আটকে গেল ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: মাতৃদুগ্ধ সংরক্ষণে ‘মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপনের বিরোধিতা করে এবং এ ব্যাপারে যথাযথ শর্তারোপ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে ধর্ম মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ), নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (স্ক্যানো), নবজাতক আইসিইউ (এনআইসিইউ) এবং ঢাকা জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়েছে।

রোববার জনস্বার্থে নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।

ঢাকার মাতুয়াইলের সরকারি শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে (আইসিএমএইচ) গত ১ ডিসেম্বর মিল্ক ব্যাংকের কাজ শুরুর কথা ছিল। এজন্য বিদেশ থেকে আনা হয় আধুনিক যন্ত্রপাতিও।

এই পরিকল্পনা শুনেই হালাল-হারামের বিষয় জড়িয়ে আছে জানিয়ে উদ্যোগের বিরোধিতায় নামেন ওলামাদের একটি অংশ। এতে আইনগত ও ধর্মীয় সমস্যা তৈরি হবে দাবি করে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়।

‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের’ সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. মজিবুর রহমান বলেন, তারা এই কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রেখেছেন।

বিষয়টি ‘স্পর্শকাতর’ হওয়ায় শুরুতেই আলেমদের সঙ্গে কথা বলা দরকার ছিল বলে মনে করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব এবং জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান।

তিনি বলেন, ‘(ইসলামে) ১৪ জনের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা নিষিদ্ধ বা হারাম। দুধ পানের মাধ্যমে তৈরি হওয়া সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এই ১৪ জনের সঙ্গে বিবাহ হারাম। বিষয়টি এত হালকাভাবে দেখলে চলবে না।’

ইসলামে কেউ মা ব্যতীত অন্য নারীর দুধ পান করলে তিনি দুধ মার স্বীকৃতি পান। মায়ের সম্পর্কিত যেসব স্বজনকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ, দুধ মার সম্পর্কিত তার স্বজনদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।

গাজী আতাউর বলেন, ‘মায়ের দুধ সংরক্ষণ হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, যারা সংরক্ষণ করছে, তারা কতটা সতর্ক থাকবে। সংরক্ষণ করলে সেটা কতদিন ধরে সংরক্ষণ করা যাবে। কাকে খাওয়াচ্ছে, তার পরিচয়টা কীভাবে চিহ্নিত হবে। কোন বাচ্চাটা দুধ খাচ্ছে, যার দুধ খাচ্ছে তার সঙ্গে যে একটা সম্পর্ক হচ্ছে, এটা ওই বাচ্চাটা জানবে কি না। এই প্রক্রিয়াটা যতক্ষণ স্বচ্ছ না হবে এটা নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে।’

একই সমস্যার কথা তুলে ধরে ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব মওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, কোনো বাচ্চা কোনো নারীর দুধ পান করলে ওই নারী তার দুধ মা হয়ে যায়। বড় প্রশ্ন হলো কীভাবে চিহ্নিত করা যাবে, মায়ের সংরক্ষিত এই দুধ কে খেল?

‘রসুল (সাঃ) এর জামানায় কেউ যখন দুধ মা হত, তখন তারা চিহ্নিত করে রাখত যে কে কে দুধ মায়ের দুধ খেয়েছে। এখন এটা কীভাবে চিহ্নিত করবে?’

তবে প্রশ্নগুলোর মীমাংসা করে এই কাজ নিয়ে এগোলে তা সমস্যা দেখছেন না মওলানা মাসঊদ।

প্রসঙ্গত, মাতৃদুগ্ধ সংরক্ষণে ‘মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপনের বিরুদ্ধে যথাযথ শর্ত আরোপ চেয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ), নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (স্কানো), নবজাতক আইসিইউ (এনআইসিইউ) এবং ঢাকা জেলা প্রশাসসকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহমুদুল হাসান। নোটিশে বলা হয়েছে, ‘মিল্ক ব্যাংক’ ইস্যুতে আইনগত ও ধর্মীয় সমস্যা রয়েছে।

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, কোনো শিশু কোনো নারীর দুধ পান করলে ওই নারী ওই শিশুর দুধমাতা হয়ে যান। বাংলাদেশে ওই ‘মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপনের ফলে একই মায়ের দুধ পানের কারণে যারা দুধ পান করবে, তারা প্রত্যেকে ভাই-বোন হয়ে যাবে। তাই ভবিষ্যতে এসব ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে হলে সেটি ইসলাম ধর্মবিরোধী হয়ে যাবে।

এছাড়া ‘মিল্ক ব্যাংক’ ১৯৩৭ সালের মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। তাই নোটিশ অনুসারে মিল্ক ব্যাংক স্থাপনে যথাযথ শর্ত আরোপ চাওয়া হয়েছে। না হলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *