সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা : দুই পক্ষের আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি যুক্তি

আন্তর্জাতিক লীড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর দায়ে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের (আইসিজে) শেষ দিনের শুনানিতে অংশ নিয়েছেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টার দিকে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে এই মামলার শুনানি শুরু হয়েছে।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, আইসিজেতে গাম্বিয়ার দায়েরকৃত রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার তৃতীয় এবং শেষ দিনের শুনানিতে দুই পক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন করছেন। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিও দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা গণহত্যার দায় এড়াতে সাফাই গাইতে সেখানে উপস্থিত আছেন।

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের শীর্ষ এই আদালতে মিয়ানমারকে দাঁড় করিয়েছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। এই মামলার শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে রাখাইনে যেকোনো ধরনের সহিংসতা থেকে বিরত রাখতে দেশটির বিরুদ্ধে আদালতের কাছে অন্তঃর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়েছে গাম্বিয়া।

বৃহস্পতিবার আদালতে দুই পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন। এ সময় গাম্বিয়ার আইনজীবী পল রাইখলার আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর প্রথম তার যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের গণহত্যার উদ্দেশ্য অস্বীকার করেছে।

এর আগে বুধবার আদালতে নিজ দেশের সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি বলেন, রাখাইনে সন্ত্রাসবাদবিরোধী বৈধ অভিযান পরিচালনা করেছে সেনাবাহিনী। কিন্তু সেখানে কোনো ধরনের গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটেনি। তবে রোহিঙ্গারা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সু চির এই যুক্তি খণ্ডন করতে গিয়ে গাম্বিয়ার আইনজীবী রাইখলার বলেন, আদালত নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, সু চি তার বক্তব্যের সময় আদালতে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেননি। রাখাইনের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরসার বিষয়ে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি তাদের মুসলিম হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

রাইখলার বলেন, গাম্বিয়ার আবেদনে গণহত্যার উদ্দেশ্য প্রমাণে সাতটি নির্দেশকের কথা উল্লেখ আছে। মিয়ানমারের আইনজীবী অধ্যাপক সাবাস এই সাতটি নির্দেশক অস্বীকার করেননি।

মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে জাতিসংঘের শীর্ষ এই আদালতে সাবেক গণতন্ত্রের প্রতীক সু চিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানায় মামলার বাদী আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে টানা আন্দোলন করে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন সু চি; কিন্তু এখন সেই সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়েই গণহত্যার দায় এড়াতে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ালেন।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রক্তাক্ত এক সামরিক অভিযান চালিয়ে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। রক্তাক্ত এই অভিযানে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও চালানো হয়। প্রাণে বাঁচতে সেই সময় রোহিঙ্গাদের ঢল নামে প্রতিবেশী বাংলাদেশে।

পশ্চিম আফ্রিকার ক্ষুদে মুসলিম দেশ গাম্বিয়া ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যদের উৎসাহে গণহত্যার দায়ে মামলা করে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে তোলে। এর আগে মঙ্গলবার প্রথম দফায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে হেগের এ আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সূত্র: জাগো নিউজ।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *