সিরাজগঞ্জ-ঈশ্বরদীসহ পশ্চিমাঞ্চল রেলপথ তদারকিতে অনভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: সিরাজগঞ্জ-ঈশ্বরদীসহ পশ্চিমাঞ্চলের রেলপথ তদারকিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন নবীন ও অনভিজ্ঞ অর্ধশত উপ-সহকারী প্রকৌশলী। এদের অধিকাংশের নিয়োগ ২০১৫ সালের পরে হওয়ায় লাইন মেরামত সংস্কারে তেমন কোনও অভিজ্ঞতা নেই। এই অঞ্চলের রেলপথে ত্রুটির পেছনে এটি অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া স্টেশনে ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী রংপুর আন্তঃনগর ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এরপর প্রকৌশলীদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অদক্ষতার বিষয়টি অনুসন্ধানে উঠে আসে।

জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগের অধীন স্ব স্ব জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ মেরামত ও সংস্কারের কাজে ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পিডাব্লিউ) পদটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। জনবল সংকটে অনভিজ্ঞ ও নবীন উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের অনেকেই ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যথাযথ পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেকেই নিপুনতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি তেমন গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ পাচ্ছে না, আড়ালেই পড়ে থাকছে।

রংপুর আন্তঃনগর ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ার পর কারণ অনুসন্ধানে পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ পাকশী থেকে প্রথমে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পাকশী রেল বিভাগের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) মো. আবদুল্লাহ আল মামুনকে ওই কমিটির প্রধান করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকালেই তিনি উল্লাপাড়ায় এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি তদন্ত কাজ শুরু করেন। ‘লাইনে ত্রুটি’র কারণে ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে বলে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকালে প্রাথমিকভাবে তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে সিরাজগঞ্জ-উল্লাপাড়া-ঈশ্বরদী রেলপথ তদারকিতে ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাশ আহম্মেদ। তিনি একেবারেই নবীন ও অনভিজ্ঞ। গত দেড় বছর আগে রেল বিভাগে নিয়োগ পেয়ে সিরাজগঞ্জ জেলায় ৭ মাস আগে গুরত্বপূর্ণ পদে যোগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে পাকশীর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মিজানুর রহমান বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর অনভিজ্ঞ ও নবীন উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের দায়িত্ব পালনের বিষয় নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। এসব কর্মকর্তাদের দেখভাল করেন প্রধান প্রকৌশলী মহোদয়। আপনারা তার সঙ্গে কথা বলেন।’

পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ-রাজশাহীর প্রধান প্রকৌশলী এএসএম মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এখনও কোনও তদন্তই শেষ হয়নি। এই মুহূর্তেই পুরোপুরি নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে, লাইনে ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে,পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগের রেলপথ তদারকির কাজে যেসব উপ-সহকারী প্রকৌশলীরা নিয়োজিত রয়েছেন, তারা অধিকাংশই নবীন এটা সত্য। পুরনোদের অধিকাংশই চাকরি থেকে অবসর নেওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়েই এদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। এদের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে ২০১৫ সালের পর। যারা মোটামুটি ভালো তাদের গুরত্বপূর্ণ জেলা বা স্থানে দায়িত্ব দেওয়া হয়। চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী যথাযথভাবে এদের নিয়োগ সম্পন্ন হলেও অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রকৌশলীদের বাস্তবেই বেশ ঘাটতি রয়েছে।’

দায়িত্ব পালনে কোনও ঘাটতি বা গাফলাতি নেই দাবি করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাশ আহম্মেদ বলেন, ‘আমি সিরাজগঞ্জে নতুন হলেও এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এ রকম দায়িত্ব পালনের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে।’

উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন বৃহস্পতিবার উল্লাপাড়া স্টেশনে আকস্মিক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ইঞ্জিন বাদে ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ইঞ্জিনটি হঠাৎ উপরের দিকে উঠে লাইন থেকে ছিটকে পড়ে। ইঞ্জিনসহ এসি বগিতে আগুন ধরে যায়। এরপর আরও তিনটি বগিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে ২৫ জন যাত্রী আহত হন। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *