স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর সাহেব বাজার কাঁচা বাজারে বাজার করতে এসেছিলেন নগরীর হাদির মোড় এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান। মাছ ও মাংসের দাম বেশি ভেবে তিনি সেগুলোই আগে কিনেছেন। কিন্তু মাছ ও মাংস আগে কিনে শেষে সবজি কিনতে গিয়ে টান পড়েছে তার পকেটে।
বাজার দর নিয়ে সাইদুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সবজির এত দাম বেড়েছে তা ভাবিনি। মাছ-মুরগির দাম একটু বেশি দেখে এগুলো আগে নিয়ে সবজি পরে নেব ভেবেছিলাম। এখন তো দেখি মাছ মাংসের তুলনায় সবজির দাম বেশি। বলতে গেলে সবজি কিনতেই এখন পকেটে টান পড়ছে।
শনিবার (১০ অক্টোবর) রাজশাহীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, সব সবজিরই চড়া দাম। দুই-তিন দিন আগেও যেসব সবজি বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, এখন তার কেজি ছাড়িয়েছে ৬০ টাকা।
শনিবার বাজারে সব সবজির দামই ছিলো খুব চড়া। মাছ ও মাংস আগের মতোই স্থিতিশীল থাকলেও সবজির দাম খুব বাড়তি। পটলের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। পটল গত সপ্তাহে ৫০ টাকা কেজি থাকলেও শনিবার ছিল ৬০ টাকা। বেগুনেরও দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় উঠেছে। ঢেঁড়সের দাম বেড়ে ৫০ টাকায় উঠেছে।
এছাড়াও বাড়তি দাম করলা, কচু ও মুলার। করলা, কচু ও মুলার দাম গত সম্পাহের থেকে এই সপ্তাহে প্রায় ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি। করলার দাম প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। কচুর দাম বেড়ে কেজি প্রতি হয়েছে ৪০ টাকা। মুলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।
শুধু তাই নয়, কয়েকদিন আগের ৪০ টাকার শসার দাম বেড়ে ৬০ টাকায় উঠেছে। বাড়তি দামের কবলে পড়েছে পেঁপে, ঝিঙ্গা ও বরবটিও। সহজলভ্য এই সবজিগুলো আর সহজে পাচ্ছেন না ক্রেতারা। এই সবজিগুলো কিনতেও বেশি দাম গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
পেঁপের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫ টাকা করে। এখন পেঁপে ৪০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। ঝিঙ্গার দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায় উঠেছে। বরবটির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় উঠেছে।
এদিকে আকাশচুম্বী দাম কাচাঁমরিচের। গত সপ্তাহে কাচাঁমরিচের কেজি ২০০ টাকা থাকলেও এখন ৪০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কিন্তু এখনও আগের মতোই আছে আদা ও রসুনের দাম। একসপ্তাহ আগেও রসুনের দাম ছিলো কেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। এখনও একই দামেই পাওয়া যাচ্ছে রসুন। তেমনি আগেও দামেই ক্রেতারা কিনতে পারছেন আদা। আদা গত সপ্তাহের মতোই ১২০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায় কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।
তবে দাম বাড়তি পেঁয়াজের। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে পেঁয়াজের। দেশী পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন আর এই দামে পাওয়া যাচ্ছে না। পেঁয়াজের দাম এখন হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি দাম বেড়েছে ভারতীয় পেঁয়াজেরও। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ছিলো কেজিপ্রতি ৭৫ টাকা। তবে এখন দাম বেড়ে হয়েছে কেজি প্রতি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
বারবার সবজির দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। তবে বিক্রেতারা রয়েছেন নির্বিকার। তারা বলছেন, চারদিকে বন্যার পানি। এই সময়ে সবজির দাম বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই বেশি দাম দিয়ে পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনছেন। ফলে এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
রাজশাহীর সাহেব বাজারের কাঁচা বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী কামাল, তুহীন ও শহিদ জানান, বৃষ্টি আর বন্যার কারণে সবজির বাজারে এই অস্থিরতা। বন্যাতে বিভিন্ন এলাকার সবজির ক্ষেত ডুবে গেছে। যে কারণে পাইকারি বাজারে সবজির দাম বাড়ছে। আর পাইকারি বাজার থেকে আমরা বেশি দাম দিয়ে সবজি কিনে খুচরা বিক্রি করায় আমাদের কিছু লাভ রেখেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আর এজনই মূলত সবজি বাজার দর এতটা চড়া।
তবে বিক্রেতাদের এই বক্তব্য মানতে নারাজ ক্রেতারা। ক্রেতাদের দাবি, বন্যা পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা প্রতিকেজি সবজি ক্রয় মূল্যের দ্বিগুণ দামেও বিক্রি করছেন।
নিজের বাড়ির সবজি কিনতে আসা শাহীন জানান, একমাসের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এমন অবস্থা থাকলে আমরা মধ্যবিত্তরা চলতে পারবো না।
স্ব.বা/শা