খাসোগি হত্যা : সৌদির বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিল যুক্তরাষ্ট্র?

আন্তর্জাতিক

স্বদেশবাণী ডেস্ক: সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানকে ((এমবিএস) দোষী সাব্যস্ত করে মার্কিন সরকারের প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা। সৌদির ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নিতে পারে মিত্র যুক্তরাষ্ট্র তাই দেখার জন্য মুখিয়ে ছিল রাজনৈতিক সচেতন মানুষ।

অবশেষে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে আমেরিকা। যেখানে কোন কড়া ব্যবস্থা নেয়নি দেশটি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ‘সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার কোন চিন্তা নেই আমেরিকার।’ খবর ডয়েচে ভেলের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, ‘সৌদি আরবে ভিন্ন মতের এক্টিভিস্টদের ওপর ঘটতে থাকা অত্যাচার যুক্তরাষ্ট্রকে ভাবাচ্ছে। সৌদিকে এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অপরাধ না হয় সেদিকে নজর রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। সৌদির সাথে আমাদের সম্পর্ক আরও স্থিতিশীল করার ইচ্ছে আছে। আমরা বিচ্ছেদের চেয়ে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে আগ্রহী।’

এর আগে গত শুক্রবার সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এ সময় বাইডেন বলেছিলেন, ‘সোমবার পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানানো হবে।’ সোমবার মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, ৭৬ জন সৌদি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অ্যামেরিকায় ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’ যদিও তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

এদিকে, মার্কিন প্রতিবেদন প্রকাশের পর মুখ খুলেছেন খাসোগির বাগদত্তা হাদিস চেঙ্গিস। যুবরাজ সালমানের শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।

হাদিস চেঙ্গিস বলেন, ‘সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে সৌদি যুবরাজের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এর ফলে শুধু যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে তাই নয়, সেইসঙ্গে একই ধরনের নৃশংসতা রোধ করাও সম্ভব হবে।’

এক টুইটার বার্তায় চেঙ্গিস আরও বলেন, ‘যদি সৌদি যুবরাজকে শাস্তি দেয়া না হয় তাহলে এর মধ্যদিয়ে চিরদিনের জন্য এমন একটা বার্তা দেয়া হবে যে, খুনের মূল অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারেন। এতে আমরা সবাই বিপদে পড়বো, আমাদের মানবতায় রক্তের দাগ লাগবে।’

এর আগে বহুল আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।

খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়ে সংস্থাটির বিশেষ প্রতিনিধি অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, ‘এমবিএসের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি তার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যারা খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের আন্তর্জাতিক সমাজ থেকে একঘরে করে রাখতে পারলে একই ধরনের অপরাধ করার কথা যারা চিন্তা করে তারা শিক্ষা পাবেন।’

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সৌদি প্রিন্সই খাসোগি হত্যার নির্দেশদাতা উল্লেখ করে গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই প্রতিবেদনটি ধামাচাপা দিয়ে রাখলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তা প্রকাশ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

বাইডেন প্রশাসনের প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া খাসোগিকে আটক বা হত্যার পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রিন্স। দুই বছর আগের আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর এবারই প্রথম সরাসরি সৌদি যুবরাজকে দায়ী করে মার্কিন সরকার।

সৌদি শাসক গোষ্ঠীর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। তিনি ২০১৮ সালের অক্টোবরে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলস্থ সৌদি কনস্যুলেটে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে গিয়ে নৃশংসভাবে নিহত হন।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালকের দপ্তরের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা বা আটক করতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অভিযানের অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।’

এ হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত ঘটনায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সৌদি আরবের একটি আদালত। গত বছর ওই সাজা কমিয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড করা হয়।

সৌদি প্রসিকিউটরদের ভাষ্য মতে, ধস্তাধস্তি করে খাশুগজিকে আটকানো হয় এবং ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে তাকে অতিরিক্ত পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে তার মৃত্যু হয়। এরপর তার মৃতদেহ কেটে টুকরো টুকরো করে কনস্যুলেটের বাইরে স্থানীয় এক ‘দোসরের’ কাছে দেওয়া হয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *