স্বদেশ বাণী ডেস্ক: ১৯৯৬ সালে তালেবান কাবুল দখলের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান স্বীকৃতি দিয়েছিল। আবার পাকিস্তানই দেন-দরবার করে তালেবানের জন্য সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বীকৃতি আদায় করেছিল। কিন্তু এবার তালেবানের কাবুল দখলের এক মাস পরও স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে ইসলামাবাদ এখনও চুপ।
এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানের সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান লে. জেনারেল ফায়েজ হামিদ গত সপ্তাহে কয়েকদিন কাবুলে ছিলেন। এরই মধ্যে বিমান বোঝাই করে আফগানিস্তানে খাবার এবং ওষুধ পাঠিয়েছে পাকিস্তান।
সোমবার পাকিস্তানের জাতীয় বিমান সংস্থা পিআইএ-র একটি বিমান কাবুলে নেমে যাত্রী নিয়ে এসেছে এবং ইঙ্গিত দিয়েছে যে এখন থেকে নিয়মিত এই রুটে বিমান চলবে। কিন্তু তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রশ্নে ইসলামাবাদ এখনও চুপ।
লন্ডনে আফগান সাংবাদিক এবং আফগানিস্তানের রাজনীতির বিশ্লেষক সাইয়েদ আব্দুল্লাহ নিজামী বলেন, কয়েকটি দেশ – বিশেষ করে কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), চীন ও পাকিস্তান- তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে, কিন্তু আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির কোন প্রতিশ্রুতি এখনও তারা দিচ্ছে না। দেখে মনে হচ্ছে একটি দেশ যেন আরেকটি দেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তারা কী করে। একজন সিদ্ধান্ত নিলেই আরেকটি এগুবে। পাকিস্তান তাকিয়ে চীনের দিকে, চীন হয়তো দেখছে পাকিস্তান কী করে। উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান চেয়ে আছে সম্ভবত রাশিয়ার দিকে।
এ ব্যাপারে ইসলামাবাদে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান আসকারি রিজভী বিবিসিকে বলেন, পাকিস্তান তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না। তারা এবার একা কিছু করতে চায় না। অন্য আরও দশ-পাঁচ জনের সঙ্গে মিলে সিদ্ধান্ত নিতে চায়। প্রতিবেশী অন্য দেশগুলোর সঙ্গে, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে সমন্বয় করে এবার এগুতে চাইছে পাকিস্তান। আফগান এবং তালেবানের প্রশ্নে কমপক্ষে আঞ্চলিক একটি ঐক্য চাইছে পাকিস্তান।
সম্ভবত সে কারণেই পাকিস্তানের উদ্যোগে গত বুধবার চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি বৈঠক করেছেন।
দু’দিন পর শনিবার আবারও পাকিস্তানের উদ্যোগেই এসব দেশের গোয়েন্দা প্রধানরা একটি বৈঠক করেন বলে পাকিস্তানের নির্ভরযোগ্য ইংরেজি দৈনিক ডন খবর দিয়েছে। আমেরিকার সঙ্গেও গোপনে পাকিস্তান কথা বলছে বলে ডনের খবরে বলা হয়েছে।
বুধবার যখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন, সেদিনই সিআইএ-র প্রধান উইলিয়াম বার্নস ইসলামাবাদে ছিলেন। বার্নস আফগান পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার রশীদ বাজওয়া এবং আইএসআই প্রধান লে. জেনারেল ফায়েজ হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
তালেবানকে গত ২০ বছর ধরে পাকিস্তানই আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে শক্তিধর করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে, যদিও পাকিস্তান তা সবসময় অস্বীকার করে। সে কারণেও আগ বাড়িয়ে এককভাবে তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে পাকিস্তান চাইছে না বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।
তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিজভী বলেন, তালেবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রশ্নে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিলেও পাকিস্তান আফগানিস্তানকে সাহায্য দিয়ে চলেছে। আফগানিস্তানের প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাকিস্তানের ভেতর দিয়েই যাচ্ছে। সীমান্ত খোলা। প্লেন ভরে ত্রাণ গেছে।
তাছাড়া, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে আটক রাখা আফগানিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অবমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। কোনো শর্ত ছাড়াই আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্য দেওয়ার কথা বলেছেন।