অভিনব ও নতুন পদ্ধতি ‘গলায় বোমা বেঁধে গরু পাচার’

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিএসএফ বলছে, গলায় কলাগাছ বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে চলছে ভারত থেকে গরুপাচার কলা গাছের ভেলা বানিয়ে গরুকে সেটির সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়, যাতে শুধু মাথা জলের ওপরে ভেসে থাকে। আর এভাবেই গরুগুলিকে ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীর জলে।

গরু পাচারের অভিনব ও নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করছে গরুপাচারকারীরা। এমন তথ্য দিয়েছে ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফ।

আর এমনটা করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে দেশী বোমা ফেটে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ জানিয়েছে।

তারা পাচার করার আগে গরুর গলায় বোমা বেঁধে দেওয়ার নতুন একটি পদ্ধতির কথা বলছে, যেটা করতে গিয়ে ওই বিস্ফোরণ হয়।

তবে সীমান্ত অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরব, এরকম একটি সংগঠন বলছে নদীর ঘাট দখল করা নিয়ে দুই দুষ্কৃতি দলের সংঘর্ষের সময়েই বোমা ফাটে।

বিএসএফ বলছে, সোমবার রাতে মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী এলাকায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ভেতরে ফরাজিপাড়া গ্রামে যখন সন্দেহভাজন পাচারকারীরা গরুগুলিকে সীমানা পার করানোর ব্যবস্থা করছিলেন, সেই সময়েই তাদের সঙ্গে একটি বালতিতে থাকা হাতবোমা বিস্ফোরণ হয়।

দুই মধ্যবয়স্ক আর একজন ১৪ বছর বয়সী কিশোর ঘটনাস্থলেই মারা যান। আর একজন নারীও আহত হন। নিহত এবং আহতদের স্থানীয় সরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেছে জলঙ্গী থানার পুলিশ।

তবে সীমান্ত অঞ্চলে কর্মরত মানবাধিকার সংগঠন মাসুম-এর প্রধান কিরীটী রায় বলছিলেন, পাচারের সময়ে বোমা ফেটে মৃত্যু হয় নি। ওই এলাকায় পদ্মা নদীতে যেসব বেআইনি ঘাট আছে, সেরকমই একটি ঘাটের দখল কে নেবে, তা নিয়ে দুই দল দুষ্কৃতির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। যারা মারা গেছেন, তারাও একটি দুষ্কৃতি দলের সঙ্গে যুক্ত বলে জানতে পেরেছি।

ওইসব বেআইনি ঘাট দখল করার জন্য প্রচুর অর্থের লেনদেন হয় বলেও মি. রায় জানিয়েছেন।

গরুর গলায় বোমা বেঁধে রাখার কারণ কি?

কিছুদিন আগে সামাজিক মাধ্যমে গরু পাচারের এই অভিনব পদ্ধতির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল।

দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এস এস গুলেরিয়া বিবিসিকে বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে ওইভাবে গরু পাচারের সময়ে গরুগুলির গলায় বোমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে, যাতে সীমান্তরক্ষীরা গরুগুলিকে আটক করে কলার ভেলা থেকে সেগুলিকে উদ্ধার করতে গেলেই বোমা ফেটে যায় এবং বি এস এফ সদস্যরা আহত হন।

ওই গ্রামটির গরু পাচারের জন্য দুর্নাম রয়েছে বলেও গুলেরিয়া জানিয়েছেন।

বিএসএফ বেশ কিছু ছবি দিয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে কলার ভেলার ওপরে শুধু গরুর মাথা ভেসে আছে আর সেগুলির ঘাড়ের কাছে পাটের দড়ি দিয়ে বোমা বাঁধা আছে। কখনও আবার বোমা যাতে সহজে নজরে না আসে, তার জন্য গাছের পাতা দিয়ে বোমা ঢেকেও দেওয়া হচ্ছে।

এই পদ্ধতি নিঃসন্দেহে সীমান্তরক্ষীদের আঘাত করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছে। যে প্রান্তেই গরুগুলি ধরা পড়ুক না কেন, সীমান্তরক্ষীরা সেগুলি উদ্ধার করে গলা থেকে দড়ি খুললেই সেটা ফেটে যাবে। আঘাত তো লাগবেই, মৃত্যুও হতে পারে,” বলছিলেন মি. গুলেরিয়া।

সীমান্ত এলাকার মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, পদ্মা নদীতে থাকা বেআইনি ঘাটের দখল নিয়ে প্রায়ই প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

গরু পাচার বন্ধে বি এস এফ এবং ভারত সরকার এবং যে রুট দিয়ে গরু আনা হয় পশ্চিমবঙ্গ আর উত্তর ভারত থেকে, সেখানকার সরকারগুলিও নানা পদক্ষেপ নিয়েছে যার ফলে চার-পাঁচ বছর আগে যে হারে গরু পাচার হত, তার থেকে কিছুটা কমেছে। কিন্তু গরু পাচার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা সম্ভব হয় নি। এখনও নিয়মিতই সীমান্ত অঞ্চলে পাচারের সময়ে গরু ধরা পড়ে।

পাচারকারীরা নানা নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করছে গরু পাচার করতে।

একটা যেমন কলাগাছে ভেলা বানিয়ে তাতে গরু বেঁধে দেওয়া হচ্ছে, আবার কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে বাঁশ দিয়ে ক্রেনের মতো বানানো হচ্ছে – যাতে একদিকে গরু বেঁধে ক্রেন দিয়ে সেটিকে সীমান্তের অপর পারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

আবার কাঁটাতারের বেড়ার নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ কাটার ঘটনাও জানা গেছে বেশ কিছু সীমান্তে – যার মাধ্যমে একদিক থেকে গরুর পাল ভেতরে ঢুকিয়ে দিলে তারা সীমান্তের নীচ দিয়ে অন্য দিকে বেরিয়ে যেতে পারে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *