ওদের লক্ষ্য নাটোরকে সাইকেল স্টান্ট জেলা করা

চারণ সংবাদ রাজশাহী
আল-আফতাব খান সুইট, নাটোর: নাটোরকে সাইকেল স্টান্ট জেলা হিসেবে পরিচিত করাসহ মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন রিফাত মাহমুদ, নাহিদ আহমেদ, মোঃ মোবাসেসর, সাকিব আল হাসানসহ স্থানীয় একদল টগবগে কিশোর। ইউটিউবে সাইকেল স্টান্ট প্রতিযোগীতার ভিডিও দেখে আগ্রহ তৈরী হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে বাই সাইকেল নিয়ে নানা কসরতে মুখর রয়েছে তারা। বৈশ্বিক মহামারি করোনাও তাদের দমাতে পারেনি। তবে তাদের অদম্য ইচ্ছায় বাধা হয়েছে প্রশিক্ষনের  জন্য কোন ফাঁকা জায়গা না থাকায়। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন সড়কে স্টান্ট করতে হয় তাদের। এখন ওদের ভরসা রাজপথ। মাঠের ব্যবস্থা অথবা শহরের রাস্তায় পৃথক সাইকেল লেন তৈরীর দাবী তাদের।
একসময় নাটোর শহরের লালদিঘীর চারধারে লালবাজার, গাড়িখানা, শুকুলপট্টি, কাপড়িয়াপট্টি, পিলখানার গোল চত্বর এলাকায় স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে আয়োজন করা হতো সাইকেল রেস। একটানা দুইদিন ধরে চলা ওই প্রতিযোগিতা ছিল স্থানীয় একটি আকর্ষনীয় উৎসব। এতে অসংখ্য প্রতিযোগি অংশগ্রহন করতো । কিন্তু ৭৫ পরবর্তী এই সাইকেল প্রতিযোগিতা আর অনুষ্ঠিত হয়না। বর্তমানে সাইকেল প্রতিযোগীতার নতুন সংযোজন সাইকেল স্টান্ট। পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে সাইকেল স্টান্ট এখন খুবই জনপ্রিয়। পোল্যান্ডে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক সাইকেল প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অংশগ্রহন করে। ইউটিউবে সাইকেল স্টান্ট ভিডিও দেখে আগ্রহ তৈরী হয় নাটোরের একদল কিশোরের। ২০১৫ সালে নাটোরের ওই কিশোরের দল শুরু করে সাইকেল স্টান্ট কসরত। অনলাইন বা আড্ডায় মত্ত না হয়ে সাইকেল নিয়ে মাতোয়ারা হয়ে পড়েন তারা।
রিফাত মাহমুদ বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে চলছে তাদের নানা কসরত। নাটোরকে স্টান্ট জেলা হিসেবে পরিচিত করার লক্ষ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে নাটোর এক্সট্রিম স্টান্টারজ্ নামের একটি সংগঠন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে স্টান্টের প্লাটফর্ম হয়ে ওঠে অনেক বড়। বর্তমানে এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৩০ জন। এসব সদস্যদের গত পাঁচ বছর ধরে দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষন। রাজশাহী, নওগাঁসহ বেশ কয়েকটি জেলায় স্টান্ট প্রদর্শনীতে অংশগ্রহন করেছে নাটোর এক্সট্রিম স্টান্টারজ্ এর সদস্যরা। ২০২০ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সাইকেল ফেডারেশনের আয়োজনে ঢাকাতে স্টান্ট প্রতিযোগিতা আয়োজিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারনে তা স্থগিত করা হয়।
এক্সট্রিম স্টান্টারজ্ এর সদস্য নাহিদ আহমেদ বলেন, বর্তমানে অনুশীলনের জায়গা সংকটের কারনে সাইকেল স্টান্টও পড়েছে হুমকির মুখে। আগে নাটোর শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন তাদের অনুশীলনের স্থানটিতে ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে। স্টেডিয়াম সংলগ্ন অন্য জায়গাগুলোও এখন আর খালি পাওয়া যায়না। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কের ওপর সাইকেল স্টান্ট করতে হয়।
ক্ষুদে সাইকেল স্টান্ট সদস্য সাকিব আল হাসান ও মোঃ মোবাসসের বলেন, মায়ের হাত ধরে শিশু পার্কে এসে রিফাত মাহমুদ ও নাহিদ ভাইদের সাইকেল স্টান্ট দেখে অনুপ্রাণিত হই। পরে বাবা-মার কাছে বায়না ধরে সাইকেল কিনে নিয়ে রিফাত ভাইয়ের এক্সট্রিম স্টান্টারজের সদস্য হই। এরপর থেকে নিয়মিত অনুশীলন করতে থাকি। এখন মাঠ নেই তাই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার ওপর স্টান্ট করি। বাবা-মা বকা দেয়। আমরা স্বপ্ন দেখি সাইকেল আন্তর্জাতিক সাইকেল প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার। কিন্তু অনুশীলনের জন্য কোন মাঠ নেই। তাই পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন ভাবে বাধাগ্রস্থ হতে হচ্ছে সাইকেল স্টান্ট করতে গিয়ে।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রিড়া সংস্থার সভাপতি মোঃ শাহরিয়াজ বলেন, সাইকেল স্টান্ট অনুশীলনের জন্যে জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে একটি জায়গা বন্দোবস্ত সহ যা প্রয়োজন তা করা হবে।
স্ব.বা/বা
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *