সেই ওসির বিরুদ্ধে এবার নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে কুপ্রস্তাবের অভিযোগ

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: সিআইডি পুলিশের এক নারী পরিদর্শক রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণের বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাবের অভিযোগ করেছেন। হোসেনে আরা বেগম পুতুল নামের ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা বুধবার বিকালে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে প্রতিকার চেয়ে তিন পাতার অভিযোগ দিয়েছেন।

জানা গেছে, নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে দেয়া কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার স্বামীকে জামায়াত-শিবির কর্মী হিসেবে গ্রেফতার করে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানায়। সিআইডি ইন্সপেক্টর ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে সারদা পুলিশ ট্রেনিং একাডেমিতে সংযুক্ত রয়েছেন।

বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিবারণ চন্দ্রের বিরুদ্ধে কমিশনার বরাবর কুপ্রস্তাব দেয়ার একটি তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা। এ ঘটনায় রাজশাহী মহানগর পুলিশের মাঝে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে অপর পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব আলমের সঙ্গে বিয়ে হয়। বর্তমানে দামকুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পূর্বে তিনি বোয়ালিয়া থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। বিয়ের পর শারিরিক ও মানুষিক অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ২০১৮ সালে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।

এরপর পারিবারিকভাবে মাহবুব হোসাইন নামের এক সাংবাদিককে তিনি বিয়ে করেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী সংবাদ নামের স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করেন।

অভিযোগে জানা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব আলম বোয়ালিয়া থানায় ওসি তদন্ত হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে তাদের পারিবারিক বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিবরাণ চন্দ্র বিষয়টি জানতেন। পারিবারিক বিষয় নিয়ে মাঝে মধ্যেই ওসি নিবারনের সঙ্গে ওই নারীর কথা হতো। কথা বলার সময়ে ওসি নিবারণ চন্দ্র বলতে যা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তুমি সুন্দর, অনেক স্মার্ট, তোমাকে আমার অনেক ভালো লাগে, তোমার মত মেয়ে পেলে আমার জীবনে আর কিছু লাগেনা’ ইত্যাদি।

ওসির এ ধরনের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় আবার হুমকিও দিতেন। তিনি বলেন, ‘তুমি মাহবুবের সঙ্গে কেমনে সংসার করো তা দেখে নেব। তুমি আমার প্রস্তাব মেনে নাও তোমার সংসার সুন্দর ও সুখের হবে।’

ওই নারী কর্মকর্তা বলেন, সারদা থাকার পরও তিনি আমাকে কুপ্রস্তুাব ও হুমকি দিতেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন তার প্রস্তাবে রাজি হলে কোন সমস্যা নাই, কিছুই করবে না সে।

অভিযোগে বলা হয়, এভাবেই চলে আসছিল। কিন্তু গত ১৬ মার্চ রাত দেড়টার দিকে তার স্বামী মাহবুব হোসাইন তাকে ফোন করেন বাসায় পুলিশ আসছে। এরপর তিনি ওসি নিবরাণ চন্দ্র ও ওসি তদন্ত আব্দুল লতিফকে ফোন করেন। কিন্তু রাতে কেউ ফোন রিসিভ করেননি। পরদিন সকালে তিনি থানায় আসেন। ডিউটি অফিসারের নিকট জানতে পারেন তার স্বামীকে থানার এসআই আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ নিয়ে এসেছে। এরপর তিনি ওসি নিবরাণ চন্দ্রের কাছে গেলে ওসি নিবারণ চন্দ্র ওই পুলিশ কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই তো তুমি আসলা, জলঘোলা করেই আসলা, তুমি বসো আমি একটু কমিশনার স্যারের সাথে কথা বলে তোমার স্বামীকে ছেড়ে দেব।’

কিছুক্ষণ পরে তিনি এসে ওই নারী কর্মকর্তার নাম ধরে বলেন, ‘দেখেতো আমাকে সুন্দর লাগছে না, তোমাকেও সুন্দর লাগছে’।

ওসির এমন মাতলামো আচরণে নারী পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিবাদ করলে ওসি নিবরাণ চন্দ্র বলেন, ‘আরে তোমার স্বামী তো শিবির করে, তোমার স্বামীকে কে বাঁচাবে, আর কমিশনার ! আমি যা বলবো কমিশনার কি তার বাইরে যাবে নাকি ? এখন কি করবা স্বামী বাচাবা না আমার কথা রাখবা ’ ওসির এমন আচরণে তিনি দ্রুত ওসির কক্ষ ত্যাগ করেন।

ভুক্তভোগী নারী কর্মকর্তা আরো বলেন, পরে ওসি আমার স্বামীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেয়। বর্তমানে তার স্বামী জেলহাজতে রয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘তার স্বামী কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। তার নামে থানায় কোন জিডিও নাই। সে সুনামের সঙ্গে সাংবাদিকতা করে। আমি সবকিছু জেনেই তাকে বিয়ে করেছি। বিয়ের পর থেকে সুখে শান্তিতে বসবাস করছি। কিন্তু ওসির প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে আজ তাকে (স্বামী) মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। একেবারে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সে এ কাজ করেছে।”

তিনি বলেন, ‘আমি একজন পুলিশের নারী কর্মকর্তা। আমি ওসির নিকট থেকে এমন আচরণ পেলে সাধারণ মানুষ কি আচরণ পাবে। আমি ওসি নিবারণ চন্দ্রের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করেছি। আমি তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থাও নেব।’

এদিকে এ বিষয়ে ওসি নিবারণ চন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘উনার স্বামী শিবিরের রাজনীতির করে। সে খড়খড়ি এলাকার শিবিরকে সংঘঠিত করার কাজ করছিল। এ কারনে তাকে আমরা গ্রেফতার করেছি।’

নারী পুলিশ কর্মকর্তার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ তার স্বামী কে না ছাড়ার কারণে সে এই অভিযোগ করেছে। আমি কেন তাকে কুপ্রস্তাব দেব ?

 

স্ব:বা/না

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *