রাজবাড়ী বিআরটিএ’র পরীক্ষায় ফেল করেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছি আমি

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের পর থেকে গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ করতে রাজবাড়ীর সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে ভিড় বেড়েছে। গত কয়েকদিনে বিআরটিএর কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা ছিল সাধারণ সময়ের চেয়ে তিনগুণ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজবাড়ীর বিআরটিএর কার্যালয়ে সামনে ভিড় দেখা যায় স্থানীয় পরিবহন চালক-মালিকদের। তবে লাইসেন্স নিতে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন অনেকেই। অতিরিক্ত টাকা না দিলে নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয় তাদের।

গত শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন। এই আইনে সড়কে নিয়ম ভঙ্গে জরিমানা বেড়েছে হাজার গুণ পর্যন্ত। ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা ফিটনেস সনদ না থাকলে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে নতুন আইনে। হতে পারে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড। আগে একই অপরাধের জরিমানা ছিল ৫০০ টাকা। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না থাকলে জরিমানা দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। গাড়ির ট্যাক্স টোকেন হালনাগাদ না থাকলে জরিমানা ১০ হাজার টাকা।

রাজবাড়ীর বিআরটিএর কার্যালয় সূত্র জানায়, মোটরসাইকেল চালকদের শিক্ষানবিশ (লার্নার) কার্ড পেতে ৩৪৫ টাকা ও মূল ফি ২৫৪২ টাকা জমা দিতে হয়। প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ আবেদন জমা পড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি ফি জমা দিয়ে রশিদ ও লাইসেন্সের জন্য গাড়ির কাগজপত্র, ভোটার আইডি কার্ড ও ছবি বিআরটিএতে জমা দিয়ে শিক্ষানবিশ (লার্নার) কার্ড করা যায়। কিন্তু বিআরটিএর কিছু কর্মকর্তা আবেদনকারীদের কাছ থেকে অফিস খরচের নামে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নানা অজুহাতে তাদের হয়রানি করা হয়। যে কারণে অতিরিক্ত টাকা দিচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা।

এদিকে, বিআরটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছয় থেকে আট হাজার টাকা চুক্তিতে লাইসেন্স করছেন কেউ কেউ। চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব কাজ বিআরটিএর কিছু কর্মকর্তা করে দেন। অতিরিক্ত টাকা দেয়ার পর শুধু পরীক্ষার দিন হাজিরা দিতে হয় তাদের। পরীক্ষায় কিছু না লিখলেও পাস হন চুক্তি করা ব্যক্তিরা। এর মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন শো-রুমের মাধ্যমে চুক্তিতে লাইসেন্স করছেন।

লাইসেন্স করতে আসা আনোয়ার বলেন, লাইসেন্সের জন্য বিআরটিএ অফিসে এসেছি। কিন্তু অনেক ভিড়। টাকা ছাড়া কাজ হয় না এখানে। চুক্তি করে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে লাইসেন্স করে দিচ্ছেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা। যারা চুক্তি করেন না তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়।

শো-রুমের মাধ্যমে লাইসেন্স করা আলিফ হোসেন হৃদয় বলেন, হিরো মোটরস শো-রুমের মাধ্যমে ৮ হাজার টাকা চুক্তিতে লাইসেন্স করেছি। আমার মতো অনেকেই এভাবে লাইসেন্স করেছেন। তবে এটি অবৈধ পন্থা। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বৈধভাবে লাইসেন্স করতে অনেক কাগজপত্র জমা দিতে হয়। পরে অফিস থেকে দেয়া হয় একটি লার্নার। এরপর পরীক্ষা নেয়া হয়। সব ধরনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর দেয়া হয় লাইসেন্স। কিন্তু বিআরটিএর কিছু কর্মকর্তা ঝামেলা ছাড়াই অতিরিক্ত টাকা নিয়ে সহজে লাইসেন্স করে দেন। পরীক্ষায় ফেল করেও লাইসেন্স হাতে পেয়েছি আমি।

তবে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে রাজবাড়ী বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, লাইসেন্স পেতে অনেক ভিড় চালক-মালিকদের। কয়েকদিন ধরে এই ভিড় বেড়েছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ২০০-২৫০ আবেদন জমা পড়তো। এখন ৬০০-৭০০ আবেদন পড়ছে। অফিসের লোকবল কম থাকায় কাজে সমস্যা হলেও সাধ্যমতো সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি আমরা। লাইসেন্স নিতে আসা ব্যক্তিরা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে রশিদ নিয়ে অফিসে জমা দেন। তখন লার্নার দেয়া হয়। আগামী তিন মাসের মধ্যে আবেদনকারীদের পরীক্ষা নেয়া হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর যাবতীয় কাজ শেষে লাইসেন্স দেয়া হবে। তবে এ নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো ধরনের চুক্তি করা হয় না। সূত্র: জাগো নিউজ।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *