তারকাদের সংসার কেন টেকে না?

বিনোদন

স্বদেশবাণী ডেস্ক: সারা বিশ্বেই বিনোদন তারকারা সাধারণ মানুষের আগ্রহের বিষয়। তাদের গান, অভিনয় এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষকে বিমোহিত করে রাখে। তাদের পেশাদারি কাজগুলো দর্শকদের বিনোদিত করে সারা বছর।

কিন্তু পর্দার ঝলমলে উপস্থিতির এসব তারকার অনেকেরই ব্যক্তিগত জীবন সুখের নয়। দাম্পত্য কলহ, অশান্তি এবং বিচ্ছেদ যেন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিনোদন মিডিয়ায়।

বিশ্বখ্যাত বিনোদন তারকাদের বেশিরভাগেরই ব্যক্তিগত জীবনে শান্তি নেই। সেই প্রভাব এখন বাংলাদেশি বিনোদন তারকাদের ক্ষেত্রেও ঘটতে দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের শীর্ষ বিনোদন তারকাদের মধ্যে সংসার ভাঙ্গনের ঘটনা ঘটেছে বেশি।

সর্বশেষ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার কিছুদিন আগে সংসার ভেঙ্গেছে অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার। প্রেম করে বিয়ে করলেও সংসার শুরুর এক বছরের মধ্যেই আলাদা হন তারা। চিত্রনায়িকা পরিমনিরও একাধিকবার বিয়ে হয়েছে এবং সংসার ভেঙ্গেছে।

তবে সবচেয়ে আলোচিত বিচ্ছেদ ছিল তাহসান-মিথিলার। কারণ সাধারণ মানুষ এই তারকা দম্পতিকে আদর্শ জুটি মনে করতেন। কিন্তু সেই সংসারও না টেকায় হতাশ হয়েছেন তাদের ভক্তরা।

দেশের বিনোদন মিডিয়া বিকশিত হওয়ার সময় থেকেই তারকাদের বিচ্ছেদগাঁথা চলমান রয়েছে। সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদী ও সুবর্ণা মুস্তাফার বিচ্ছেদের ঘটনা। যদিও বিচ্ছেদের পর তারা এক অপরের প্রতি কোনো বিষোদগার করেননি। নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছিলেন। হুমাযুন ফরিদীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাই ভারাক্রান্ত মনে হাজির হয়েছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা। এই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন তারকা ও দর্শকরা।

কিছুদিন আগে বর্তমান সময়ের টিভি নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্বেরও সংসার ভেঙ্গেছে। এটি ছিল তার দ্বিতীয় বিয়ে। তিনি প্রথম বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী প্রভাকে। সেই বিয়েটি অল্প সময়ের ব্যবধানেই ভেঙ্গে যায়।

এই তালিকায় আরও আছে একগুচ্ছ তারকার নাম। সংগীত তারকা হাবিব ওয়াহিদের সংসার ভেঙ্গেছে দুই বার। কিছুদিন আগে তৃতীয় বিয়ে করেছেন তিনি। বয়সে বড় হওয়া সত্ত্বেও মডেল ও অভিনেত্রী সুজানাকে বিয়ে করেছিলেন সংগীত শিল্পী ও সুরকার হৃদয় খান। অল্প সময় পরেই তারা আলাদা হয়ে যান। বর্তমান সময়ের আলোচিত অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনের সংসারও টেকেনি মা হওয়ার পর। এখন তিনি একাই জীবনযাপন করছেন।

এক সময়ের সাড়া জাগানো মডেল ও অভিনেত্রী মোনালিসা বিয়ের পর মিডিয়ায় ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু আমেরিকায় যাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় তার। এখন তিনি সেখানে একটি চাকুরি করছেন। মাঝে মধ্যে দেশে আসেন, দুই-একটি নাটকে অভিনয় করে আবার উড়াল দেন।

অভিনেতা নিলয় আলমগীর ও আনিকা কবির শখের বিয়ে হয়েছিল দীর্ঘ প্রেমের পর। কিন্তু জীবনযাপন স্টাইলে মিল না থাকায় তারা দ্রুতই বিচ্ছেদ ঘটান সংসার জীবনের। বর্তমান সময়ের আলোচিত অভিনেত্রী অর্চিতা স্পর্শিয়ার সংসারও টিকেনি বেশি দিন। অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা নোভা ঘর বেঁধেছিলেন পরিচালক রায়হান খানের সঙ্গে। একটি পুত্র সন্তান হলেও তাদের সংসারও টিকেনি।

আরেক আলোচিত মডেল ও অভিনেত্রী সারিকার বিয়ে এবং সংসার ভাঙ্গার বিষয়টি বেশ আলোচিত একটি ঘটনা ছিল মিডিয়ায়। এছাড়া অন্যান্য কারণেও বিতর্কিত হয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। এখন একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে একাকী জীবনযাপন করছেন তিনি।

এতসব বিচ্ছেদ ও ভাঙনের মধ্যেও অনেক চিরসবুজ তারকার সংসার জীবন চলছে সুখে স্বাচ্ছন্দে। তাদের মধ্যে অন্যতম জাহিদ হাসান-সাদিয়া ইসলাম মৌ, তৌকীর-বিপাশা হায়াত।

কেন অভিনয় তারকাদের সংসারে কালো মেঘ নেমে আসে কিংবা বিচ্ছেদ ঘটছে- এ বিষয়ে নানা জনের নানা মত।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুরনবী নিরব বলেন, তারকারা সাধারণ মানুষের রোল মডেল। আমরা তাদের অনুসরণ করি সব সময়। তারকাদের বৈবাহিক জীবন সুখের হবে- এটাই সবার প্রত্যাশা। তারকারা পেশাগত কাজের প্রয়োজনে বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকেন। সহকর্মীদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর ফলে তাদের সঙ্গে হৃদ্যতা তৈরি হতে থাকে। এরপর এই হৃদ্যতা গভীর আবেগ তৈরি করে। যার ফলে পারিবারিক জীবনে অশান্তি তৈরি হয়। ফলশ্রুতিতে শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক গড়ায় বিচ্ছেদে। এছাড়া কিছু কিছু তারকা উশৃঙ্খলভাবে চলাফেরা করেন। সেই সঙ্গে তারা অ্যালকোহলিক। এ কারণে এদের ব্রেন মেকানিজম আলাদা। যার কারণে জীবনযাপনে স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলেন। এর ফলে পরিবারে সমস্যা তৈরি হয়। মূলত এসব কারণেই তারকাদের সংসার জীবন সুখের হয় না।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *