নড়াইলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মাদক রেখে টাকা আদায়:  পুলিশ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা: পুলিশ সুপার 

জাতীয়

নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: ‘চিরচেনা সবুজের মতো মায়াবী এই নড়াইল জেলার চিত্র এরকম কখনো ছিলনা, এখানেই নেই কোন বৈরিতা, আছে বহুকাল ধরে রাজনৈতিক সুস্থ সংস্কৃতির এক মহান ঐতিহ্য। আর এভাবেই এখানে বেড়ে উঠছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। কিন্তু হঠাৎ করে সবকিছু উলট পালট অতীত ইতিহাসকে ম্লান করে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে এখানকার সবমহলের মানুষজনকে।

নড়াইলে পুলিশের সোর্স সেজে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মাদকের পোটলা রেখে মোটা অংকের টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে নড়াইল সদর উপজেলা কলোড়া ইউনিয়ন আ্ওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল শেখের বিরুদ্ধে। এনামুল শেখ আগদিয়া গ্রামের মৃত ফজর শেখের ছেলে। এলাকাবাসির অভিযোগ এনামুল শেখ কয়েক বছর ধরেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আবার কখনো সাধারণ মানুষের বাড়িতে মাদকের পোটলা রেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে গেলে তাকে ছাড়িয়ে আনার নামে মোটা অংকের টাকা আদায় করে আসছে।

নড়াইলের আগদিয়া বাজারে এ ব্যাপারে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। নড়াইলের আগদিয়া বাজার বণিক সমিতি এ সমাবেশের আয়োজন করে। নড়াইলের কলোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.আব্বাস সরদারের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নড়াইলের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার),। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা বিবেকানন্দ বিশ্বাস,সদর থানার ওসি (অপারেশন) সুকান্ত সাহা, বিছালী পুলিশ ফাড়ির উপ পরিদর্শক মো.ক্ওাছার আলী, ম্ওালানা আব্দুল কাদের, আগদিয়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি লিটন মোল্লা, বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল সিকদার প্রমুখ।

নড়াইলের আগদিয়া বাজারের সাইকেল গ্যারেজ মিস্ত্রি জাহাঙ্গীর সরদার (২৮) বলেন, গত বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এনামুল শেখ আমার গ্যারেজের সামনে দাড়িয়ে খোশ গল্প করার সময় কখন কিভাবে আমার গ্যারেজের মালামাল রাখা বাক্সের নিচে একটি ছোট কৌটার ভেতর গাজার পুড়িয়া রেখে দেয় তা জানি না। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে বিছালী পুলিশ ফাড়ি থেকে একজন পুলিশ এসে আমার কাছে মাদক রাখার কথা জানতে চায় ।আমি জানি না বলায় তিনি বাক্সের নিচে থেক্ েএকটি কৌটা বের করে তার মধ্যে গাজা পান এবং আমাকে ফাড়িতে নিয়ে যান। পরে সদর থানায় চালান দেন। ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসি থানায় গিয়ে আমাকে ছাড়িয়ে আনেন। বাজারের আরেক ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান বলেন,এনামুলের শাগরেদ শিমুলিয়া গ্রামের টনি মোল্লা বেশ কিছু দিন আগে আমার দোকানের শো-কেচের নিচে তিন পিস ইয়াবা রেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে শো-কেচের নিচে থেকে ইয়াবা উদ্ধার করে আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। তিনি বলেন, এলাকার আ,লীগ নেতা এনামুল এগুলো করে থাকে। মো.এনামুল শেখ এবং টনি মোল্লাকে এলাকায় প্ওায়া যায়নি। তাদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্দ প্ওায়া যায়।

জানতে চাইলে কলোড়া ইউনিয়ন আ্ওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্ত রহমান বলেন,মো. এনামুল শেখ কলোড়া ইউপি আ,লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এনামুল এই ন্যাক্কারজনক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে দল থেকে তাকে বহিস্কার করা হবে। সকালে বাজারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নড়াইলের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার), বলেন, যত বড় নেতাই হোক না কেন পুলিশের সোর্স সেজে এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ্ যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, মাদক, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস মুক্ত নড়াইলকে মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে সাংসদদ্বয়সহ জেলা প্রশাসন অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য জন সাধারণকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। অপরদিকে নড়াইলের লোহাগড়া থানা হেফাজতে শিহাব মল্লিক (২৮) নামের এক যুবককে চোখ বাধাঁ ও পিছন হাতকড়া পরিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের নির্যাতনের শিকার শিহাব মল্লিক নড়াইলের লোহাগড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি নড়াইলের লোহাগড়া পৌরশহরের গোপীনাথপুর গ্রামের এনামুল মল্লিকের ছেলে।

শিহাব মল্লিক সাংবাদিকদের বলেন, গত শনিবার সকালে আর্থিক ও পারিবারিক বিরোধে ফুফাতো ভাই মনিরুল ও খাইরুল মল্লিক যৌথভাবে তার পিতা এনামুল মল্লিকের ওপর চড়াও হয়। বিষয়টি নিয়ে তাদের বড় ভাই বদরুল মল্লিকের সাথে শিহাব মল্লিকের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায় শিহাব বদরুল মল্লিককে মারধোর করেন। এ ঘটনায় বদরুল মল্লিকের ছোট ভাই মনিরুল মল্লিক বাদী হয়ে শিহাব ও তার মা বিউটি বেগমকে আসামী করে গত শনিবার দুপুরে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তভার পায় এসআই নুরুস সালাম সিদ্দিক।

তিনি পরদিন রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শিহাব মল্লিককে গ্রেফতার করে থানা হেফাজতে রাখেন। খবর পেয়ে তার পরিবারের লোকজন ছুটে যান থানায়। পরিবারের লোকজনকে দেখা করা ও রাতের খাবার দিতে দেয়নি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শিহাব মল্লিক বলেন, গত রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা ও সোমবার সকালে এসআই সিদ্দিক তাকে পিছনে হাতকড়া পরিয়ে চোখ বেঁধে নির্দয় ভাবে নির্যাতন করেছেন। নির্যাতনের কারণে তিনি কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। শিহাবকে কিছুটা সুস্থ্যকরে সোমবার সকালে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরন করেন। আদালত চত্ত্বরে তার পরিবারের কাছে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় শিহাব। বৃহস্পতিবার শিহাব জামিনে মুক্ত হলে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় লোহাগড়া হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয় তার পরিবার।

শিহাবের এক নিকট আত্মীয় জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নুরুস সালাম সিদ্দিক বাদীর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে শিহাবের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে। অভিযুক্ত এসআই সিদ্দিকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। নড়াইলের লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোকাররম হোসেন জানান, তিনি হাসপাতালে গিয়ে ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *