জ্বলে এক লাইট চলে এক ফ্যান, বিল ২৫৪২!

জাতীয় লীড

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ এর আওতাধীন প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক গ্রাহকের চলতি মাসের বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে ব্যাপক তারতম্য দেখা দিয়েছে। এমন ভূতুড়ে (ভৌতিক) বিলের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। অনেক গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতে গিয়ে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পেয়ে বাধ্য হয়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধে এমন ভৌতিক বিল পরিশোধে বাধ্য হচ্ছেন।

উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের জগতলা গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহক খালেক হোসেন জানান, আমার মা একটি ঘরে আলাদা একটি মিটারে বিদ্যুৎ নিয়ে বসবাস করেন। তিনি শুধু একটিমাত্র এনার্জি লাইট আর একটি ফ্যান ব্যবহার করেন। গত কয়েক মাস ধরে ক্রমশ তার বিদ্যুৎ বিল বাড়তেই আছে। সর্বশেষ গত মাসের বিদ্যুৎ বিল আমরা দেখে তো হতভম্ভ হয়ে গেছি। তার এই বিলের কাগজে ২৫৪২ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে। কেমন করে এটা সম্ভব হতে পারে।

পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ এর আওতাধীন তিন লাখ গ্রাহকের বিশাল সদস্যের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিংহভাগ মানুষের রয়েছে এমন অনভিপ্রেত বিলের অভিযোগ। সেবার মানের দিক থেকে পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থানে থাকলেও গ্রাহকের এমন ভৌতিক বিলে পল্লী বিদ্যুতের সকল সাফল্য ম্লান হওয়ার পথে। কেন এমন অসামঞ্জস্য বিল হচ্ছে কর্তৃপক্ষ এর কোনো সদুত্তর দিতে পারছে না। এসব বিষয় নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে ধরনা দিলেও প্রতিকার পাচ্ছে না গ্রহক। গ্রাহকরা এমন হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে তাদের ক্ষোভ ক্রমশ দানা বেঁধে পল্লী বিদ্যুতের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবেন বলে অনেকেই মনে করছেন।

সম্প্রতি এমন পরিস্থিতিতে চাটমোহর উপজেলাসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের তোপের মুখে পড়ছেন মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জাররা। অনেক গ্রাহকের অভিযোগ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক মিটার রিডার সঠিকভাবে মিটার রিডিং না করে ইচ্ছেমাফিক একটি রিডিং বসিয়ে দিচ্ছেন। উপজেলার অনেক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও তারা না গিয়ে এমনটা করছেন বলে অনেক গ্রাহকের অভিযোগ।

রেলবাজার এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী ফিরোজ আহম্মেদ টুটুল জানান, আমি দোকান ভাড়া নিয়ে ওষুধ ব্যবসা করছি। দোকান মালিকের নামে মিটার থাকলেও মাস শেষে আমাকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়। ১টি ফ্যান আর একটি এনার্জি লাইট ব্যবহার করি। এই মিটারেই আমার পাশের দোকানে চলে একটি ফ্যান আর একটি টেলিভিশন। দুই মাস আগেও আমার সর্বচ্চ বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে গত দুই মাসে সেখানে বিদ্যুৎ বিল আসছে ৩২ শ টাকার উপরে। পল্লী বিদ্যুতে অভিযোগ দিয়েছি, তারা বলেছে বিদ্যুৎ বিলগুলো দিয়ে অভিযোগ দিন পরে ব্যবস্থা হবে।

ভৌতিক বিলের বিষয়ে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ এর জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জি. মাশফিকুর হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভৌতিক কিংবা ভূতুড়ে বিলের কোনো অস্তিত্ব নেই। গত জুলাই মাসে আমাদের এই পল্লী বিদ্যুতে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ ক্রয় করেছি। আগস্ট মাসে ক্রয় করেছি ৩ কোটি ৭০ লাখ ইউনিট। এই দুই মাসের বিদ্যুৎ চাহিদা দেখলেই বোঝা যায় জুলাই মাসের থেকে আগস্ট মাসে বিদ্যুৎ চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এত পরিমাণ বিদ্যুৎ গ্রাহক ব্যবহার করেছে বলেই আমাদের বেশি পরিমাণ ক্রয় করতে হয়েছে। কোনো গ্রাহক যদি মনে করে তার বিদ্যুৎ বিল বেশি এসেছে কিংবা অব্যাহতভাবে বেশি আসছে তাহলে অবশ্যই সেই গ্রাহককে বিদ্যুৎ অফিসে এসে অভিযোগ দিতে অনুরোধ করছি। আমাদের পক্ষ থেকে গ্রাহকের স্বার্থসংশ্লিষ্টতা বিবেচনা করে সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করব। সূত্র: কালের কণ্ঠ।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *