অভিনেত্রী নুসরতের জীবন কাহিনী

বিনোদন

স্বদেশবাণী ডেস্ক: খবরের শিরোনামেই আছেন পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ ও অভিনেত্রী নুসরত জাহান। তাঁর মা হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই উত্তাল নেটমাধ্যম। সেই আগুনে ঘি ঢাললেন অভিনেত্রী নিজেই। নিখিল জৈনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের নাম পাল্টে ফেললেন। গত বুধবার (৯ জুন) এক বিবৃতি জারি করে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন নিখিলের বিরুদ্ধে। চলচ্চিত্রের চেয়ে কম রঙিন নয় নুসরতের জীবন।

১৯৯০ সালের ৮ জানুয়ারি জন্ম কলকাতায় বাঙালি মুসলিম পরিবারে। ‘আওয়ার লেডি কুইন অব দ্য মিশনস’ স্কুলে এবং ভবানীপুর কলেজ থেকে পড়াশোনা। ২০১০ সালে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার পর মডেলিং জগতে পা রাখেন নুসরত।

২০১১ সালে তাঁর প্রথম ছবি ‘শত্রু’। সুপারস্টার জিতের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর হাত ধরে বড় পর্দার সঙ্গে পরিচয় নুসরতের। দ্বিতীয় ছবি দেবের সঙ্গে ‘খোকা-৪২০’। তৃতীয় ছবি অঙ্কুশ হাজরার সঙ্গে ‘খিলাড়ি’-তে দু’টি আইটেম গানে নেচে জনপ্রিয়তা অর্জন। তারপর থেকে তাঁকে পেশাগত জীবনে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে ঠোক্কর খেতে হয়। ২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত কাদের খানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের খবর রটেছিল। তবে সেসব পেছনে ফেলে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হন নুসরত। নির্বাচনে জিতে বসিরহাটের সাংসদ হন। বিজেপি-র সায়ন্তন বসুকে সাড়ে ৩ লাখ ভোটে হারিয়েছিলেন নুসরত।

সেই বছর জুন মাসের ১৯ তারিখ তাঁর বিয়ে হয় ব্যবসায়ী নিখিল জৈনের সঙ্গে। এর আগে তাঁদের প্রেমের কথা খুব বেশি চাউর হয়নি। তবে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। তুরস্কে গিয়ে বিয়ে সারেন অভিনেত্রী। জানা যায়, তাঁরা আগে থেকেই ভাল বন্ধু ছিলেন তারা।

বিয়ের কয়েক মাস পরেই আচমকা শোনা যায়, নুসরত হাসপাতালে। সূত্রের খবর ছিল, একসঙ্গে অনেক ওষুধ খেয়ে নেওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সম্ভবত ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিকভাবে তাঁকে আইসিইউ-তে রাখা হয়। ফুলবাগান থানায় তাঁর ‘ড্রাগ ওভারডোজ’ নিয়ে রিপোর্টও করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে গুঞ্জন রটে, আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছিলেন অভিনেত্রী। তবে ঘুমের ওষুধ খেয়ে অসুস্থতার কথা ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেয় নুসরতের পরিবার।

২০২০ সালে ‘এসওএস কলকাতা’-র ছবির শ্যুটিং নুসরতের জীবনে মোড় ঘোরানো ঘটনা। সেই ছবির সেটেই অভিনেতা ইয়াশ দাশগুপ্তের প্রেমে পড়েন নুসরত। এর আগে ২০১৭ সালে ‘ওয়ান’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে বন্ধুত্ব হয়েছিল দু’জনের। তারপর থেকে তাঁদের কখনও মরু শহরে কখনও বা দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে। আবার কখনও দেখা যায় একই গাড়িতে। তাঁদের প্রেমের কাহিনি ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আনতেও শুরু করেন তাঁরা।

অন্যদিকে, প্রশ্ন উঠতে থাকে নিখিলের সঙ্গে নুসরতের সম্পর্ক নিয়েও। জানা যায়, তাঁরা বেশ কয়েক মাস ধরে আলাদা থাকছেন। আর নুসরত বালিগঞ্জের আবাসনে থাকছেন ইয়াশের সঙ্গে।

নিখিল-নুসরতের সম্পর্ক ছেদের খবরের কয়েক মাস বাদেই গত ৪ জুন গুঞ্জন ওঠে, নুসরত অন্তঃসত্ত্বা। পিতৃপরিচয় নিয়ে শুরু হয় টানাটানি। নিখিল স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি অনাগত সন্তানের জনক নন। কানাঘুষো শোনা যায়, ইয়াশই নুসরতের সন্তানের পিতা! কিন্তু সেই বিষয়ে নিয়ে মুখ খোলেননি এই যুগল।

নিখিল জানান, তিনি যে দিনই জানতে পেরেছিলেন, নুসরত অন্য কারও সঙ্গে থাকতে চান, সে দিনই দেওয়ানি মামলা দায়ের করেছিলেন। বিয়ের সময়ে রেজিস্ট্রি হয়নি বলে ‘অ্যানালমেন্ট’ করে আলাদা হতে হবে।

তার দিন দুয়েকের মধ্যে বিবৃতি জারি করে নুসরত জানিয়ে দেন, তুরস্কের বিবাহ আইন অনুসারে ওই বিয়ে ‘অবৈধ’। তাছাড়া দুই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের বিয়ের জন্য ভারতে যা আইন রয়েছে, তা-ও মেনে বিয়ে হয়নি। তাই নুসরতের মতে, তাঁরা এত দিন লিভ ইন করেছেন।

নিখিলের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগও এনেছেন নুসরত। জানিয়েছেন, মধ্য রাতে বেআইনিভাবে নুসরতের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলেছেন নিখিল। নুসরত এবং তাঁর গোটা পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সমস্ত নথি নিখিলের দায়িত্বে রয়েছে। নিখিলের পরামর্শেই তাঁর কাছে সমস্ত নথি রেখে দিয়েছিলেন নুসরত।

তবে এই সমস্ত অভিযোগের জবাবে নিখিল নুসরতের উদ্দেশে একটাই কথা বলেছেন, ‘আদালতে দেখা হবে।’

এসব নিয়েই এখন নেটাগরিকদের ট্রোল নুসরতের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। তাঁর পোশাক নিয়ে, মুসলিম ধর্মাবলম্বী হয়েও মহালয়ায় দুর্গা সাজা নিয়ে, তাঁর ছবি নিয়ে আক্রমণ করতে ছাড়েন না নেটাগরিকরা। তাঁদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন নুসরতের অনুরাগীরা। কিন্তু নুসরতের বিবৃতির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর নেটমাধ্যমের সিংহভাগ মানুষই অভিনেত্রীর বিরোধিতা করা শুরু করে দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে নিখিলের ‘বিয়ে’-কে ‘লিভইন’-এর নাম দেওয়া মেনে নিতে পারেননি নুসরতের অনুরাগীরাও।

নিখিলকে এক সময়ে ‘বসিরহাটের জামাই, কলকাতার জামাই’ বলে পরিচয় দিতেন নুসরত। সেই স্মৃতিচারণেই আপাতত মগ্ন নেটাগরিকরা।

নুসরতকে নিয়ে কটাক্ষ করা শুরু করেছে বিজেপি-ও। লোকসভার ওয়েবসাইটে যে তাঁর স্বামীর নাম নিখিল জৈন লেখা রয়েছে, তা বুধবারই জানিয়েছিল দেশটির গণমাধ্যম। সেই প্রসঙ্গ তুলে বিজেপি-র আইটি সেলের সর্বভারতীয় প্রধান অমিত মালব্য বৃহস্পতিবার টুইট করে বলেছেন, ‘তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান রুহি জৈনের ব্যক্তিগত জীবন, তিনি কাকে বিয়ে করেছেন, কার সঙ্গে লিভ-ইন করছেন সেটা নিয়ে কারও কিছু বলার নেই। কিন্তু তিনি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সংসদের রেকর্ড অনুযায়ী তিনি নিখিল জৈনকে বিবাহ করেছেন। তবে কি তিনি সংসদে অসত্য ভাষণ দিয়েছিলেন?’

এদিকে, অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ, সংসার, পরিবার, প্রেমিক ইয়াশ— নুসরত জাহানের ব্যক্তিগত জীবনের এই টানাপড়েনের প্রভাব কি পড়বে তাঁর রাজনৈতিক জীবন এবং পেশাগত জীবনে? ঘটনা কোন দিকে মোড় নেবে এবার?

এসব প্রশ্নের জবাব এখনই না মিললেও অচিরেই যে তার সবই জানা যাবে- তা বলার অপেক্ষা রাখছে না। সূত্র- আনন্দবাজার।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *