বাঘায় পদ্মায় বিলীন আলো ছড়ানো আরেকটি স্কুল

রাজশাহী লীড শিক্ষা

বাঘা প্রতিনিধি: এবছর পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়ে ৩৭ বছর আগের প্রতিষ্ঠিত চরকালিদাসখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। গত জুন মাসে বিদ্যালয়ের পাকা ভবনের নির্মাণ সামগ্রী বিক্রি করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। .৫০ শতাংশ জমিতে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির পাঁকা ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে একতলা ও ২০১১ সালে দোতলা। এরই মধ্যে ভাঙনের কবলে পড়েছে, পদ্মার চরাঞ্চলে আলো ছড়ানো আরেকটি বিদ্যালয়।

লক্ষীনগর সরকারি প্রাথমিক এই বিদ্যালয়টির নির্মাণ সামগ্রীও বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে,২লক্ষ ৩৯ হাজার ৯৯৮ টাকায়। গত কয়েক বছর আগে ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়টির দোতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। ৩৩ শতাংশ জমির উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করা হয় ১৯৮৭ সালে। ঠিকানা হারানো বিদ্যালয়টি এখন কোথায় নিয়ে যাবেন সেই চিন্তা পেয়ে বসেছে প্রতিষ্ঠান প্রধানের।

প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান জানান, চোখের সামনে বিদ্যালয়টি পদ্মায় তলিয়ে যাচ্ছে। শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম, কিছুই করতে পারলাম না। বুধবার (২৩-০৯-২০)সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নিলাম ডাকে বিক্রি করা ভবনটি ভেঙে নিচ্ছেন ক্রেতা। আর প্রায় ১৬ গজ ভাঙলেই নদী গর্ভে চলে যাবে বিদ্যালয়টির জমিও।

শুধু ওই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়,গত ৩ দশকে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে,একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ আরো ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পুরোনো এই স্কুলের সঙ্গে চরাঞ্চলের মানুষের ছিল অনেক মধুর স্মৃতি। বিদ্যালয় গুলোর অবস্থান রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়নে। পদ্মা নদীর কারণে বিচ্ছিন্ন বাঘা উপজেলার অবিভক্ত চকরাজাপুর ইউনিয়ন। দুর্গম ওই চরের চারদিকে পদ্মা নদী।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৩৫ সাল থেকে দুর্গম এই পদ্মার চরের মধ্যে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে, ৯টি প্রাথমিক ও দু’টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এরমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, চকরাজাপুর, পলাশি ফতেপুর, ফতেপুর পলাশি, লক্ষ্মীনগর, চকরাজাপুর, পশ্চিম চরকালিদাস খালী, পূর্বচকরাজাপুর এলাকায়। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে চকরাজাপুর ও পলাশি ফতেপুর এলাকায়। ১৯৩৫ সালে প্রথম প্রতিষ্ঠিত স্কুল হলো- পলাশি ফতেপুর ও দ্বিতীয়টি হলো ১৯৫৫ সালে চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৭৩ সালের পরবর্তী সময়ে চকরাজাপুরসহ অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৯৭৮ সালে চকরাজাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পরে পলাশিফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।

২০০৫ সালে ভাঙনের কবলে পড়ে চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরবর্তী সময়ে ভাঙনের কবলে পড়ে ঠিকানা হারায় পলাশিফতেপুর, আতারপাড়া, চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়। এ বছর গেল চরকালিদাসখালী, লক্ষীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় । চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার জানান,১৯৯৮ সালে ভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয় ও চকরাজাপুর বাজার। সে বছর সরিয়ে নেওয়ার পর, ২০১২ সালে ভাঙনের কবলে পড়ে ওই বিদ্যালয় ও বাজার। কালিদাশখালি মৌজায় সরিয়ে নেওয়ার পর ২০১৮সালে আবারো ভাঙনের কবলে পড়ে ছাদ বিশিষ্ট বিদ্যালয়ের পাঁকা ভবন ও বাজারটি।

জানা গেছে,২০০০ সালে উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের মীরগঞ্জ,পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর হয়ে গোকুলপুর ,কিশোরপুর পর্যন্ত প্রায় ৭ কিঃ মিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। তার পর থেকেই প্রতিবছর ভাঙতে থাকে পদ্মা। ২০০৪ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন কবলিত জায়গাগুলোতে বালির বস্তা দিয়ে তা ঠেকানোর পর ২০০৫ সালে উদয়নগর বর্ডার গার্ড (বিজিবি)ক্যাম্পসহ চৌমাদিয়া গ্রামটি রক্ষার জন্য ব্ল¬ক বসায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। সে ব্লক বসানোর কয়েকদিন পর সেগুলো নদীতে ভেসে যায়।

চকরাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল আযম জানান, গত তিন দশকে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদীতে বিলীন হয়ে যায় হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসত ভিটা,রাস্তা-ঘাট,বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্টান,মসজিদসহ কবরস্থান। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে সর্বহারা হয়েছে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। এই সব পরিবারের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে পদ্মা। এদের অনেকেই বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসত বাড়ী গড়ে তুলে বসবাস করছেন।

পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ বলেন, সংসদ সদস্য (বাঘা-চারঘাট) ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব শাহরিয়ার আলমের সার্বিক সহযোগিতায় ৭২২ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২.১ কিলোমিটার দৈর্ঘের বাঁধ নির্মান প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষে বাঁধ নির্মান কাজ শুরু হবে। এ কাজ শুরু হলে ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে পদ্মা পাড়ের মানুষ।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোকলেছুর রহমান বলেন, ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় গত বছর থেকেই বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে রক্ষা করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এর সমাধান আসবে।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *