পুরোদমে চলছে ইজতেমার প্রস্তুতি, ৪৫০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন

চারণ সংবাদ জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আগামী ১০ জানুয়ারি (শুক্রবার) ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম পর্বের ইজতেমা। ১৭ জানুয়ারি হবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা। আসন্ন ইজতেমা উপলক্ষে প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে কাজ করছেন মুসল্লিরা।

প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসল্লিরা ময়দান প্রস্তুতের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্যদিকে প্রশাসন থেকে মুসল্লিদের সেবায় বিভিন্ন ব্যবস্থার পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ৪৫০টি সিসি ক্যামেরা।

মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার, মাটি কাটা, খুঁটি পোঁতা, সামিয়ানা তৈরি, চট বাঁধাই, বয়ান মঞ্চ, বিদেশিদের কামরা নির্মাণসহ নানা ধরনের কাজ করছেন। ১০ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার ৫৫তম পর্বটি অনুষ্ঠিত হবে।

১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। ১৭ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্বে ইজতেমায় অংশ নেবেন মাওলানা জোবায়েরপন্থী মুসল্লিরা। দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন মাওলানা সা’দ এর অনুসারীরা।

ইজতেমা মাঠে কাজ করতে আসা মুসল্লি সোলায়মান হক বলেন, ‘মাঠের কাজে শীত কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি। আল্লাহর নৈকট্য ও খুশির জন্য এগুলো কোনও বাধা নয়। আল্লাহকে পেতে চাইলে একটু কষ্ট করতেই হবে, আর আল্লাহর জন্য কষ্ট করলে আল্লাহও খুশি হবেন।’

ইজতেমা মাঠের মুরুব্বি ও মাওলানা জোবায়ের অনুসারী ডা. কাজী সাহাবুদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশি-বিদেশি ওলামা মাশায়েখগণ বিশেষ করে বিদেশি মেহমান যথা সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরা বাংলাদেশে অবস্থান নিয়ে দিনের দাওয়াতের কাজ করছেন। ইজতেমার ময়দানের সব কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ইজতেমা আয়োজনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখছেন।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এবারও বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের সেবায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে ময়দানে বালি ফেলা, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারসহ বিভিন্ন কাজ করেছে সিটি করপোরেশন। আমি নিজে প্রতিদিন ময়দানে কাজের খোঁজ-খবর রাখছি।’

মেয়র বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে ইজতেমার ময়দানের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইজতেমার ময়দানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, যানজট নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যসেবাসহ মুসল্লিদের বিভিন্ন সেবা বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে মুসল্লিদের জন্য বিশেষ কিছু ব্যবস্থা থাকছে। আয়োজকদের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন এসব কাজে সমন্বয় করছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো−

খিত্তা: প্রথম পর্বে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের জন্য ৮৭টি খিত্তা থাকছে। এতে ৬৪ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিতে পারবেন। এর মধ্যে ঢাকা জেলার জন্য ২৩টি খিত্তা এবং ময়মনসিংহ জেলার জন্য দুটি খিত্তা আলাদা রাখা হবে। বাকি সব জেলার মুসল্লিদের জন্য একটি করে খিত্তা থাকবে। মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য ইজতেমার ময়দানে থাকবে ২০টি প্রবেশপথ।

বিদ্যুৎ ও টেলিফোন ব্যবস্থা: নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে তিনটি গ্রিড লাইন থেকে সংযোগ এবং চারটি জেনারেটর স্ট্যান্ডবাই থাকবে। মুসল্লিদের পারাপারের জন্য তুরাগ নদে সাতটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করা হবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ৩০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। দুটি হটলাইনসহ ৫০টি টেলিফোন সংযোগ দেওয়া হবে।

নিরাপত্তা ও পানি: ইজতেমা এলাকা পর্যবেক্ষণের জন্য বসানো হবে ৪৫০টি সিসি ক্যামেরা। মাঠে নিয়োজিত থাকবে বোমা ডিসপোজাল টিম। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য উপস্থিত থাকবে। বিজিবি সদস্য স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে, ৮ হাজার ৩৩১টি টয়লেট, ১৭টি গভীর নলকূপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হবে।

বিশেষ ব্যবস্থাপনা: বিকল্প বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৪টি শক্তিশালী জেনারেটর প্রস্তুত রাখা হবে। তুরাগ নদের ওপর সেনাবাহিনী ৭টি ভাসমান সেতু তৈরি করবে। যাতায়াতের জন্য ১০টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে এবং সব ট্রেন টঙ্গীতে যাত্রাবিরতি করবে। স্টেশনে তিন স্তরে টিকিট বিক্রি করা হবে।

স্টেশনে মুসল্লিদের জন্য আলাদা অস্থায়ী বিশ্রামাগার ও ১০০টি টয়লেট তৈরি করা হবে। ১৭টি গভীর নলকূপ দিয়ে খাবার ও অজু গোসলের পানি সরবরাহ করা হবে। ইজতেমার প্রবেশপথে এলইডি লাইট বসানোর কাজ দ্রুতগতিতে করা হচ্ছে। যাতে দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা নিরাপদে ও সুষ্ঠুভাবে যাতায়াত করতে পারে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, গতবারের মতো এবার মাওলানা যোবায়ের অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা আগে হবে এবং চার দিন বিরতি দিয়ে মাওলানা সা’দ অনুসারীদের ইজতেমার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। দুই পর্বেই থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইজতেমা মাঠ ও মাঠের বাইরে পুলিশ র‌্যাবসহ থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *