স্টাফ রিপোর্টার : নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের বাড়িয়েছে নাভিশ্বাস। সংসারের যাতাকলে জীবন টেকানো কষ্টকর। চালের দামে কেজি প্রতি ৪ থেকে ৯ টাকা বেড়েছে। আয় বাড়েনি, বেড়েছে শুধু ব্যয় এমনটি জানালেন সাধুর মোড়ের রিকসা চালক হিমেল।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) নগরীর সাহেব বাজার চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, নগরীর খুচরা বাজারে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতিতে ৩ থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। জ্বালানি তেল বৃদ্ধির আগে মিনিকেটের কেজিপ্রতি দাম ছিল ৬২ টাকা যা বর্তমানে বেড়ে ৬৯ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, আটাশ চাউলের কেজিপ্রতি দাম ছিল ৫৮ টাকা যা এখন ৬৫ টাকা, নাজিরশাইলের কেজিপ্রতি দাম ছিল ৭৮ টাকা যা বর্তমানে ৮৫ টাকা, বাসমতি চাউলের কেজিপ্রতি দাম ছিল ৭৬ টাকা যা এখন ৮৫ টাকা এবং মোটা চাউল কেজিপ্রতি দাম ছিল ৪৬ টাকা যা বর্তমানে ৫০ টাকা দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজারে পৃথিবী সরকার পিয়াস নামের একজন টিউশন মাস্টার চাল কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকায় ৩ জনের পরিবার দিদারসে চলে যেত এক সময়। এখন, এই্ ভাবনা আমাদের কাছে পুরোনো প্রবাদ প্রবচন হয়ে গেল। পণ্যের ফর্দ কমিয়ে দিয়েছে। টাকার পরিমাণ বাড়াতে হচ্ছে তিনগুণ। আয়ের তুলনায় ব্যয় হচ্ছে প্রচুর। কার কাছে গিয়ে এর পরিত্রাণ পাবো?
এদিকে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সব ধরনের চালে কেজিপ্রতি দাম বেশি নিচ্ছে বিক্রেতারা। সব চালেই কেজিপ্রতিতে ৪ থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে এখন। বাজারে চালের দাম বেড়েছে কিন্তু সে তুলনায় আমাদের আয় বাড়েনি। তাই বাজারে চাল কিনতে খুব অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
রাশেদুল নামের একজন জানান, ভাগ্যেস বাসাটা ছিল আমাদের। বাসা ভাড়ার টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। আমাদের দেশে কিভাবে চালের দাম এত বাড়ে সেটা বুঝতে পারলাম না। নিম্ন আয়ের মানুষের চেয়ে মধ্য আয়ের মানুষই আজ বিপদে। চালের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মনিটরিং জোরদারসহ আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা খুচরা বাজারে রাখতে হবে।
এদিকে দেশে মণপ্রতি ধানের দাম বেড়ে যাওয়া এবং জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বলছেন নগরীর খুচরা ও পাইকারি চালের ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর থেকেই চালের দাম কেজি ও বস্তাপ্রতি বেড়েছে। খুচরা বাজারে কেজিপ্রতিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৯ টাকার মতো। চালের বড় ৮৪ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছি।
চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশে চাল উৎপাদনে কোনো ঘাটতি নেই, কৃত্রিম সংকট নেই। মূলত বর্ষার কারণে এবার অনেক ধান নষ্ট হয়েছে, বাইরে থেকে চালের আমদানি কম হচ্ছে এবং সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের উৎপাদন খরচ একটু বেশি। আর এখনতো জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ফলে চাল আমদানি করতে পরিবহন খরচও আরো বেড়ে গেছে। তাই বাজারে বিভিন্ন চালের দাম বেড়ে গেছে। সরকার সামনে সেপ্টেম্বর মাস থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দিলে চাপটা অনেকাংশেই কমে যাবে। তখন চালের দামটা কমে আসবে।
অপরদিকে দেশে মণপ্রতি ধানের দাম, সারের দাম এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাজারে চালের দাম বেড়েছে বলে দুষলেন নগরীর সাহেববাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
নগরীর পাইকারি ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, দেশে মণপ্রতি ধানের দাম বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগে ধানের দাম মণপ্রতি ছিল ১৫০০ টাকা যা এখন ১৮০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আবার চালের পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। সেজন্য চালের পাইকারি রেট টাও এখন বেশি। যার ফলে বাজারগুলোতে চালের দাম বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, আটাশ চালের বড় ৮৪ কেজির বস্তার পাইকারি দর ছিল আগে ৪৮০০টাকা যা এখন বেড়ে ৫২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৫০ কেজির চালের বস্তায় বেড়েছে ২৫০ টাকা। আগামীতে চালের দাম আরও বাড়তে পারে আবার কমতেও পারে সেটা এখন বলা যাচ্ছে না।
স্ব.বা/ম