স্কুলছাত্রী পলিকে ধর্ষণের পর হত্যা, বিচার পাবেতো পরিবার!

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: রেবেকা সুলতানা পলি ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। বয়স মাত্র ১৩। এই বয়সেই নির্মমতার শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে তাকে। এখন বিচার চাইতে গিয়েও নির্মমতার শিকার তার পরিবার।

পরিবারের অভিযোগ, বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে বাসায় ঢুকে পলিকে ধর্ষণ ও হত্যার পর লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর থানার বুড়ি পুকুর পাড় এলাকার খান টাওয়ারে।

অভিযুক্তরা পুলিশের সাথে সমঝোতা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। পুলিশের সমঝোতার প্রস্তাব, মামলা নিতে অনিহা- সব কিছুই ঘটেছে পলির পরিবারের সাথে। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশ মামলা নিয়ে মুল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।

ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায়, খান টাওয়ারের নিচতলায় একটি ছোট্ট বাসায় কলেজ পড়ুয়া পুত্র রাসেল আর স্কুল পড়ুয়া কন্যা পলিকে নিয়ে থাকতেন স্বামী পরিত্যাক্তা সকিনা খাতুন। গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করে সংসার চালাতেন এই মা। চাকরির কারণে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা-৮টা পর্যন্ত তিনি বাসার বাইরে থাকেন। টিউশন কোচিং-এর কারণে বেশি সময় বাইরে থাকতে হয় পুত্র রাসেলকেও। এই সময়টাতে বাসায় একা-ই থাকতো নগরীর হালিশহর আহমদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী পলি।

পলির মা সকিনার অভিযোগ- কুনজর পরে বাড়ির বাড়িওয়ালা আবুল কাশেম খানের। পঞ্চাশোর্ধ বয়সী এই ব্যাক্তি বিভিন্ন সময় পলিকে বাসায় একা পেলেই উত্যক্ত করতো।

ডেটলাইন ২ অক্টোবর: এদিন সন্ধ্যায় পলির মা ও ভাই বাইরে থেকে বাসায় ফিরে দেখতে পান বাসার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে পেছনের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তারা দেখতে পান পলি বাসার ফ্যানের সাথে ফাঁসিতে ঝুলছে। ঠিক একই সময়ে সামনের দরজা খুলে কেউ একজনকে বাইরে চলে যেতে দেখেন তারা। পরে বন্দর থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পলির লাশ উদ্ধার করে।

পলির ভাই রাসেল রাইজিংবিডিকে জানান, পুলিশ এসে লাশ নামিয়ে বোনের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। এই সময় পলির পিঠে আঘাতের চিহ্ন, ঠোঁটে কামড়ের দাগ, গলায় নখের দাগ, মুখে হাতের ছাপ, হাতের কব্জি ভাঙ্গা এবং তালুতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। কিন্তু সুরতহাল প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা এসব তথ্য রিপোর্টে রহস্যজনক কারণে উল্লেখ করেননি। এই সময় পলির পরিবারের পক্ষ থেকে বাড়িওয়ালা আবুল কাশেম খানের ব্যাপারে অভিযোগ করলে পুলিশ বাড়িওয়ালাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। লাশ পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ মর্গে।

রাসেল অভিযোগ করেন, এই ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ প্রথমে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। আবার মামলা না করে বাড়িওয়ালার সাথে সমঝোতা করতে নগদ ১৪ লাখ টাকা নেওয়ার জন্যও প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে পলির মা ও ভাই সমঝোতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে মামলা নিতে পুলিশকে জোড়াজুড়ি করেন। এরপরও প্রথমে পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে একাধিক সংবাদকর্মীর মাধ্যমে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের পর পুলিশ মামলা গ্রহণ করে। এই মামলায় বাড়ির মালিক আবুল কাশেম খানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরে তাকে দুই দিনের রিমান্ডে আনে পুলিশ।

পলির ভাই বলেন, ‘আমার বোন কোনভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। তার আত্মহত্যার কোন কারণ ঘটেনি। তাকে ধর্ষণের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’

মামলা নিতে না চাওয়া, সমঝোতার প্রস্তাব ইত্যাদি অভিযোগ অস্বীকার করে সিএমপির বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই পেশাদারিত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছি। মামলাও হয়েছে। তারা যাকে সন্দেহ করেছে তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে আনা হয়েছে। মামলা নিতে না চাওয়া, আপসের প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি সত্য নয়।

ওসি জানান, পলিকে হত্যা করা হয়েছে নাকি সে আত্মহত্যা করেছে তা ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে জানা যাবে।

এদিকে পলিকে হত্যার অভিযোগে রোববার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র/ছাত্রীসহ বিভিন্ন সংগঠন। এতে পলির মা- ভাইসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পলিকে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে।

পলির ময়নাতদন্ত কিংবা সুষ্ঠু বিচার নিয়ে কোনো কারসাজি হলে ছাত্র-ছাত্রীরা রাজপথে নামারও হুঁশিয়ারি দেন ।

এদিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ছাড়াও পলির স্কুল হালিশহর আহমদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীরাও বিদ্যালয় চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। সূত্র: রাইজিংবিডি।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *