স্বদেশ বাণী ডেস্ক: কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে স্ত্রীর কাছে ডিআইজি প্রিজন (হেডকোয়ার্টার্স) বজলুর রশীদের ঘুষের কয়েক কোটি টাকা পাঠানোর ঘটনায় কারা প্রশাসনজুড়ে তোলপাড় অবস্থা বিরাজ করছে। এমনটিই জানিয়েছে কারাগারের একাধিক সূত্র।
অপরদিকে কারাগারে ঘুষের টাকার এমন ছড়াছড়ি নিয়ে জনমনে নানা কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ঘুষের টাকা পাঠানোর বিষয়ে প্রতিবেদকের কাছে উচ্চপদস্থ কারা কর্মকর্তার সরল স্বীকারোক্তির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে অনেকে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
কেউ কেউ বলেন, কারাগারের ঘুষ-বাণিজ্য সমূলে উচ্ছেদ করতে না পারলে ভবিষ্যতে এটি মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। এ জন্য দু-একজন কারা কর্মকর্তাকে দায়সারা শাস্তি দিয়ে লাভ হবে না। যাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে কারাগারগুলোতে রমরমা ঘুষ বাণিজ্য চলছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ‘বেপরোয়া ডিআইজি প্রিজনের ঘুষ-কাণ্ড, স্ত্রী কুরিয়ার সার্ভিসে নেন কোটি কোটি টাকা’ শিরোনামে রোববার যুগান্তর পত্রিকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে এত বড় ঘুষ কারবারের চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করাসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটি না হওয়ায় অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
সূত্র জানায়, শুধু শোকজ করেই দায় সেরেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বসে আছেন সচিবের দেশে ফেরার অপেক্ষায়। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার সকালে সরকারি সফরে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার আগে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
জানা গেছে, কারাগারের এসব ঘুষের টাকার ভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কোনো কোনো কর্মকর্তার পকেটেও নিয়মিত আসে। এ জন্য তারা দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে প্রকারান্তরে তাদের পক্ষ নেয়ার চেষ্টা করে। শিগগির এদের মুখোশও খুলে দেয়া হবে বলে কারাগারের কয়েকটি সূত্র গতকাল প্রতিবেদককে নিশ্চিত করে।
জানা গেছে, রোববার যুগান্তরে ঘুষ-দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা অধিদফতরে পৃথক বৈঠক হয়। এরপর বিকালে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশা বজলুর রশীদকে শোকজ করেন। যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। চিঠির স্মারক নং : ১৩৪৬।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (কারা অনুবিভাগ) সৈয়দ বেলাল হোসেন রোববার রাতে যুগান্তরকে বলেন, সচিব স্যার দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশীদের বিষয়ে যুগান্তরে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তার বিস্তারিত সচিবকে জানানো হয়েছে। তিনি আগামীকাল (আজ সোমবার) অফিস করবেন। এরপরই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত সচিব স্যার নেবেন।
কারা অধিদফতরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা রোববার রাতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ডিআইজি বজলুর রশীদই ছিলেন কারা অধিদফতরের তথ্য দেয়ার জন্য নিদিষ্ট কর্মকর্তা। তার নিজের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আইজি প্রিজন রীতিমতো বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। আইজি প্রিজন যোগদান করেছেন মাত্র কিছুদিন হল। এর মধ্যে কারা অধিদফতরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রকাশের পর তিনি ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। সূত্র: যুগান্তর।
স্ব.বা/শা