জ্বালানি বাঁচাতে রাজধানীর সব স্কুল বন্ধ করল শ্রীলঙ্কা

আন্তর্জাতিক লীড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জ্বালানি তেল পেট্রোল ও ডিজেলের ভয়াবহ সংকট চলতে থাকায় রাজধানী কলম্বোর সব স্কুল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কার সরকার। পাশাপাশি, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সব সরকারি কর্মীকে বাড়িতে থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

রোববার জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকেরা জানিয়েছেন, বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় ৯ হাজার টন ডিজেল ও ৬ হাজার টন পেট্রোলের মজুত রয়েছে। কিন্তু এই মজুত নিয়ে দেশটিকে চলতে হবে অন্তত আরও দুই সপ্তাহ।

তার আগেরদিন শনিবার শ্রীলঙ্কান সরকারি তেল ও গ্যাস কোম্পানি সিলন পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (সিপিসি) গণপরিবহনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম ১৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। এতে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম এখন পৌঁছেছে ৪৬০ শ্রীলঙ্কান রুপি (১.২৭ মার্কিন ডলার)।

একইসঙ্গে পেট্রোলের দামও ২২ শতাংশ বাড়ানোর কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। এতে বর্তমানে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম হয়েছে ৫৫০ শ্রীলঙ্কান রুপি (১.৫২ মার্কিন ডলার)।

১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ইতিহাসের সবথেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট পার করছে শ্রীলঙ্কা। ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত ভারত মহাসাগরের ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে বৈদেশিক ম্দ্রুার রিজার্ভ না থাকায় জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মত অতি জরুরি পণ্যও আমদানি করতে পারছে না দেশটির সরকার।

এর মধ্যে জ্বালানি সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কায়। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েকমাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। জ্বালানি সংকটের কারণে মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে দেশটির যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থ।

বর্তমানে শ্রীলঙ্কার জ্বালনি তেলের পাম্পগুলোতে সেনা প্রহরা বসানো হয়েছে। যারা জ্বালানি কিনতে আসছেন, সেনা সদস্যদের কাছ থেকে টোকেন নিয়ে পাম্পের সামনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। পাম্পে তেলের সরবরাহ এলে তবেই পেট্রোল/ ডিজেলে কিনতে পারছেন তারা।

কিন্তু একে সেই তেলের সরবরাহ নিয়মিত আসে না, উপরন্তু সরবরাহ আসার পর কতক্ষণ তা থাকবে তা ও অনিশ্চিত। তাই তেলের পাম্পগুলোর সামনে রাতদিন সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছেন শত শত মানুষ।

রাজধানী কলোম্বোর ৬৭ বছর বয়সী অটোরিকশা চালক ডবিøউ ডি শেলটন তাদেরই একজন। কলম্বোর একটি জ্বালানি পাম্পের সামনে রয়টার্সের সঙ্গে কথা হয় তার। শেলটন জানান, সেনা সদস্যদের কাছ থেকে টোকেন নিয়ে গত প্রায় ৪ দিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।

তার অবশ্য তেল পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, কারণ যে লাইনে তিনি দাঁড়িয়েছেন, সেখানে তার অবস্থান ২৪তম; ইতোমধ্যে তার পেছনে অপেক্ষমানদের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৩ শতাধিক।

রয়টার্সকে শেলটন বলেন, ‘আমি গত চার দিন ধরে এই লাইনে অপেক্ষা করছি। এই চারদিন আমি ঠিকমতো খেতে পারিনি, ঘুমাতেও পারিনি।’

যে পাম্পের সামনে শেলটন গত ৪ দিন ধরে অপেক্ষা করছেন, সেখান থেকে তার বাড়ির দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। কিন্তু মাত্র এইটুকু পথ চলার মতো জ্বালানিও তার অটোরিকশায় নেই।

‘আমরা উপার্জন করতে পারছি না, পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছি নাৃএক মহাদুর্যোগের মধ্যে আমরা পড়েছে এবং কখন এর শেষ হবে— তা ও জানি না।’

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *