চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে চার শতাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত চার শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এসব হিসাবে এখন লেনদেন হচ্ছে না। এগমন্ট গ্রুপের মাধ্যমে তাদের সম্পদ সম্পর্কে বিভিন্ন দেশ থেকে তথ্য আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

যেসব দেশে টাকা পাচার হয়েছে সেসব দেশের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান চলছে। এসব তথ্য সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া হবে। এরপর তারা আরও বিশদ তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মো. রাজী হাসান যুগান্তরকে বলেন, চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তাদের সম্পদ সম্পর্কে তথ্য আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এসব তথ্য সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া হবে।

জানা গেছে, হিসাব জব্দ তালিকায় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তারা রয়েছেন। তবে রাজনীতিবিদদের অধিকাংশই সরকারি দলের সদস্য।

এ তালিকায় রয়েছেন- ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, তার স্ত্রী শেখ সুলতানা রেখা, ছেলে আবিদ চৌধুরী, মুক্তাদির চৌধুরী, ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধান, যুবলীগের জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদ, ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজীব, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান, কৃষক লীগ নেতা ও কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, যুবলীগ দক্ষিণের সহসভাপতি এনামুল হক আরমান, যুবলীগের বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান আনিস, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের আবুল কালাম এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ।

এছাড়া আরও কিছু ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, নজরুল ইসলাম বাবু, ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার প্রমুখ। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- লেক ভিউ প্রপার্টিজ, আরএও কন্সট্রাকশন প্রভৃতি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়- ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, ঘুষ-দুর্নীতির ঘটনায় সন্দেহভাজনদের ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকের লকার, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারে বিনিয়োগ, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ নামে-বেনামে থাকা সব ধরনের সম্পদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে।

নজরদারি সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।

মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী- মানি লন্ডারিং হতে পারে এমন কোনো কর্মকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে বা সন্দেহ হলে ব্যাংকগুলো নিজ থেকে সতর্ক হতে পারে। কারও নির্দেশ ছাড়াই তারা যে কোনো হিসাব নজরদারিতে আনতে পারে।

ফলে চলমান অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম গণমাধ্যমে আসছে তাদের ব্যাংক হিসাবের প্রতি নজর রাখছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।

এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব উদ্যোগে সংগ্রহ করা তথ্যগুলো বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করা হচ্ছে। এসব তথ্য ব্যাংকগুলোকেও দেয়া হচ্ছে। ফলে সন্দেহভাজন ব্যাংক হিসাবগুলো নজরদারির আওতায় চলে আসছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবগুলোতে লেনদেনের ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় থেকে শাখা ব্যবস্থাপকদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

ফলে অনেক সন্দেহভাজন তাদের নিজ নামে বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা হিসাব থেকে টাকা তুলতে পারছে না। একজন শাখা ব্যবস্থাপক জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তারা সতর্ক রয়েছেন। যেসব হিসাবে বড় ধরনের লেনদেন হচ্ছে সেগুলোসহ নগদ লেনদেনের তথ্য নজর রাখা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও বিশেষ নজরদারিতে রেখেছে। সম্প্রতি এক প্রভাবশালী সন্দেহভাজন ব্যক্তি তার হিসাব থেকে (বেসরকারি ব্যাংকের ধানমণ্ডি শাখা) টাকা তোলার জন্য অন্য ব্যক্তিকে ২৫ লাখ টাকার চেক দিলে তা ফিরিয়ে দেয়া হয়। তাকে জানানো হয়, উপরের নির্দেশে এখন টাকা দেয়া যাবে না। কিছুদিন পর আবার যোগাযোগ করতে বলা হয়।

ঋণখেলাপি, ঋণ অনিয়ম বা আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, অর্থপাচারের বিষয়টি বিএফআইইউ দেখছে। আর ঋণ অনিয়মের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে দেখতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এছাড়া ঋণ অনিয়ম ও আত্মসাতের বিষয়ে যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংক। ঋণ অনিয়ম বা জালিয়াতি যেখানেই হোক না কেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ব্যবস্থা নিতে পারবে। সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *