বিজেপিতে যোগ দেয়া মুসলমানরা এখন কী করবেন?

আন্তর্জাতিক

স্বদেশবাণী ডেস্ক:  ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিজেপি। মমতার দুর্গ ভাঙতে নির্বাচনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারবার পশ্চিমবঙ্গ সফরে গিয়েছেন। মাসখানেকের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে মোদি গিয়েছেন ১৫ বার। আর ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ সফর করেছেন ৬২ বার। নির্বাচনকে সামনে রেখে ১১৫ দিন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা–মন্ত্রীরা পশ্চিমবঙ্গ সফর করেছেন।

এত কিছুর পরও মমতার দুর্গ তো ভাঙতেই পারেননি। উল্টো মমতা আরও বড় ব্যবধানে জিতেছেন। সব মিলিয়ে চরম বিপর্যস্ত রাজ্য বিজেপি। এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পরাজিত প্রার্থীদের একাংশ ইতিমধ্যেই দলের সঙ্গে দূরত্ব রাখতে শুরু করেছেন। এর মধ্যেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সংখ্যালঘু মুসলমান নেতাদের একাংশ তৃণমূলে ফেরার তোরজোড় শুরু করে দিয়েছেন। এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সহ-সভাপতি কাশেম আলি।

২০১৭ সালে মুকুল রায়ের সঙ্গেই বিজেপিতে আসেন কাশেম। রাজ্য স্তরের দায়িত্বও পান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা। এখন তিনি ফিরে যেতে চান পুরনো দলে। বিজেপির করোনা আক্রান্ত এ মুসলিম নেতা রোববার বলেন, ‘বড় ভুল করেছি। শরীরটা ঠিক হলেই নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে আসব। আমি তৃণমূলেই ফিরে যেতে চাই।” কাশেমের বক্তব্য, “বুঝতে পারছি বিজেপি দলটা মুসলিমদের জন্য নয়। আমি একা নই, আমার সঙ্গে অনেকে যোগাযোগ করছে। সবাই ফিরতে চাইছে। সবারই বক্তব্য, বিজেপি ভোটের প্রচারে যে ভাবে সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করেছে সেটা বাংলার মানুষ ভালোভাবে নেয়নি।’

শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে গত বছর ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় বিজেপিতে যোগ দেন হুগলির পুরশুড়া আসনের সাবেক তৃণমূল বিধায়ক শেখ পারভেজ রহমান। ইতিমধ্যেই গেরুয়া শিবিরের অবস্থান নিয়ে তিনি বীতশ্রদ্ধ। ওই আসনে এবার বিজেপি জিতেছে। তবু বিজেপিতে না থেকে পুরনো দলে গিয়েই কাজ করতে চান পারভেজ। তবে দল তাকে ফিরিয়ে নেবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন।

শেখ পারভেজ রহমান বলেন, ‘আমাদের মতো পুরনোরা না থাকাতেই আরামবাগ লোকসভা এলাকায় ৪টি আসনে তৃণমূল হেরে গিয়েছে। অভিমানে দল ছেড়েছিলাম। আশা করি এখন দল আমাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাববে।’

একই দিনে বিজেপিতে যোগ দেওয়া হুগলির আর এক প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আলমগীর মোল্লাও তৃণমূলে ফেরার পরিকল্পনা করছেন বলে তার ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

তবে তিনি স্পষ্টভাবে তা স্বীকার করেছেন না। আপাতত যে রাজনীতি থেকে দূরত্ব রেখে চলেছেন তা মেনে নিয়ে চণ্ডীতলা ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন খাদ্য সরবরাহ কর্মাধ্যক্ষ বলেন, ‘এখনই কিছু মনস্থ করিনি। কারণ, এখন চারদিকে অস্থিরতা চলছে। আপাতত চুপচাপ থাকছি। পরিস্থিতি ঠিক হলে সিদ্ধান্ত নেব।’

মেদিনীপুর অমিত শাহর ‘মেগা যোগদান মেলা’-য় বিজেপি-তে যাওয়া তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কবিরুল ইসলামও এখন ঘরওয়াপসি চাইছেন। সে কথা স্বীকার করে নিয়ে কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিজেপিতে এসে ভুল করেছি। মোহভঙ্গ হয়েছে। যে দলের রাজ্য সভাপতি বলেন, মুসলিমদের দরকার নেই, সেখানে থাকতে যাব কেন? বিজেপি দলটার দুটো রূপ। নেওয়ার আগে এক, পরে আর এক। এই দল বাংলায় কোনও দিন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। সচেতন বাঙালি ভ্রাতৃত্ববোধের বন্ধনে থাকতে চায়।’

কবিরুল বলেন, ‘আমাদের রক্ষা করতে পারেন ববিদা (ফিরহাদ হাকিম)। তার হাত ছাড়াটা আমার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনের বড় ভুল।’

ববি হাকিমের দিকে তাকিয়ে আছেন কাশেমও। তিনিও করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে এ বিষয়ে রাজ্য বিজেপি নেতাদের কেউই এখন এ নিয়ে মতামত দিতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপি নেতারা বলেন, তৃণমূল তাদের ওপর চাপ তৈরি করছে বলেই কেউ কেউ ফেরার কথা ভেবে থাকতে পারেন। তবে সেটাকে দলের পক্ষে বড় কিছু ক্ষতি বলে মানতে রাজি নন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *