মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপে চোরাচালানি করছে ইরান

আন্তর্জাতিক

বিনিময় প্রথা ও তৃতীয় দেশ দিয়ে গোপন লেনদেন * তেলজাত রাসায়নিক বিক্রি থেকে এক বছরের আয় ৯৭০ কোটি ডলার

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের স্বার্থরক্ষায় ইরানকে দমিয়ে রাখার নীতি নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। সেই লক্ষ্যে গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে।

নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে তেহরানের তেল খাতের আয় অনেকাংশেই কমে গেছে। সংকুচিত হয়েছে অর্থনীতি। জাতীয় মুদ্রার মান অবমূল্যায়নে সৃষ্টি হয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও এখনও শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে আছে অদম্য এ দেশটি।

নিজেদের কোটি কোটি ডলারের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এগিয়ে নিচ্ছে। প্রতিরক্ষা ও আর্থিক সুরক্ষাও দিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী মিত্রদেশগুলোকে। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব হচ্ছে।

সেই রহস্য ভেদ করেছেন ইরানিরাই। দেশটির সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, রফতানি, চোরাচালানি ও বর্ধিত করের ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে ইরানের অর্থনীতি।

বিনিময় প্রথা ও গোপন লেনদেনই রফতানি ও চোরাচালানির প্রধান কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন তারা। বুধবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও বহুবার এ ঘটনা ঘটেছে। গত বছর ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার পর তেহরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞা বহাল করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়।

এরপর চলতি সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ইরানের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর একের পর এক নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থার (আইএমএফ) ভবিষ্যদ্বাণী, তেল রফতানির অনিশ্চতার কারণে ২০১৯ সালে ইরানের অর্থনীতি আগের থেকে ৩.৬ শতাংশ সংকুচিত হবে।

বিশ্বব্যাংকের এক হিসাব মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে তাদের মুদ্রাস্ফীতি ২৩.৮ থেকে ৩১.২ শতাংশে পৌঁছবে। ইরানি কর্মকর্তারা এসব তথ্য-উপাত্ত আর ভবিষ্যদ্বাণী নাকচ করে দিয়েছেন। শত্রুতামূলক এসব নিষেধাজ্ঞা থেকে বাঁচতে প্রথম থেকেই নানা কৌশল খাটিয়ে চলছে সরকার।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে লেনদেন চালিয়ে নিতে বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ী, কোম্পানি ও মানি এক্সচেঞ্জ অফিসগুলোর সঙ্গে বিকল্প নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইরানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কখনও ইরানকে অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মার্কিনিরা আমাদের তেল রফতানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চায়। কিন্তু এতে কখনই সফল হবে না। আর হলেও আমাদের বিকল্প রফতানি পণ্য আছে। আমরা তখন উন্নত টেক্সটাইল কাপড়, খাদ্যসামগ্রী, তেলজাত পণ্য ও অন্যান্য রাসায়নিক, শাক-সবজি রফতানি শুরু করব।’

একই কথা শোনা গেল ইরানের আরেক কর্মকর্তার মুখে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানবিষয়ক পরিচালক আলি ভায়েজ বলেন, নিষেধাজ্ঞার অধীনে কিভাবে জীবনযাপন করতে হয় তা ভালোভাবেই জানা আছে ইরানিদের। তেলের বাইরে গত কয়েক বছরে প্রধান কয়েকটি রফতানি পণ্যের বাম্পার ফলন হয়েছে ইরানের। পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরাকের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে রফতানি করা হচ্ছে সেসব পণ্য।’

ভায়েজ আরও বলেন, ‘তেল চোরাচালানিরও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে ইরানের।’

চোরাচালান নিয়ে অপর এক ইরানি কর্মকর্তা বলেন, আমরা একটা উন্নত ও সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ। আমাদের সীমান্ত বহু দেশ দিয়ে ঘেরা। আপনি যদি মনে করেন, আপনার পণ্য বাজার দরের চেয়ে কমে বিক্রি করবেন, তাহলে আপনি শত শত ক্রেতা পেয়ে যাবেন। লেনদেন পদ্ধতি নিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, অর্থের লেনদেন নিয়ে কোনো ঝক্কি নেই। আপনি চাইলে সীমান্ত দিয়ে স্থল পথে, সাগর পথে কিংবা তৃতীয় কোনো দেশের মধ্যদিয়ে লেনদেন করতে পারেন। গত কয়েক মাসে এভাবে শত শত টন পণ্য চালান করেছেন বলে জানান তিনি।সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *