স্বদেশ বাণী ডেস্ক: ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজের কাছে লাগেজ থেকে উদ্ধার করা খণ্ডিত মরদেহ ও কুড়িগ্রামে পাওয়া হাত-পা-মাথা একই ব্যক্তির। নিহত ব্যক্তি নেত্রকোনার পূর্বধলার মো. বকুল (২৮)। এ ঘটনায় নিহতের প্রতিবেশী সাবিনা, তার ভাই ফারুক ও হৃদয় এবং ভাবি মৌসুমীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পূর্বশত্রুতার জেরে পরকীয়ার ফাঁদে ফেলে সাবিনা বকুলকে জয়দেবপুরে তার ভাইয়ের ভাড়া বাসায় নিয়ে গিয়ে দুই ভাই ও ভাবিকে নিয়ে হত্যা করে।
বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, নিহত বকুল ও হত্যাকারীদের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলার হোগলা গ্রামে। সাবিনাকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করতেন বকুল। এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ চলছিল। সাবিনাকে তার সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় একবার তাদের (সাবিনাদের) বাড়িঘরে হামলাও করে বকুলের লোকজন। নিরুপায় হয়ে সাবিনা বাড়ি ছেড়ে গাজীপুরের জয়দেবপুরে ভাই ফারুকের বাসায় চলে যায়।
গত ১৩ জুন একই গ্রামের আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে সাবিনার বিয়ে হয়। বিয়ের পর বকুলের অত্যাচারে পারিবারিক অশান্তি নেমে আসে সাবিনার পরিবারে। পরে সাবিনা কৌশলে বকুলের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
১৯ অক্টোবর রাতে বকুলকে জয়দেবপুরের বানিয়ারচালা এলাকার ভাই ফারুকের ভাড়া বাসায় নিয়ে সাবিনা তার দুই ভাই (ফারুক, হৃদয়) ও ভাবি মৌসুমীকে নিয়ে হত্যা করে। সারারাত চারজন মিলে লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে। পরদিন সকালে ভাই ফারুক লাগেজ ট্রলিতে করে খণ্ডিত মরদেহ ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজের কাছে এবং সাবিনা ও তার ভাবি মৌসুমী মাথা ও অন্য অংশগুলো কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ফেলে রাখে।
Mymensingh
তিনি জানান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার চারজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, গত ২১ অক্টোবর কে বা কারা ময়মনসিংহ নগরীর ব্রহ্মপুত্র ব্রিজের কাছে একটি লাল লাগেজ ট্রলি ব্যাগ রেখে যায়। ব্যাগের সাইজ ও ওজনের কারণে লাগেজটি সন্দেহজনক হওয়ায় তা ঘিরে রাখে র্যাব-পুলিশ। পরে বোম ডিসপোজাল টিম দিয়ে লাগেজেটি খুলে হাত-পা ও মাথাবিহীন একটি মরদেহ পাওয়া যায়।
এক ঘণ্টার ব্যবধানে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার একটি পা উদ্ধারের খবর জানায়। পরদিন কুড়িগ্রামের রাজাপুরে একটি ব্যাগে কাটা পা, দুটি হাত ও ভ্যানেটি ব্যাগে একটি চিরকুটসহ মাথা পাওয়া যায়। পরে ময়মনসিংহের পুলিশ বিষয়টি চাঞ্চল্যকর হিসেবে চিহ্নিত করে তদন্ত শুরু করে।
সিসি ক্যামেরার ছবি ও চিরকুটের সূত্র ধরে নেত্রকোনার পূর্বধলা, ময়মনসিংহের তারাকান্দা ও গাজীপুরের বানিয়ারচালায় অভিযান চালিয়ে মো. ফারুক মিয়া তার স্ত্রী মৌসুমী আক্তার ও তার ভাই হৃদয় মিয়া, বোন সাবিনা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তাদের হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরিসহ একটি মোবাইল ফোন, একটি ব্যাগ ও এক টুকরো ইট আলামত হিসেবে উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য, গত ২০ অক্টোবর ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম ব্রিজের কাছে লাগেজে ট্রলিতে এক ব্যাক্তির খণ্ডিত মরদেহ ও কুড়িগ্রাম থেকে হাত-পা ও মাথা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামির নামে মামলা দায়ের করে। সূত্র: জাগো নিউজ।
স্ব.বা/শা