মানিকগঞ্জের ঘিওরে ২০ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটছে রঞ্জনের, নেই চিকিৎসা সেবা

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: মানিকগঞ্জের ঘিওরে ২০ বছর ধরে রঞ্জন চন্দ্র কর্মকার নামে এক যুবকের শিকলবন্দি জীবন কাটছে। ছয় বছর বয়সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় স্বজনরা তাকে শিকলবন্দি করে রেখেছেন।

স্বজনরা জানান, ছয় বছর বয়স থেকেই রঞ্জন মানসিক ভারসাম্য হারান। সহায়-সম্বল বিক্রি করেও তাকে সুস্থ করতে পারেনি পরিবার। উন্নত চিকিৎসার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সাহায্য মেলেনি।

ঘিওর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সাহাপাড়া এলাকার রুপন চন্দ্র কর্মকারের একমাত্র সন্তান রঞ্জন। ছয় বছর বয়সে রঞ্জনের অস্বাভাবিক আচরণ ধরা পড়ে মা-বাবার চোখে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক সমস্যা স্পষ্ট হতে থাকে। একদিকে গেলে আর ফিরতে চাইতো না। মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যেত। হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে রঞ্জনের পায়ে লোহার শিকল পরানো হয়েছে।

কাঁচা ঘরের ভাঙাচোরা বাড়ান্দার একটি ছোট্ট কক্ষে দিন-রাত কাটে রঞ্জনের। খাওয়া, ঘুমহ প্রকৃতির ডাকেও সাড়া দেন সেখানে। আত্মীয়-স্বজন সকলেই রঞ্জনের শিকলে বাঁধা এমন জীবন দেখে এক প্রকার অভ্যস্ত। পরিবার সু-চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করেছেন অনেকবার। কিন্তু মেলেনি সাহায্য। ছেলের পেছনে সময় দিতে গিয়ে বাবা হয়েছেন কর্মহীন।

রঞ্জনের বাবা রুপণ চন্দ্র কর্মকার জানান, একমাত্র সন্তানের পেছনেই তাকে সারাদিন সময় দিতে হয়। তার স্ত্রীও অসুস্থ। তাদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়েছেন। অর্থাভাবে সুচিকিৎসা করাতে পারছেন না। ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া মাত্র ১ শতাংশ জমি ছিল তার। সেখানেই ঘর করে বসবাস করতেন। কিন্তু সেই জমিটিও বিক্রি করেছেন এক বছর আগে। মালিককে অনুরোধ করে ওই বাড়িতেই আপতত থাকছেন তারা।

রুপন কর্মকার আরও জানান, ছেলের চিকিৎসার জন্য জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। বহু আশ্বাস মিললেও বাস্তবে এগিয়ে আসেননি কেউ। একটু আশ্রয়ের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর খাস জমি চেয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু সেখানেও কোনো উদ্যোগ না দেখতে পেয়ে হতাশ তিনি।

রঞ্জনের মা সুমতি রাণী কর্মকার জানান, ২৪ ঘণ্টাই বাড়ান্দার রুমে পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয় রঞ্জনকে। সারাক্ষণ বেঁধে রাখার কারণে পা দুটি ফুলে গেছে। রঞ্জন নাম ঠিকানা সবই বলতে পারে। কোন মানুষ দেখলেই বাবাকে নাম ধরে ডেকে বার বার বলতে থাকে- মারবে নাকি? সাথে সাথে উত্তর দিতে হয়। তা না হলে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় সে।

তিনি বলেন, রঞ্জনের খাওয়া-দাওয়ার তেমন চাহিদা নেই। কখনো কাঁদেও না সে। শুধু হাসে অর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ছোট বেলায় ডাক্তাররা জানিয়েছিল উন্নত চিকিৎসা পেলে ও ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু অর্থাভাবে আমরা চিকিৎসা করাতে পারিনি।

প্রতিবেশীরা জানান,দরিদ্র পরিবারটির খুবই মানবেতর দিন কাটছে। রঞ্জনকে বর্তমানে মা-বাবা আগলে রাখছেন। কিন্তু তাদের অর্বতমানে ছেলেটির ভবিষৎ কি হবে? বন্দিজীবনই বা কাটবে কতদিন?

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম (টুটুল) জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তান নিয়ে পরিবারটি খুবই কষ্টে আছে। তাদের থাকার মতো কোনো জায়গাও নেই। কয়েক মাস আগে রঞ্জনের নামে তিনি একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড করিয়ে দিয়েছেন। সেই ভাতার টাকা দিয়েই তারা কোনো মতে বেঁচে আছেন।

এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আইরিন আক্তার জানান, রঞ্জন কর্মকারের যাতে সুচিকিৎসা হয় এজন্য তিনি উদ্যোগ নেবেন। পাশাপাশি তাদের নামে খাসজমি বন্দোবস্ত দেয়ার ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র: জাগো নিউজ।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *