বরিশাল-৪ আসনের এমপি পংকজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ সদস্য পংকজ নাথের বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্য, দুর্নীতি, দখল, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কাজীরহাট থানা আওয়ামীলীগের সহ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঘন্টাব্যাপী নগরীর সদর রোডের একটি রেস্তোরায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

লিখিত বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেম্বার সঞ্জয় বলেন, এমপি পঙ্কজ নাথ নিজের নির্বাচনী এলাকায় অনিয়ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আসছেন। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে যারাই কথা বলছেন তাদের হামলা-মামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। আমিও তার সন্ত্রাসী, হামলা-মামলা এবং নৈরাজ্যের শিকার।

তিনি বলেন, ভূয়া ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ৯টি কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৮ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়। যার মধ্যে ভূয়া ঠিকানা দিয়ে চাকরি নেয় এমপি’র আপন ভাই মনোজ কুমার নাথ’র স্ত্রী কল্যান রাণী দেবনাথ। এই নিয়োগ বানিজ্যের মধ্যেমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন পঙ্কজ নাথ।

তিনি বলেন, এই অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে পঙ্কজ নাথ এর ভাইয়ের স্ত্রী কল্যানি দেবনাথ ও বিদ্যানন্দপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মিয়াসহ ৪১ জনকে আসামি করে ২০১৭ সালের ৫ মার্চ দুর্নীতি দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করি। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে দুদক মামলারটির তদন্ত শুরু করে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ৪ জনকে অভিযুক্ত করে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু প্রতিবেদনে সন্তষ্ট না হয়ে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। বর্তমানে মামলাটি দুদক বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান তদন্ত করছেন।

তিনি আরও বলেন, এদিকে মামলা করায় ক্ষিপ্ত এমপি পঙ্কজ নাথ। ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল পঙ্কজ নাথ তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার দুটি পা, একটি হাত হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পঙ্গু করে দেয়। এর পরে আমার বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে। ওই মামলায় আমি ১৮ দিন কারাবন্দি ছিলাম। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি। আমাকে ২০১৮ সালের ১২ জুন মেহেন্দিগঞ্জ নতুন ডাকবাংলোর ভিআইপি ১ নম্বর কক্ষে নিয়ে মেরে মৃত ভেবে নদীতে ফেলে দেয়।

লিখিত বক্তব্যে সঞ্জয় চন্দ্র অভিযোগ করে বলেন, পঙ্কজ নাথ গবিন্দপুর ইউনিয়নের চরে দেড় হাজার একর জমি থেকে বছরে প্রায় চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আলিমাবাদ ইউনিয়নের শ্রীপুরের গাগড়িয়ার চরে তার চাচাত ভাই রাম কৃষ্ণ নাথ হাজার হাজার একর জমির ভূয়া খতিয়ান খুলে ঘর তৈরী করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

এছাড়াও রাতের আঁধারে ভূয়া রেজুলেশন করে স্কোডিং দেখিয়ে জনপ্রতি ৬০ হাজার টাকা করে নিয়ে আট’শ বন্দবস্তোর কার্ড অনুমোদন দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পঙ্কজ নাথ তার ডিও লেটার দ্বারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বালুমহলের টেন্ডার বন্দ করে সে তার চাচাত ভাই রিপন দেবনাথ ও আপন ভাই মনজ কুমার দেবনাথের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

দুর্নীতির খেতাবপ্রাপ্ত এমপি পঙ্কজ নাথ ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়ে কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্য করেছেন। শুধু নিয়োগই নয়, টেন্ডারবাজি, গোডাউন সিন্ডিকেট, জেলা পরিষদের ঘাট দলখ করেছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ফান্ডের নামে টেন্ডারবাজি করে দুই উপজেলা থেকে ১৫ ভাগ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

সরকারের বরাদ্দকৃত বছরে ৬-৭ টন টিআর, কাবিখা সরকারিভাবে ৪০ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারন থাকলেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ১২-১৫ হাজার টাকা মূল্যে দেয়া হয়। বরিশালে জেলা পরিষদের ইজারাকৃত ৬টি ঘাট জবরদখল করায় সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

তিনি বলেন, এমপি পঙ্কজ নাথ রাজধানীর ধানমন্ডিতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, উত্তরায় বিলাশবহুল ১০ তলা বাড়ি, মালিবাগে গার্মেন্টস, পরিবহন ব্যবসা, নিজ গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি, নিজের নামে লাল পাজারো গাড়ি, একটি প্রাইভেট কার, চার কোটি টাকা মূল্যের একটি বিলাসবহুল নোভা মার্সিডিস গাড়ি ব্যবহার করছেন।

রাশিয়ার মস্কোতে তার বোন জামাতার মাধ্যমে সেখানে ডেভেলপার্ক ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এমপি পঙ্কজ নাথ একমাত্র ব্যক্তি যিনি ১/১১ এর সময় শীর্ষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে আদালতে পৃথক দুটি মামলায় তাকে সাজা দেয়। এর একটিতে ১৩ বছর অপরটিতে ৩টি বছর। এসময় পঙ্কজ নাথের এতো অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়ার বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সকল অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি পংকজ নাথ বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে কারোর ইন্ধনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *