কলেজছাত্র পল্লব হত্যা: প্রেম, যৌনতা ও খুনের লোমহর্ষক স্বীকারোক্তি

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: দুই বন্ধুর প্রেমের সম্পর্ক ফাঁস এবং আসামাজিক কাজের ভিডিও ধারণ করায় গলাকেটে হত্যা করে ঘরের মধ্যে মাটি খুঁড়ে পুতে রাখা হয় কলেজছাত্র পল্লব দত্ত ওরফে শ্রাবণকে (১৭)।

এই ঘটনায় দায়েরকরা মামলায় আটক দুই বন্ধুর মধ্যে যশোর সদর উপজেলার জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে আলিফ আহমেদ অপূর্ব (২০) হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে এ তথ্য জানিয়েছে।

রোববার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শম্পা বসু তার স্বীকারোক্তিমূল জবানবন্দী রেকর্ড করেন। এই মামলায় আটক অপর দুই আসামি অপূর্বের নানী সাদিয়া সুলতানা (৫১) এবং বন্ধু জগন্নাথপুর গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে মারুফ ওরফে ঈশানকে (১৯) জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

আসামিদেরকে আদালতে পাঠানোর আগে রোববার দুপুরে যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ হত্যার মোটিভ সম্পর্কে সাংবাদকর্মীদের তথ্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক সার্কেল গোলাম রব্বানী, কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান, বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সঞ্জিত কুমার মন্ডলসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

প্রেসব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সদর উপজেলার বসুন্দিয়া জগন্নাথপুর গ্রামের বিকাশ চন্দ্র দত্তের ছেলে পল্লব দত্ত শ্রাবণ (১৭), একই গ্রামের ইশান ও জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের আলিফ আহমেদ অপূর্ব পরস্পর বন্ধু। এর মধ্যে নিহত শ্রাবণ শহরের সরকারি সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো। আর ঈশান ও অপূর্ব সিঙ্গিয়া কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আসামি অপূর্ব তার নানা আজিজুর রহমান মাস্টার ও নানী সাদিয়া সুলতানার (স্কুল শিক্ষক) বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করতো।

আসামি ঈশানের সাথে মুক্তা নামে এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। মুক্তাকে নিয়ে ইশান প্রায় সময় অপূর্বর বাড়িতে যেতো। তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও নিহত পল্লব মোবাইল ফোনে গোপনে ধারণ করে। বিষয়টি নিয়ে ঈশানের সাথে পল্লবের সম্পর্কের অবনতি হয়। অন্যদিকে অপূর্বর সাথে অথৈ নামে এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। পল্লব এই প্রেমের বিষয়টি অপূর্বর পরিবারকে জানিয়ে দেয়। এ কারণে পল্লবের প্রতি ক্ষিপ্ত হয় অপূর্বও। এরই ধারাবাহিকতায় অপূর্ব ও ঈশান। তারা পল্লবকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

গত ১৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পল্লব দত্ত শ্রাবণ একটি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও বইখাতা নিয়ে কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু সে কলেজে না গিয়ে বন্ধু অপূর্বর বাড়িতে যায়। সে সময় বাড়িতে অপূর্বর ছোট বোন, নানা ও নানী বাড়িতে ছিলেন না। তারা প্রথমে একটি গামছা দিয়ে পল্লবের গলায় ফাঁস দিয়ে তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে একটি ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। ঈশান পা চেপে ধরে এবং অপূর্ব চাকু দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। পরে অপূর্ব তার ঘরের মধ্যে মাটি খুঁড়ে মরদেহ একটি চটের বস্তার মধ্যে রেখে পুতে তার ওপর একটি ড্রেসিং টেবিল দিয়ে রাখে। আশেপাশে কিছু ইট দিয়ে রাখা হয়। আর পল্লবের ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন অপূর্ব রেখে দেয়। অপূর্ব ওই ঘরেই তিনদিন কাটায়। পরে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে সে পাশের অন্য একটি ঘরে থাকতো।

এদিকে পল্লব দত্ত শ্রাবণ ওই দিন বাড়িতে না ফেরায় তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজ খবর নিতে থাকে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পায়নি। পরে ২২ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় নিহতের পিতা একটি জিডি (নম্বর-১২১২) করেন। জিডির বিষয়টি তদন্ত করতে থাকে বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সঞ্জিব কুমার মন্ডল।

তিনি প্রথমে নিহতের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ উদ্ধারের চেষ্টা করেন। মোবাইলটি অপূর্বর কাছে পাওয়া যায়। পরে তাকে এ বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে অপূর্ব হত্যার বিষয়টি পুলিশকে জানায়। এই কাজে ঈশানের সম্পৃক্ততার কথা জানালে পুলিশ গত শনিবার (৯ নভেম্বর) ঈশানকেও আটক করে।

পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনা অপূর্বর নানী সাদিয়া সুলতানাও জানতেন। কিন্তু তিনি ঘটনাটি চেপে যান বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ কারণে তাকেও আসামি করা হয়েছে হত্যা মামলায়। আসামি ঈশান ও অপূর্বর নানী সাদিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আগামী বুধবার রিমান্ড শুনানি হবে বলে এসআই সঞ্জিব কুমার মন্ডল জানিয়েছেন। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *