এমপি বুবলীকে স্থায়ী বহিষ্কার করল বাউবি

জাতীয় শিক্ষা

স্বদেশ বাণী ডেস্ক:নরসিংদীর সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলীর সব পরীক্ষা ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল এবং তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)।

বাউবি অধীনে অনুষ্ঠিত বিএ পরীক্ষায় জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাউবি প্রশাসন।

একইসঙ্গে জালিয়াতির বিষয়টি আরও তদন্তে কলেজের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রোববার সকালে বাউবি ভিসি অধ্যাপক ড. এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

গণমাধ্যম ও নরসিংদী জেলা প্রশাসনের এক চিঠির ভিত্তিতে আজ (রোববার) বুবলীর বিষয়ে বাউবির জরুরি সভা ডাকা হয়।

সভায় বুবলীর সব পরীক্ষা ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল, তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং ঘটনা তদন্তে বাউবির পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আসাদুজ্জামান উকিল, স্টুডেন্ট সাপোর্ট সার্ভিসেস ডিভিশনের পরিচালক ড. আনিস রহমান এবং ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক আহমেদ সেলিম।

সভায় ভিসি এম এ মান্নান বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন বুবলী ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। পর পর আটটি পরীক্ষায় তার জায়গায় অংশ নেন অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে শেষ দিনের পরীক্ষায় হলে হাতেনাতে বুবলীর এ জালিয়াতি ধরা পড়ে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে পরীক্ষা থেকে তাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

বুবলীর এ কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করেছে জানিয়ে সভায় আরও বলা হয়, বুবলীর এ ধরনের কর্ম একটি ঘৃণিত ও গর্হিত কাজ। বুবলী বাউবির কোনো প্রোগ্রামে আর ভর্তি হতে পারবেন না।

এছাড়া বুবলীর হয়ে যারা পরীক্ষা দিয়েছেন তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবেও বলে জানানো হয় সভায়।

এছাড়াও বুবলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে জানানো হয়েছে সেই সভায়।

ভিসি এম. এ মান্নান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানীয়ভাবে যদি রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে টিকবে না। সেখানে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণও করা সম্ভব হবে না।

এ সময় ভিসি নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের সমালোচনা করেন।

ভিসি বলেন, তিনি ওই পরীক্ষার সমন্বয়ক। পরীক্ষা চলাকালে তিনি কখনও কেন্দ্রে যাননি। অথচ পরীক্ষা চলাকালে তার প্রতিদিনই কেন্দ্রে পরিদর্শনের কথা।

ভিসি প্রশ্ন করেন, কারো প্রবেশপত্র হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কেন্দ্রে জানালে তাকে ডুপ্লিকেট প্রবেশপত্র সরবরাহ করা হয়। কিন্তু জিডি কপি দিয়ে এভাবে পরীক্ষা কীভাবে নিল সেই কলেজ?

কলেজের পক্ষ থেকে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা হয়নি বলে মন্তব্য করেন বাউবি ভিসি।

এর আগে গণমাধ্যমের খবর, শনিবার তামান্না নুসরাত বুবলীকে গণভবনে তলব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তবে তিনি গণভবনে গিয়েছেন কিনা বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেট লাভের আশায় প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেন নরসিংদীতে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলী।

নিজে পরীক্ষা না দিয়ে পর পর ৮টি পরীক্ষায় অংশ নেয় তার পক্ষে প্রক্সি পরীক্ষার্থীরা। বিএ পরীক্ষার শেষ পরীক্ষা দিতে গিয়ে হলে হাতেনাতে ধরা পড়েন এশা নামে এক শিক্ষার্থী। তাই তাকে পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

একই সঙ্গে জালিয়াতির বিষয়টি অনুসন্ধানে কলেজের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মহিলা এমপি বুবলীর এই দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসলে এলাকায় নিন্দা সমালোচনার ঝড় উঠে।

জানা গেছে, নরসিংদী ও গাজীপুর আসনের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলী। তিনি নরসিংদী পৌরসভার প্রয়াত মেয়র ও সাবেক শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেনের স্ত্রী।

তার দেবর কামরুজ্জামান কামরুল নরসিংদী পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি। অপর দেবর শামীম নেওয়াজ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী বুবলী এইচএসসি পাস। উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেট লাভের আশায় তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হন। এ পর্যন্ত চারটি সেমিস্টারের ১৩টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

অভিযোগ রয়েছে ১৩টি পরীক্ষার একটিতেও স্বশরীরে অংশ নেননি তিনি। তার পক্ষে একেক সময় একেকজন অংশ নিয়েছে। আর এমপির প্রক্সি প্রার্থীকে সুবিধা দিতে পরীক্ষাকে কেন্দ্রসহ হল পাহারায় থাকতেন এমপির লোকজনসহ ক্যাডার বাহিনী। তাই ভয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেউই মুখ খুলতে পারে না। সর্বশেষ শুক্রবার পরীক্ষা দিতে এসে প্রক্সি পরীক্ষার্থী এশা হাতেনাতে ধরা পড়েছেন।

প্রক্সি পরীক্ষার্থী এশা নিজেকে তামান্না নুসরাত বুবলী হিসেবে দাবি করেন। তবে ছবি সংবলিত প্রবেশপত্র দেখাতে পারেনি। এমপি তামান্নার পরীক্ষা কিভাবে দিচ্ছেন তা জানতে চাইলে তার কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেনি প্রক্সি পরীক্ষার্থী এশা।

ভুয়া বা প্রক্সি পরীক্ষায় অংশ নেয়া একজন পরীক্ষার্থীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার বিধান থাকলেও এর কিছুই করেননি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। অনেকটা বীরদর্পেই হল থেকে বেরিয়ে যায় ওই পরীক্ষার্থী।

নরসিংদী সরকারি কলেজ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক/হল ইনচার্জ প্রফেসর শফিকুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার্থীর ছবি সংবলিত প্রবেশপত্র ছিল না। প্রবেশপত্র নাকি হারিয়ে গেছে। তাই থানার জিডি কপি নিয়ে পরীক্ষা হলে পরীক্ষায় অংশ নিতে আসছে। তাই আমরা চিনতে পারিনি।

বিষয়টি জানার পর প্রক্সি পরীক্ষার্থী এশাকে আটক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দায়িত্বে ছিল একজন পুলিশ সদস্য। তাই কথা বলার ফাঁকে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তবে পরে অনেক পুলিশ সদস্যই কলেজে এসেছেন।

এ সব বিষয়ে কথা বলতে নরসিংদী সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি তামান্না নুসরাত বুবলীকে ফোন করা হলে তিনি যুগান্তরের সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ফোন রেখে দেন। এরপর থেকে তার মোবাইল ব্যস্ত পাওয়া যায়।

নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান আকন্দ বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশ নেয়া তামান্না নুসরাত বুবলীর সব পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। তাকে পরীক্ষা থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে জালিয়াতির বিষয়টি অনুসন্ধানে কলেজের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *