সন্তানকে ৩০ বছর ফ্ল্যাটে বন্দী রাখায় মা আটক

আন্তর্জাতিক

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: নিজের ছেলেকে প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ফ্ল্যাটে বন্দী করে রাখার সন্দেহে এক মাকে গ্রেফতার করেছে সুইডেনের পুলিশ। যে ছেলেকে রাখা হয়েছিল, তার বয়স এখন ৪০। তাকে ফ্ল্যাটের মধ্যে খুবই নোংরা পরিবেশে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়।

তবে গ্রেফতারকৃত মা তার ছেলেকে বন্দী করে রাখা এবং তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করার কথা অস্বীকার করেছেন।

স্টকহোমের উপকণ্ঠে এই ঘটনা ঘটেছে। রোববার লোকটির মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। তখন ঘটনাচক্রে ফ্ল্যাটে যাওয়া একজন আত্মীয়া আহত ছেলেটিকে সেখানে আবিষ্কার করেন। আঘাতের জন্য তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

স্টকহোমের হ্যানিঞ্জ এলাকায় এই ফ্ল্যাটটি এখন পুলিশ তদন্তের স্বার্থে সিল করে দিয়েছে। সেখানে আসলে কী ঘটেছিল তা জানতে পুলিশ সাক্ষ্য-প্রমাণ খুঁজছে।

গত রোববার ওই মায়ের অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার খবর শুনে সন্ধ্যায় এই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন তাদের এক আত্মীয়া এবং তার সঙ্গী। এই নারী ফ্ল্যাটের দরোজা খুলেই দেখেন এটি একেবারে অন্ধকার, ধুলায় ঢাকা। সেখান থেকে মূত্র, ময়লা-আবর্জনার পঁচা গন্ধ বেরুচ্ছে।

যখন তিনি হ্যালো বলে ডাক দেন, তার জবাবে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর তাকে স্তূপ হয়ে থাকা জিনিসপত্রের মাঝ দিয়ে ঘরে ঢুকতে হয়। তারপর রান্নাঘরে শব্দ শুনতে পেয়ে তিনি দেখেন অন্ধকারে এক কোনায় একটা লোক বসা। বাইরে থেকে রাস্তার সড়ক বাতির আলোয় তাকে দেখা যাচ্ছিল। তার পা থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঘা হয়ে গেছে।

এই নারী সুইডেনের একটি সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, লোকটি যখন তাকে দেখেন, তিনি উঠে দাঁড়ান এবং তার নাম ধরে বার বার ডাকতে থাকেন। লোকটির প্রায় সব দাঁত পড়ে গেছে এবং তার কথা ছিল অস্পষ্ট।

তিনি বলেন, যে কোনভাবেই হোক, এত বছর পরেও লোকটি তাকে চিনতে পেরেছে এবং তাকে দেখে ভয় পাচ্ছিল না।

লোকটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তাররা বিষয়টি পুলিশকে জানায় এবং এরপর তার মাকে আটক করা হয়।

স্টকহোমের একজন সরকারি কৌসুঁলি রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছে, লোকটির শরীরে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তবে এর বেশি কিছু তিনি আর জানাননি।

পুলিশের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে জানান, ‘লোকটিকে কতদিন বন্দী করে রাখা হয়েছিল, সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে আমাদের ধারণা, দীর্ঘ একটা সময় তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল।’

যে নারী এই লোকটিকে ফ্ল্যাটে গিয়ে খুঁজে পান, তিনি সুইডেনের পাবলিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘লোকটির মা এর আগে তার আরেকটি সন্তান হারিয়েছিলেন। সেটি নিয়ে তিনি মুষড়ে পড়েছিলেন। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পর তিনি তার নাম রাখেন আগের সন্তানের নামে।’

‘লোকটি যে শেষ পর্যন্ত উদ্ধার পেয়েছে এবং বেঁচে গেছে, সেজন্যে আমি কৃতজ্ঞ’, বলছেন এই আত্মীয়া।

এই নারী আরও জানিয়েছেন, তিনি সর্বশেষ এই ফ্ল্যাটে গিয়েছেন ২০ বছর আগে। ছেলেটির বয়স যখন ১১ বা ১২ তখন থেকে তাকে স্কুলের খাতা থেকে নাম কেটে ঘরে নিয়ে আসা হয়েছিল। সে সময় তিনি ওই ছেলেটির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে সবাইকে সতর্ক করে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *