যশোরের বেনাপোল কাস্টমসের স্বর্ণ চুরির ঘটনায় ৭ জন ডিবি হেফাজতে

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: যশোরের বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ভোল্ট ভেঙে প্রায় ২০ কেজি স্বর্ণ চুরির রহস্য এখনও উদঘাটন হয়নি। থানা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কোনো তথ্য না পাওয়ায় ৭ জনকে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। নতুন করে এ ঘটনায় আর কাউকে আটক করা হয়নি।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত টিম গঠন করেছে। তারা সরেজমিনে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে তদন্ত শুরু করবেন আগামী রোববার।

কাস্টমস সূত্র জানা গেছে, এই টিমের নেতৃত্বে আছেন, এনবিআরের সদস্য (প্রশাসন) খন্দকার আমিনুর রহমান, সি আই সেলের যুগ্ম কমিশনার জাকির হোসেন, যশোরের পুলিশ সুপার মইনুল হক, বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী ও বেনাপোল কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম।

অপরদিকে দুধর্ষ চুরির রহস্য উদ্ঘাটনে বেনাপোল পোর্ট থানাসহ র‌্যাব, ডিবি, সিআইডি এবং পিবিআই সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বেনাপোলের বিভিন্ন স্থানে তদন্ত কাজ করছেন। তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও কর্মকর্তার সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী অতীতে এখানে এমন ভয়ঙ্কর চুরির ঘটনা ঘটেনি। লকারের কক্ষটি অত্যন্ত গোপনীয় এবং সেখানে দায়িত্বশীল ছাড়া কারো প্রবেশাধিকার নেই। কক্ষের চারপাশে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। বলা হচ্ছে চোরেরা সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে গোপন কক্ষে ঢুকে লকার ও ভল্ট ভেঙে ১৯ কেজি ৩৮৫ গ্রাম স্বর্ণ নিয়ে যায়। এই ঘটনা দিনে না-কি রাতে হয়েছে তা কেউ বলতে পারেননি।

তারা বলেন, এই চুরি অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং দীর্ঘ পর্যালোচনার ফসল। এর সঙ্গে ভেতরের লোক যুক্ত থাকার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ চুরি করতে হলে প্রথমে কক্ষটা ঠিকভাবে চিনতে হয়, দ্বিতীয়ত লকার বা সিন্দুক কোথায় থাকে এবং তার ভেতরে কোথায় কী থাকে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হয়। এরপর ওই ঘরে পাহারাদার ও ক্যামেরার চোখ ফাঁকি দিয়ে কোন পথে যাওয়া ও ফেরা যাবে তা নখদর্পণে রাখতে হয়। সিসি ক্যামেরা বিকল করতে কোথায় কীভাবে যেতে হবে তাও জানতে হয়। ভেতরে ভল্টে কোনো সিকিউরিটি সাউন্ড আছে কি-না তাও জানতে হয়। আর এসব জানার জন্য ওই কক্ষের ভেতর-বাহির মুখস্ত রাখতে হয়। কাজটি মোটেই সহজ নয়, এ কাজ করতে সেখানে বারবার যেতে হয়। কর্তব্যরতদের ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত হতে হয়। আর এতোগুলো কাজ করতে হলে অফিসের বিশেষ কারো ঘনিষ্ঠ অথবা নিজে অফিসের বিশেষ কেউ হতে হয়।

তারা বলেন, চোরেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লকারটি ভেঙেছে। ওই লকারে দেশি-বিদেশি প্রচুর টাকা, প্রায় ৩০ কেজি স্বর্ণের বার ও গহনাসহ মূল্যবান অনেক কিছুই ছিল। বারবার এমন সুযোগ মিলবে না জেনেও কেন চোর শুধুমাত্র ১৯ কেজি ৩৮৫ গ্রাম স্বর্ণ চুরি করলো? এর মধ্যে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে? তদন্ত কর্তাদের এদিকটাও খতিয়ে দেখা দরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৮ ও ৯ নভেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি ও ১০ নভেম্বর ঈদে মিলাদুন্নবীর সরকারি ছুটির কারণে কেউ অফিসে ছিল না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চোরেরা অফিসের ভোল্ট ভেঙে প্রায় ২০ কেজি স্বর্ণ নিয়ে যায়। এ ঘটনায় দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। ঘটনাস্থলে ডেপুটি কমিশনারের অফিস কক্ষ। আছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা। তবে তাতে কিছুই ধরা পড়েনি। কারণ ক্যামেরাটি সচল থাকলেও মূল মেশিন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। কেন ছিল? এমন প্রশ্ন অনেকের। এতো নিরাপত্তা থাকার পরও চুরির ঘটনাটি রহস্যের জন্ম দিয়েছে। এসব প্রশ্ন নিয়ে কাস্টমস এলাকায় নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। থানায় মামলা হলেও আসামি অজ্ঞাত। ঘটনা তদন্তে বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলামকে প্রধান করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এরই মধ্যে চারদিন পার হয়ে গেছে।

পুলিশ বলছে, ভোল্টের বিকল্প চাবি ব্যবহার করে সোনা চুরি করা হয়েছে। ভোল্টের চাবি কার কাছে থাকে সেটাও দেখার বিষয়। এছাড়াও ভোল্ট ইনচার্জ কাস্টমসের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা শাহাবুল সর্দার অল্প কয়েকদিন আগে বেনাপোলে যোগদান করেছেন।

বেনাপোল কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার এস এম শামীমুর রহমান জানান, পুরনো ভবনের দ্বিতীয় তলায় চার স্তরের নিরাপত্তা বেস্টনি পেরিয়ে গোপনীয় কক্ষে থাকা ভোল্ট ভেঙে ৩০ কেজি স্বর্ণের মধ্যে ২০ কেজি নিয়ে গেছে দুর্বৃওরা। ভোল্টে আরও সোনা, কোটি কোটি টাকার ডলার ও টাকা থাকলেও শুধু মাত্র ২০ কেজি স্বর্ণ নিয়ে যায় তারা। ভোল্ট ভাঙার আগে চোরেরা সিসি ক্যামেরার সব সংযোগ কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ভোল্টে কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা, বিজিবি ও পুলিশের উদ্ধার করা সোনা, ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও মূল্যবান দলিলাদি ছিল।

বেনাপোল পোর্ট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সৈয়দ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘স্বর্ণ চুরির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক সবাইকে যশোর ডিবি পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সেখানেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’।
যশোর ডিবি পুলিশের ওসি মারুফ আহম্মদ জানান, বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা সাহারুল সর্দার, সিপাহী পারভেজ, দৈনিক মুজুরিভিত্তিক পিয়ন টিপু সুলতান, আজিবর রহমান, মহাব্বত হোসেন, সুরত আলী ও আলাউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই তা বলা যাবে না।

যশোর পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি দল বেনাপোল কাস্টমস হাউসে স্বর্ণ চুরির ঘটনা তদন্ত করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্ত টিমের সদস্য পরিদর্শক (পিবিআই) কাজী মাহবুবুর রহমান জানান, ‘আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই চুরির রহস্য উদঘাটন হবে। সূত্র: জাগো নিউজ।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *