ইন্দোনেশিয়া ট্র্যাজেডি: বাতাসে লাশের গন্ধ, দেওয়া হচ্ছে গণকবর

আন্তর্জাতিক
স্বদেশ বাণী ডেস্ক : যন্ত্রপাতির অপর্যাপ্ততার কারণে খালি হাতেই সুনামিতে নিহতদের লাশ খুঁজে বের করছেন উদ্ধারকারীরা। শেষবারের মতো প্রিয়জনকে খুঁজে পেতে স্বজনরাও উদ্ধারকারীদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন পালু ও দোংগালা শহরের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে। ইতোমধ্যে নিহতের সংখ্যা ১৩০০ ছুঁয়েছে বলে জানিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, পালু শহরের মাত্র দুটি ভবনের মধ্যেই শতাধিক মানুষের লাশ পাওয়া গেছে। ইন্দোনেশিয়ায় দাতব্য সংস্থা অক্সফামের প্রধান মারিয়া লৌরান্তির বলেন, ‘উপকূলীয় শহরটির বাতাসে এখন শুধু লাশের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সমুদ্রের লবণাক্ত ও কাদামিশ্রিত পানির সংস্পর্শে মৃতদেহ দ্রুত গলে যাচ্ছে।’ কলেরা ও টাইফয়েডের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব এড়াতে গতকাল সোমবার দেশটির জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন সংস্থার তত্ত্বাবধানে ১০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার প্রস্থের একটি গণকবর খোঁড়া হয়েছে, যাতে প্রায় ১২০০ জনকে দাফন করা যাবে। ইতোমধ্যে দাফন করা ব্যক্তিদের ছবি তুলে রাখা হয়েছে, যাতে পরে তাদের স্বজনরা লাশ চিহ্নিত করতে পারেন।

এদিকে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে শঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। কারণ, দোংগালা শহর ছাড়াও পালু শহরের অধিকাংশ এলাকায় এখনো উদ্ধার অভিযান চালানো শুরু হয়নি। পালুর পেতোবো গ্রামে কাদার নিচে এখনো শতাধিক লাশ উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছে। একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পালুর একটি আটতলা হোটেলের ধ্বংসাবশেষ থেকে গত রোববারও মানুষের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ৫০ জন মানুষ এখনো ওই হোটেলে আটকা পড়ে আছে। গত কয়েক দিন ধরে চলমান পরাঘাতের (আফটার শক) মধ্যে স্বাভাবিক উদ্ধার কার্যক্রমও চালানো যাচ্ছে না, অপেক্ষা করতে হচ্ছে ভারী যন্ত্রাংশের। কিন্তু ধ্বংস হয়ে যাওয়া রাস্তাঘাটের কারণে রাজধানী জাকার্তা থেকে সঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারছে না যন্ত্রাংশ ও ত্রাণবাহী গাড়ির বহর। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি শহর ছাড়াও বেশ কয়েকটি উপজেলা এবং গ্রাম ভূমিধসে মাটির নিচে তলিয়ে গেছে। এখনো অনেক গ্রাম আছে যেখানে বসবাসরতদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানা যায়নি।

সুলাওয়েসির দ্বীপ দোংগালায় এখনো পুরো মাত্রায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু করতে পারেনি উদ্ধারকারীরা। স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, পালু থেকে নৌপথে ৩০ মিনিট দূরত্বের দোংগালায় কিছু উদ্ধারকারী যেতে পারলেও যন্ত্রাংশ নিয়ে কোনো দলই এখনো যেতে পারেনি। দোংগালার অধিকাংশ এলাকাই ভূমিধসে মাটিচাপা পড়েছে বলে জানিয়েছে জাকার্তা পোস্ট।

মানুষ উদ্ধারের কাজকেই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদা। তিনি বলেন, ‘লোকজনকে উদ্ধারের কাজ এখনো শেষ হয়নি। ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে অনেক জায়গাতেই উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব হয়নি। তবে গত রাত (রোববার) থেকে যন্ত্রপাতি আসতে শুরু করেছে।’

এদিকে যত সময় যাচ্ছে ততই আটকেপড়া মানুষদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের মধ্যে বাড়ছে অস্থিরতা। উপদ্রুত অঞ্চলে খাবার ও পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় শহরের বেশ কিছু অংশে ধ্বংসপ্রায় শপিং মলে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ভূমিকম্প ও সুনামিতে যাদের বাড়ি ধসে পড়েনি তাদেরও পরাঘাতের ভয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে। হাসপাতালগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খোলা মাঠে তাঁবু গেড়ে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পালু শহরে চিকিৎসা দিতে খোলা হয়েছে একটি সামরিক হাসপাতাল।

বিশ্বের ১১তম বৃহত্তম দ্বীপ সুলাওয়েসিতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপরই সেখানে আছড়ে পড়ে ৮০০ কিলোমিটার বেগে শক্তিশালী সুনামি। প্রায় ২০ ফুট উঁচু ঢেউ মুহূর্তের মধ্যে লণ্ডভণ্ড করে দেয় পালু ও দোংগালার জনপদ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *