সৌদি আরবে আবিরন হত্যাকাণ্ডে এক জনের মৃত্যুদণ্ড

আন্তর্জাতিক

স্বদেশবাণী ডেস্ক:  সৌদি আরবে বাংলাদেশি গৃহকর্মী আবিরন বেগম হত্যা মামলার রায় হয়েছে। আবিরন বেগমকে হত্যার দায়ে গৃহকর্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড এবং এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গৃহকর্ত্রীর স্বামীর ৩ বছর ২ মাসের জেল এবং মহিলার ছেলের ৭ মাসের জন্য কিশোর সংশোধনাগারে রাখার নির্দেশ সেই সাথে ৫০ হাজার রিয়াল জরিমানা দিয়েছে সৌদি আদালত।

আদালত রায়ে প্রধান আসামী গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার কারণে কিসাস (জানের বদলে জান) এর রায় দেন। আদালত তাঁর রায়ে গৃহকর্তা বাসেম সালেমের বিরুদ্ধে আলামত ধ্বংসের অভিযোগ, আবিরন বেগমকে নিজ বাসার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় কাজে পাঠানো ও চিকিৎসার  ব্যবস্থা না করায় পৃথক পৃথক অভিযোগে মোট ৩ বছর ২ মাস কারাদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা করেন।  আদালত অপর আসামী সৌদি দম্পতির কিশোর পুত্র ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করার প্রমান পায়নি বলে জানান, তবে আবিরন বেগমকে বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা করায় তাঁকে সাত মাসের কিশোর সংশোধনাগারে থাকার আদেশ প্রদান করেন। রায়ের বিরুদ্ধে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ রয়েছে বলে আদালত জানান।

আজ ১৫ই ফেব্রুয়ারি সকালে সৌদি আরবের ক্রিমিনাল ৬নং  আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন, আদালত আবিরনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে এই ধরনের ঘটনা থেকে বিরত থাকতে সৌদি নাগরিকদের প্রতি নিদর্শন প্রদান করেন আদালত।

এর আগে আবিরন হত্যা মামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন আসামির কাউকে জামিন দেননি দেশটির আদালত। আদালত এ ব্যাপারে আসামিদের লিখিত জবাব দিতে বলেছেন। অন্যদিকে নিহত আবিরনের পরিবার বলেছে তারা এই ঘটনায় কোনো সমঝোতা চায় না, বরং প্রাণের বদলে প্রাণ চায়।

সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এর সার্বিক সহযোগিতায় এই রায় বলে জানিয়েছেন রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান।

রিয়াদের ক্রিমিনাল কোর্টের ৬ নম্বর আদালতে আবিরন বেগমের মামলা পরিচালনার জন্য দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের প্রথম সচিব মোঃ সফিকুল ইসলাম ও আইন সহায়তাকারী সোহেল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) আবিরন বেগম হত্যা মামালার রায় ঘোষণার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সৌদি সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

খুলনার পাইকগাছার মেয়ে আবিরন ‘পরিবারে একটু স্বচ্ছলতা আসবে’ স্থানীয় দালাল রবিউলের এমন কথায় ঢাকার একটি রিক্রটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে এসেছিলেন ২০১৭ সালে। ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ তাকে হত্যা করা হয়। তবে দীর্ঘদিনেও পরিবার আবিরনের মরদেহ পাচ্ছিল না। পরিবারটি বেসরকারি সংস্থা  ব্র্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সহায়তায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর তার মরদেহ দেশে পাঠানো হয়। মরদেহের সঙ্গে থাকা আবিরনের মৃত্যুসনদে মৃত্যুর কারণের জায়গায় লেখা ছিল মার্ডার (হত্যা)।

সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, এর আগে আবরিন হত্যা মামলা রিয়াদের ক্রিমিনাল কোর্টের ৬ নম্বর আদালতে মামলার কার্যক্রম চলছিল। আবিরনের পরিবারের পক্ষ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে রিয়াদে দূতাবাসের প্রথম সচিব মো. সফিকুল ইসলাম ও অনুবাদক সোহেল আহমেদ শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউশনের প্রতিনিধি আবদুল্লাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *