বাঘায় সেই সাংবাদিকের ভিসারায় রিপোর্টে পাওয়া গেছে কীটনাশক বিষ

গণমাধ্যম লীড

বাঘা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাঘায় কীটনাশক বিষক্রিয়ায় সেই সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। ভিসারায় রিপোর্টে অর্গানো ফসফরাস যৌগ (কীটনাশক বিষ) পাওয়া গিয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়,ময়না তদন্তের জন্য সুরতহাল রিপোর্র্ট শেষে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য শরীরের বিশেষ অংশ ঢাকায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। রাসায়নিক পরীক্ষক ভিসারায় রিপোর্টে অর্গানো ফসফরাস যৌগ (কীটনাশক বিষ) পাওয়া গিয়েছে বলে রিপোর্ট দিয়েছেন। বাঘা থানার ওসি মহসীন আলী কীটনাশক বিষপ্রয়োগে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর পর ১ ফেব্রুয়ারি রাজপাড়া থানায় ইউডি মামলা দায়ের করা হয়।

জানা যায়,৩০ জানুয়ারী রাতে মনিগ্রাম বাজারের হোমিও ডাক্তার মাজিদুল করিমের (নিরাময় হল) চিকিৎসালয়ে সেলিমকে ডেকে নিয়ে যায়, মিঠন সহ আরো দুই যুবক। সেখানে কৌশলে টাইগার ব্যান্ডের (কোল্ড ডিংস) কোমল পানীয়র সাথে বিষাক্ত জাতীয় দ্রব্য খাওয়ানো হয়। পরে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। তার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৩১ জানয়ারি সকালে সেলিমের স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন প্রথমে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। আশংকাজনক অবস্থায় বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌণে ১২টায় সাংবাদিক সেলিম মৃত্যু বরণ করেণ।

সেলিমের স্ত্রী সোনিয়া বেগম জানান, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তির আগে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সন্ধ্যা আনমানিক সাড়ে ৭টার দিকে সাময়িক সময়ে কথা বলার সময় কয়েকজন লোকের উপস্থিতিতে আমাকে বলে গিয়েছে, মিঠনসহ অজ্ঞাত আরো দুইজন যুবক তাকে হোমিও চিকিৎসক মাজিদুলের চিকিৎসালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর হোমিও চিকিৎসক মাজিদুল টাইগার জাতীয় (কোল্ড ডিংস) ব্যান্ডের তরল পানীয় খাওয়ার জন্য দেয়।

খেতে না চাইলে অন্যরা অনুরোধ করে। পরে মাজিদুল সেই টাইগার জাতীয় (কোল্ড ডিংস) ব্যান্ডের তরল পানীয় হাতে দিয়ে পাণ করায়। ৩০ জানয়ারি রাতে বাড়িতে ফিরে খাবোনা বলে শুয়ে পড়ে। ৩১ জানুয়ারী সকালের দিকে বমি করে। পরে সমস্ত শরীর ঘেমে যায়। স্থানীয় চিকিসৎক মানিককে বাড়িতে ডেকে চিকিৎসা দওেয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হলে ডাক্তার দুলাল ভান্ডারীকে নিজ বাড়িতে ডাকা হলে জরুরি চিকিৎসার জন্য স্খানীয় হাসপাতালে নিতে বলেন। তার কথা মতে আতœীয় স্বজনকে সাথে নিয়ে সকাল আনুমানিক পৌণে ১২ টার দিকে বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেন। সেখানকার চিকিৎসক আশংকাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে মৃত্যু বরণ করেন তার স্বামী সেলিম আহম্মেদ।

তার স্বামীকে পরিকল্পিভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে মৃত্যুর আগে স্বামীর দেয়া জবানবন্দিতে অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছিলেন তিনি। পরে ময়না তদন্ত ও ভিসারায় রিপোর্টের মাধ্যমে কীটনাশক বিষপাণে হত্যার বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পেরেছেন। মৃত্যুর পরে জহুরুল ও তুহিন নামের দুই ব্যক্তি ৩০ জানয়ারি রাতে হোমিও চিকিৎসক মাজিদুলের চিকিৎসালয়ে সেলিম সহ অন্যদের বসে থাকতে দেখেছিলেন বলে তারা সেলিমের স্ত্রীকে জানিয়েছেন। সাংবাদিক এসএম সেলিম আহম্মেদ ভান্ডারী জাতীয় দৈনিক যায়যায়দিন ও স্থানীয় দৈনিক রাজশাহীর সংবাদ পত্রিকাসহ অনলাইন পোর্টাল নিউজ পদ্মা টাইমসের বাঘা উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন । সে উপজেলার মনিগ্রামের মৃত সামসুল হক ভান্ডারীর একমাত্র ছেলে।

বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আব্দুল ওয়াহাব বলেন, মঙ্গলবার সেলিমের স্ত্রী সোনিয়া বেগম বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ভিসারায় রিপোর্টে অর্গানো ফসফরাস যৌগ (কীটনাশক বিষ) এর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেছেন। এর আগে হোমিও চিকিৎসক মাজিদুলকে গ্রেফতার করে ৫৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। বর্তমানে হোমিও ডাক্তার মাজিদুল করিম জামিনে মুক্ত রয়েছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *