ ভুলে গেলেও মনে রেখেছে দর্শকরা

বিনোদন লীড

বিনোদন ডেস্ক: আশি ও নব্বই দশকের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা দিলদার। চলচ্চিত্রে যার উপস্থিতি মানে হাসি। তার অভিনয় দেখে দুঃখ ভুলেছেন কোটি কোটি দর্শক। কিংবদন্তি এই অভিনেতার জন্মবার্ষিকী সোমবার (১৩ জানুয়ারি)। ১৯৪৫ সালের এই দিনে তিনি জন্মেছিলেন। যে মানুষটি এক সময় সবাইকে হাসিয়ে দুঃখ ভুলিয়ে দিতেন আজ সেই মানুষটির জন্মদিন কেটেছে নিভৃতে।

১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ‘কেন এমন হয়’ ছবিতে অভিনয় দিয়ে অভিনেতা দিলদার চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন দিলদার।দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘কন্যাদান’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘শুধু তুমি’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘অজান্তে’, ‘প্রিয়জন’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘নাচনেওয়ালী’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্র দিলদারের কৌতুক অভিনয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে।

এক সময় যে ছবিতে দিলদার নেই তা ব্যবসাসফল না হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ত। তার জনপ্রিয়তা এতোটাই আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে যেন তাকে নায়ক করে নির্মাণ করা হয় ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্র। তার বিপরীতে অভিনেত্রী ছিলেন নূতন। ছবিটি ব্যবসাসফল হয়। বিশেষকরে এর গানগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন দিলদার।

২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে এই কৌতুক অভিনেতা হঠাৎই মৃত্যুবরণ করেন। তবে এখনো ভক্তদের হৃদয়ে লালিত হচ্ছেন দিলদার। এরপর অনেক কৌতুক অভিনেতার অভিনয় দর্শকপ্রিয়তা পেলেও দিলদারের মতো কেউ আর আসেননি বলে মন্তব্য সিনেপ্রেমীদের।

দিলদারের স্ত্রী রোকেয়া বেগম। এই দম্পতির দুই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ের নাম মাসুমা আক্তার। ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ। দিলদারের পরিবার কেমন আছেন? প্রিয় অভিনেতার জন্মদিনে সে খোঁজই নেয়া হয়। পরিবার থেকে তার জন্মদিনে কোন আয়োজন করছেন কিনা। দিলদার যখন পরপারে পারি দেন তখন তার বড় ময়ের বযস ২৫ বছর। এখন তিনি বাচ্চার মা। পেশায় দাঁতের ডাক্তার। তার ছেলে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়য়ে পড়ছে আর মেয়ে পড়ছে ক্লাস সেভেনে।

আর ছোট মেয়ে জিনিয়ার একছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তার স্বামী মারা গেছেন। তিনি নিজেই চাকরি করে সংসার চালান। জিনিয়া আগে টেলিকমিনিকেশনে চাকরি করতেন। সেখানে থেকে চলে আসেন ব্রাক ব্যাংকে। পাঁচবছর চাকরির পর সেটিও ছেড়ে দেন। শারীরিক অসুস্থতা ও অতিরিক্ত কাজের প্রেসারে ওই চাকরিটি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। এখন কোন চাকরি করছেন না।

পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করেছেন দিলদার। অথচ এখন তার খোঁজ খবর নেয়না চলচ্চিত্রের কোন মানুষ। জন্মদিন ও মৃত্যু দিবস কোন প্রকার স্মরণ ছাড়াই চলে যায়। দিলদারকন্যা জিনিয়া জানান, আব্বা মারা যাওয়ার কয়েক বছর পরেও অনেকেই খোঁজ খবর রাখতেন। কিন্তু এখন মিডিয়ার কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই আমাদের। বিশেষ করে কৌতুক অভিনেতা আনিস আঙ্কেল বাবার অনেক কাছের বন্ধু ছিলেন। আমাদের সাথে তার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। তিনি খোঁজ রাখতেন। তিনিও তো আর নেই।

তিনি আরও বলেন, আব্বার চলে যাওয়ায় তার অভাব শুধু আমরা নই, পুরো দেশের চলচ্চিত্র প্রিয় মানুষরা অনুভব করেন। আব্বা ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। তার মূল্যায়ণে তাকে দেশের মানুষ মনে রেখেছে এটাই তার সন্তান হিসেবে আমার কাছে শ্রেষ্ঠ পাওয়া মনে হয়। কিছুদিন আগে সুনামগঞ্জ গিয়েছিলাম। সেখানে মানুষ যখন জানতে পারে, আমি দিলদারের মেয়ে তখন তারা আমার সঙ্গে ছবি তোলে। চলচ্চিত্রের মানুষেরা বাবাকে মনে রাখুক বা নাই রাখুক, সাধারণ মানুষ বাবাকে ভুলতে দেয়নি এটাই তার সন্তান হিসেবে আমাদের পরম পাওয়া।

যে মানুষটা সিনেমার প্রাণ হয়ে ছিলেন। যিনি কিনা হাসিয়েছেন, দর্শকদের বসিয়ে রেখেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আনন্দ-কৌতুকে সেই মানুষটার জন্মদিন চলে যায় আজ নিরবে নিভৃতে। সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *