রাজশাহী জেলা আ’লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থতা স্বীকার মেরাজ-দারার: ক্ষুদ্ধ কেন্দ্রীয় নেতারা

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে প্রায় তিন মাস আগে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর এ সম্মেলনে চার সদস্যের কমিটি করে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে সভাপতি হন সাবেক এমপি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা এবং সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা সাধারণ সম্পাদক হন।

এছাড়া বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু এবং রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু তিন মাস অতিবাহিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন নতুন কমিটি চার সদস্য। এতে ক্ষুদ্ধ কেন্দ্রীয় নেতারা।

গত ১ মার্চ নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের তোপের মুখে পড়েন জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। প্রকাশ্যে তাদের সমালচনা করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার জন্য আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এটা করতে না পারলে এ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দেয়া হবে।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এ ব্যাপারে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ১৫ দিনের মধ্যে নতুন কমিটি গঠিত না হলে জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে কেন্দ্র থেকে নতুন কমিটি দেয়া হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রমতে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন দিয়ে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে স্পষ্টতই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন জেলার দুই শীর্ষ নেতা। কমিটিতে নিজেদের লোক ঢোকানো নিয়েই এ দ্বন্দ্ব। রাজশাহীর এমপিরাও কমিটিতে নিজেদের লোক ঢোকাতে মরিয়া। চতুর্মুখী চাপে কাহিল জেলা কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় পিছিয়ে যাচ্ছে কমিটি গঠনও।

এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে জেলার ৮ উপজেলা এবং ১৪টি পৌরসভার নেতা বা সংগঠকদের সেভাবে যোগাযোগ নেই। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে।

সূত্রমতে, সভাপতি মেরাজ মোল্লাকে সমর্থন করছেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি প্রকৌশলী এনামুল হক এবং রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমান। অপরদিকে দারার প্রতি সমর্থন রয়েছে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের এমপি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের। সূত্র: পদ্মা টাইমস।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা কমিটি গঠনে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, কমিটি গঠন করতে না পারা আমাদের ব্যর্থতা। একটি পক্ষ অনুপ্রবেশকারি হাইব্রিড নেতাদের জেলা কমিটিতে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। তারা নিজেদের লোকজন কমিটিতে রাখতে চাইছে। ফলে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

তবে কারা জটিলতার সৃষ্টি করছে- তাদের নাম বলতে অস্বীকৃতি করেন মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে আসা লোকজনকে জেলা কমিটিতে ঠাঁই দেয়া হবে না। বিএনপি-জামায়াতে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেরই আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এরা কমিটিতে আসতে চাইছেন। তবে জীবন থাকতে জেলা কমিটিতে তাদের আসতে দেব না। আর আগামী ১৫ দিনের আগেই জেলা কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা সভাপতির সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই দাবি করে বলেন, অন্য দল থেকে আসা নেতাদের জেলা কমিটিতে স্থান দেয়ার জন্য কোনো চাপ নেই। আমরা একসঙ্গেই কাজ করছি। জেলা কমিটি গঠনে একটু সময় লাগছে। তারপরও আমরা আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো সম্ভব হবে।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *