ফিলিস্তিনি আন্দোলনের নতুন মধ্যমণি যমজ ভাই-বোন

আন্তর্জাতিক লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: গাজায় যুদ্ধবিরতির দু’সপ্তাহের মাথায় আবারও ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমের শেখ জারাহ মহল্লায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। রোববার (৬ জুন) ইসরায়েলি পুলিশ শেখ জারার একটি এল কুর্দ পরিবারের বাড়িতে ঢুকে ২৩ বছরের তরুণী মুনা এল কুর্দকে ধরে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে তার যমজ ভাই মোহাম্মেদ এল কুর্দ পুলিশ স্টেশনে গিয়ে স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তারবরণ করেন।

তাদের আটকের খবর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে তাদের প্রচুর সমর্থক দলে দলে পূর্ব জেরুজালেমের ওই পুলিশ স্টেশনের কাছে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সে সময় পুলিশের ছোঁড়া স্টান গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি জখম হয়।

এর কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ তাদেরকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু এই দুই যমজ ফিলিস্তিনি ভাই-বোন এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদ আন্দোলনের মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন।

মুনা এবং মোহাম্মেদের বাবা নাবিল এল কুর্দ পরে সাংবাদিকদের বলেন, হঠাৎ ঘরে ঢুকে পুলিশের তল্লাশি এবং মেয়েকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তিনি হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কেন বিনা উস্কানিতে তার মেয়েকে ইসরায়েলি পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি পুলিশ জানায়, সম্প্রতি পূর্ব জেরুসালেমে দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে করা এক মামলায় মুনা এল কুর্দকে আটক করা হয়।

সেই সময় মুনা বা তার ভাই মোহাম্মেদ শেখ জারাহ বা আল আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েলি পুলিশের দিকে পাথর ছুঁড়েছিলেন কিনা বা ছুঁড়তে উৎসাহ দিয়েছিলেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। তবে শেখ জারাহ থেকে ফিলিস্তিনি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে প্রতিবাদ তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন এই দুই ভাই-বোন।

গত ক’মাসে তরুণ বয়সী এই দুই ভাই-বোন শেখ জারাহ থেকে উচ্ছেদ ঠেকানোর আন্দোলন এবং সার্বিকভাবে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিবাদ আন্দোলনের অত্যন্ত পরিচিত দুই মুখ। বিশেষ করে সোশাল মিডিয়ায় এই আন্দোলনে তারা কার্যত নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা দু’জনই টুইটার এবং ইনস্ট্রগ্রামসহ সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্মে খুবই সরব।

ইনস্টাগ্রামে মুনার ফলোয়ারের সংখ্যা এখন ১৩ লাখের মত। আর টুইটারে অ্যাকাউন্ট খুলছেন মার্চ মাসে, এরই মধ্যে তার ফলোয়ারের সংখ্যা ৬৪ হাজার। দিনে দিনে সেই সংখ্যা বাড়ছে।

তিন মাস আগে মুনা ‘সেভ শেখ জারাহ’ হ্যাশটাগে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ক্যাম্পেইন শুরু করেন, সেটাই সারা বিশ্বের ফিলিস্তিনি এবং তাদের সমর্থকদের নজর কাড়ে। দ্রুত তা বড় একটি আন্দোলনে দানা বাঁধে।

মোহাম্মেদ এই মুহূর্তে জেরুজালেমে থাকলেও উচ্চশিক্ষার জন্য নিউইয়র্কে থাকেন তিনি। কিন্তু সেখানে বসেই ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি অনলাইনে এবং মূলধারার মিডিয়াতে নিয়মিত লেখালেখি করেন। বয়স মাত্র ২৩ হলেও সিএনএন, গার্ডিয়ান বা আল জাজিরাসহ প্রথম সারির মিডিয়ায় তার একাধিক সাক্ষাৎকার এবং লেখা প্রচার হয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের ইতিহাস নিয়ে লেখা তার একটি বই বর্তমানে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

রোববার (৬ জুন) পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মুনা সাংবাদিকদের সামনে বলেন, ‘আমাদের ভয় দেখাতে, আতঙ্কিত করতে তারা (ইসরায়েল) যাই করুক না কেন, যতবারই আমাদের গ্রেপ্তার করুক, আমরা ভয় পাইনা।’

পরপরই ভাই মোহাম্মেদ টুইট করেছেন, ‘আমরা স্বাধীন, মুক্ত। আমাদের ভয় নেই। তারা (ইসরায়েল) কখনই আমাদের আতঙ্কিত করতে পারবে না।’

তাদের এসব কথা, টুইট হাজার হাজার শেয়ার হচ্ছে।

কেন মুনা এবং মোহাম্মেদ এই বয়সে শেখ জারাহ নিয়ে এতটা তৎপর হয়ে পড়লেন? কারণ, শেখ জারায় যা হচ্ছে তার সরাসরি শিকার হয়ে পড়েছেন তারা এবং তাদের পরিবার। যে চারটি পরিবারকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে আল কুর্দ পরিবার তাদেরই একটি।

যে চারটি পরিবারকে শেখ জারাহ থেকে উচ্ছেদ করার পক্ষে জেরুজালেমের একটি আদালত রায় দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো- যে জমিতে তাদের বাড়ি তার মালিক তারা নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র তৈরির আগে ওই জমি ছিল ইহুদিদের এবং তাদেরকে সেই জমি ফেরত দেয়া হচ্ছে।

কুর্দ পরিবার বলছে, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র তৈরির সময় হাইফা শহর থেকে বাড়ি-ঘর ফেলে তারা পূর্ব জেরুজালেমে পালিয়ে আসলে শেখ জারায় তাদের পুনর্বাসন করা হয়। পূর্ব জেরুজালেম তখন জর্ডানের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *