অন্যদের শিক্ষা দিতেই সাংবাদিক ঝানকে কারাগারে রেখেছে চীন

আন্তর্জাতিক

স্বদেশবাণী ডেস্ক :  চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিবেদন করায় কারাগারে বন্দী আছেন দেশটির সাংবাদিক ঝাং ঝান। তার সাবেক আইনজীবী জানিয়েছেন, ঝাংকে কারাগারে রেখে অন্য সাংবাদিকদের শিক্ষা দিতে চায় চীনের কমিউনিস্ট সরকার।

গত বৃহস্পতিবার সাহসী সাংবাদিকতার জন্য রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস এর ২০২১ প্রেস ফ্রিডম পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে এই সাংবাদিককে৷ এক প্রতিবেদনে এই খবর জানায় দ্য গার্ডিয়ান।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, উহানের করোনাভাইরাস নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন করায় গতবছর তাকে গ্রেপ্তার করে চীনা প্রশাসন। গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে টানা অনশন করে আসছিলেন তিনি। ফলে, তার শারীরিক অবস্থার এতাটাই অবনতি হয়েছে যে, তার পরিবারের দাবি- তিনি যেকোন সময়ে মারা যেতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে, ঝাংয়ের মুক্তির দাবিতে চীনের শত শত মানবাধিকারপন্থী আইনজীবী ও সচেতন মহল খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। যেখানে তার দ্রুত মুক্তির দাবি করা হয়েছে।

 

৩৮ বছর বয়সী ঝাং ঝানকে গত বছরের মে মাসে আটক করা হয়। তারপর এর প্রতিবাদে তিনি কয়েক মাস অনশন করেন। এতে তার স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি হয়। তার এক আইনজীবী বলেছেন, সাক্ষাতের সময় ঝাং তাকে বলেছেন, তাকে জোর করে টিউবের মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ঝাং মাথাব্যথা, মাথাঘোরা এবং পেটের সমস্যায় ভুগছেন। তার এখন বাথরুমে যেতে হলেও অন্যের সহয়তা প্রয়োজন।

এর আগে, ঝাংয়ের ভাই ঝাং জু এক টুইটবার্তায় জানিয়েছিলেন, ‘৫.৮ ফিট লম্বা হওয়া সত্ত্বেও ঝাংয়ের ওজন নির্ধারিত ওজনের চেয়ে অন্তত ৪০ কেজি কমে গেছে। আমি মনে করি না সে আর বেশি দিন বাঁচবে। আগামী শীতের আগেই যদি তাকে ছেড়ে দেওয়া না হয়, আমি আশঙ্কা করছি, বিশ্ব তাকে মনে রাখবে যে, সে একসময় বেঁচে ছিল।’

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, চীনে কোনো মিডিয়াই স্বাধীন নয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে চীন সরকারের সমালোচনা বা সরকারের মর্যাদা খর্ব হয় এমন কোনো প্রতিবেদন তৈরি করলেই দেশটির শাসকদের রোষাণলে পড়তে হয় সাংবাদিকদের।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে উহান সফরে যান ঝাং। সেখান থেকে তিনি যেসব প্রতিবেদন করেছেন তা ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হয়েছে। ফলে চীন কর্তৃপক্ষের বাঁকা চোখে পড়ে যান তিনি।

নেটওয়ার্ক অব চাইনিজ হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারর্স (সিএইচআরডি) নামের এনজিও বলেছে, নিরপেক্ষ সাংবাদিকদের আটক রাখার বিষয়েও তিনি প্রতিবেদন করেছিলেন। এ ছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে যে হয়রানি করা হচ্ছে, তা নিয়েও তিনি প্রতিবেদন করেন।

এর কয়েক মাস পর ১৪ মে উহান থেকে তিনি নিখোঁজ হন। একদিন পরে পুলিশ তাকে উহান থেকে ৪০০ মাইলেরও বেশি দূরে সাংহাইয়ে আটক দেখায়। তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন হয় নভেম্বরের শুরুর দিকে। এতে অভিযোগ করা হয় যে- তিনি টেক্সট মেসেজ, ভিডিও ও অন্যান্য বিষয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইচ্যাট, টুইটার এবং ইউটিউবের মতো প্লাটফর্মে।

এ ছাড়া তিনি বিদেশি মিডিয়ার কাছে সাক্ষাতকার দিয়েছেন। এসবের মাধ্যমে উহানে করোনাভাইরাস সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছেন। এজন্য তার চার থেকে ৫ বছরের জেল সুপারিশ করা হয়। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *