সব রেকর্ড ভেঙে বিশ্বে একদিনে সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্ত

আন্তর্জাতিক লীড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কোভিড-১৯ মহামারী কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। শনাক্ত ও আক্রান্তে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছে দিনের পর দিন। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংক্রমণ ধরা পড়েছে। করোনাভাইরাসে নতুন করে বিশ্বে দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, মাত্র ২৪ ঘণ্টায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনাভাইরাসের মহামারী শুরুর পর গত সাড়ে ৭ মাসে এই প্রথম একদিনে আড়াই লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হলো।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়ে, সর্বোচ্চ শনাক্তের দিক থেকে শুক্রবারের সংখ্যাকেও ছাপিয়ে গেল শনিবার। সেদিন মোট দুই লাখ ৩৭ হাজার ৭৪৩ জনের শরীরে নতুন করে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

আর শনিবার সবচেয়ে বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায়। শনিবার একদিনেই বিশ্বে এ ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৩৬০ জনের, যা ১০ মের পর সবচেয়ে বেশি।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, শনিবার বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৪২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৬ লাখ।

আর ওয়ার্ল্ডওমিটারসের সবশেষ তথ্যে বলা হয়েছে, রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি ৪৪ লাখ ২৭ হাজার ৭৩১ জন।

আর মারা গেছেন ৬ লাখ ৪ হাজার ৯৬৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮৬ লাখ ১৮ হাজার ১০০ জন।

ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে নতুন এ ভাইরাসের আবির্ভাবের পর বিশ্বজুড়ে প্রথম ১০ লাখ রোগী পেতে সময় লেগেছিল তিন মাস। সংক্রমণের বিস্তৃতি ও শনাক্তকরণ পরীক্ষার পরিমাণ বাড়ায় এর পর প্রতি ১০ লাখ শনাক্তে সময় ক্রমাগত কমতে থাকে।

গত সপ্তাহের সোমবার রোগীর সংখ্যা টপকায় এক কোটি ৩০ লাখ। তার মাত্র ১০০ ঘণ্টার ব্যবধানেই যুক্ত হয় আরও ১০ লাখ।

রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্বে এখন শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা প্রতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে ফ্লুতে আক্রান্ত গুরুতর রোগীর প্রায় তিনগুণ।

বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত যত রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির ৫০টি রাজ্যের মধ্যে ৪৩টিতেই শনিবার শনাক্তের হার বেড়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

ফ্লোরিডা, টেক্সাস, অ্যারিজোনার মতো দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য, যেখানে লকডাউনের বিধিনিষেধ কার্যকরে ও মাস্ক ব্যবহারে আগে শিথিলতা দেখা গেছে, সেসব এলাকাতেই এখন সংক্রমণ বাড়ছে সবচেয়ে বেশি।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের টালিতে যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার ছাড়িয়েছে। আর না ফেরার দেশে এক লাখ ৪২ হাজার ৮৭৭ জন মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রের পর শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে সরকারি হিসাবে ২০ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি রোগীর সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা বলা হচ্ছে। আর মারা গেছেন ৭৮ হাজার মানুষ।

ওয়ার্ল্ডওমিটারস বলছে, ব্রাজিলে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে ২০ লাখ ৭৫ হাজার ২৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রাণহানি ৭৮ হাজার ৮১৭ জনে ঠেকেছে।

লাতিন আমেরিকার এ দেশটির প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর দেহে কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে। কট্টর ডানপন্থী এ প্রেসিডেন্ট প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধিনিষেধ আরোপের বিরোধী ছিলেন। মতের মিল না হওয়ায় দুই দফায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বদলেছেন তিনি।

শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় বিশ্বে তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতে সরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ৩৮ হাজার ছাড়িয়েছে; দেশটিতে এখন প্রতিদিনই গড়ে ৩০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ২৬ হাজার ২৩৭ জনের।

কেবল শনিবারই সেখানে ৩৪ হাজার ৮৮৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, ৬৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ ভারতে সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে এখনও মাসখানেক বাকি।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৩ দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও)।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *