সংক্রমণ তালিকায় কানাডাকে টপকে ১৭তম স্থানে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক লীড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করোনাভাইরাসের ছোবলে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত— জনপদে জনপদে এখন লাশের সারি। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমেই বাড়তে থাকায় সামনের দিনগুলোতে লাশের মিছিল আরও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে বলে আশঙ্কা জাগছে। বাংলাদেশেও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যু। করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান প্রচারের ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের পরিসংখ্যান অনুসারে, সংক্রমণের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় ১৭তম অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে।

বুধবারও (১৭ জুন) বাংলাদেশের অবস্থান ওই তালিকার ১৮তম স্থানে থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা যোগ হতেই কানাডাকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ বুলেটিন প্রচারের পর ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের গ্রাফে বাংলাদেশকে ১৭তম স্থানে দেখা যায়।

দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্তের তথ্য জানানো হয় গত ৮ মার্চ। ১০৩তম দিন বৃহস্পতিবার এসে এ সংখ্যা ঠেকেছে এক লাখ দুই হাজার ২৯২ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন এক হাজার ৩৪৩ জন। অবশ্য সুস্থ হয়েছেন ৪০ হাজার ১৬৪ জন।

শনাক্ত হওয়ার পর শুরুর দিকে বাংলাদেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কম থাকলেও মে মাসের শেষ এবং জুনের শুরু থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে উভয় সংখ্যা। তবে দু’সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সিংহভাগ ক্ষেত্রে তিন হাজারের বেশিই দেখা যাচ্ছে। সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফই বাংলাদেশকে বসিয়েছে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীন এবং কানাডার ওপরে।

ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের তথ্যমতে, সারাবিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছেন চার লাখ ৫১ হাজারের বেশি। আর সুস্থ হয়েছেন ৪৪ লাখ ৩৩ হাজার প্রায়।

প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও দৃঢ় অর্থনীতির দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২২ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছেন এক লাখ ২০ হাজার প্রায়।

যুক্তরাষ্ট্রের পর সংক্রমিত রোগী বেশি ব্রাজিলে। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা নয় লাখ ৬০ হাজারের বেশি। মারা গেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৪৬ হাজার মানুষ।

তালিকার তৃতীয় অবস্থানে আছে রাশিয়া। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৬১ হাজারের বেশি। সংক্রমণের তুলনায় রাশিয়ায় অবশ্য মৃত্যু কমই হয়েছে বলা যায়। সেখানে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে সাত হাজার ৬৬০ জনের।

এই তালিকার চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে আছে যথাক্রমে ভারত, যুক্তরাজ্য ও স্পেন। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা এখন তিন লাখ ৬৮ হাজারের বেশি। মারা গেছেন ১২ হাজার ২৭৪ জন। যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ প্রায়। মৃত্যু হয়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪২ হাজার ১৫৩ জনের। আর একসময়ের হটস্পট স্পেনে সংক্রমণের চিত্র এখন অনেকটাই নি¤œমুখী হলেও সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৯১ হাজার। মারা গেছেন ২৭ হাজারের বেশি মানুষ।

এরপর সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম অবস্থানে আছে যথাক্রমে পেরু, ইতালি, ইরান ও জার্মানি। লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৪১ হাজার প্রায়, মৃত সাত হাজার ২৫৭ জন; একসময়ের হটস্পট ইতালিতে আক্রান্ত দুই লাখ ৩৮ হাজার প্রায়, মৃত ৩৪ হাজার ৪৪৮ জন; ইরানে আক্রান্ত এক লাখ ৯৫ হাজার জন, মৃত নয় হাজার ১৮৫ এবং জার্মানিতে আক্রান্ত এক লাখ ৯০ হাজার, মৃত ৮৯২৭ জন।

তালিকার ১১তম থেকে ২০তম পর্যন্ত স্থানে আছে যথাক্রমে চিলি (আক্রান্ত এক লাখ ৮৪ হাজার, মৃত ৩৬১৫), তুরস্ক (আক্রান্ত এক লাখ ৮২ হাজার, মৃত ৪৮৬১), পাকিস্তান (আক্রান্ত এক লাখ ৬০ হাজার, মৃত ৩০৯৩), মেক্সিকো (আক্রান্ত এক লাখ ৫৯ হাজার, মৃত ১৯০৮০), ফ্রান্স (আক্রান্ত এক লাখ ৫৮ হাজার, মৃত ২৯ হাজার ৫৭৫), সৌদি আরব (আক্রান্ত এক লাখ ৪১ হাজার, মৃত ১০৯১), বাংলাদেশ, কানাডা (আক্রান্ত ৯৯ হাজার ৮৫৩, মৃত ৮২৫৪), চীন (আক্রান্ত ৮৩ হাজার, মৃত ৪৬৩৪) ও কাতার (আক্রান্ত ৮৩ হাজার, মৃত ৮২)।

বাংলাদেশে এক লাখ রোগী শনাক্তের বিপরীতে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ৫০৩টি। আর বাংলাদেশের ওপরে ১৬তম অবস্থানে থাকা সৌদি আরব নমুনা পরীক্ষা করেছে ১১ লাখ ৬৭ হাজার। বাংলাদেশের নিচে পড়ে যাওয়া কানাডা নমুনা পরীক্ষা করেছে ২২ লাখ ৫৪ হাজার ৪৮১টি নমুনা। নমুনা পরীক্ষার এমন হারেও বাংলাদেশের এই ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ সামনের দিনগুলোতে কোন জায়গায় গিয়ে ঠেকে, সেটাই ভাবনার বিষয় বিশেষজ্ঞদের।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *