সিলেটে স্ত্রীর সামনেই ৩ মাস ধরে তরুণীকে ধর্ষণ করতো লম্পট মানিক

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: একটি মাত্র ঘর। সেখানেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন মানিক। মাঝে মধ্যেই অচেনা তরুণী বাসায় নিয়ে আসেন। বউয়ের সামনেই একই ঘরে তরুণীদের সঙ্গে বসবাস করেন। বউয়ের মতোই আচরণ করেন তরুণীদের সঙ্গে।

রাতের পর রাত এভাবেই কাটায় স্ত্রী। প্রতিবাদ করলে নেমে আসে অত্যাচার। এভাবে তিন মাস আটকে রেখে ছাতকের এক তরুণীকে বউয়ের সামনেই ধর্ষণ করে চলছিল মানিক।

তবে স্বামীর এ ঘটনার প্রতিবাদী ছিলেন স্ত্রী। এতে রেগে যায় মানিক। অকথ্য নির্যাতন করে স্ত্রীকে। গুরুতর আহত হন স্ত্রী। নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পেরে মানিকের স্ত্রীর বোন রুবিনা সহায়তা চায় সিলেটের মোগলাবাজার পুলিশের। এরপর কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে।

নির্যাতিত স্ত্রীকে উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশ খোঁজ পায় তিন মাস ধরে ধর্ষিতা হওয়া তরুণীর। মঙ্গলবার রাতে প্রথমে ঘটনার সত্যতা জানতে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে পুরো ঘটনা শুনে সেখানে যান ওসি আক্তার হোসেন সহ সিনিয়র কর্মকর্তারা।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকরের জুবেল মিয়ার কলোনিতে। ওই ঘর থেকে নির্যাতনের শিকার মানিকের স্ত্রী ও ধর্ষিতা তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় পুলিশ মানিককেও গ্রেপ্তার করে।

জানা যায়, মানিকের পুরো নাম শাহ আলম আহমদ মানিক। সে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার নিজ গাঁও গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে। কয়েক বছর ধরে সিলেট নগরীতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছে মানিক। সর্বশেষ সে গোটাটিকরের জুবেল মিয়ার কলোনির ভাড়াটে ছিল।

উদ্ধার হওয়ার পর মানিকের স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছে, তার স্বামীর চরিত্র ভালো নয়। সে দিনের বেলা বাসায়ই থাকে। রাতে বের হয়ে যায়। বলে সিএনজি চালায়। কিন্তু আসলে কী করে সেটি তিনি জানেন না।

সিলেটের গোটাটিকরের ওই বাসাসহ আগের কয়েকটি বাসায় অবস্থানকালে তার কুরুচির বিষয়টি ধরা পড়ে। সে মাঝেমধ্যে বিয়ের কথা বলে নিজের ঘরে তরুণীদের নিয়ে আসে। তাদের মাত্র একটি ঘর। ওই ঘরেই তারা বসবাস করে। আর সেখানেই অন্য তরুণীদের নিয়ে আসে। স্ত্রীর সামনেই তরুণীদের সঙ্গে দৈহিক মিলনে লিপ্ত হয় সে। এ নিয়ে স্ত্রী প্রতিবাদ করলেই অকথ্য নির্যাতন করে। মারধরের কারণে তিনি প্রায় সময় অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ঘরে থাকা তরুণীর সামনে সহবাসের সময় স্ত্রী প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে তাকে মারধর করে।

উদ্ধার হওয়া ধর্ষিত তরুণী পুলিশকে জানিয়েছে তার ওপর নির্যাতনের কথাও। ছাতকে বাড়ি ওই তরুণী জানায়, মাস ছয়েক ধরে মোবাইলের মাধ্যমে মানিকের সঙ্গে তার সম্পর্ক। কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর মানিকের প্রলোভনে পড়ে সে বাড়ি ছাড়ে। চলে আসে সিলেটে।

মানিক তাকে নিয়ে আসে গোটাটিকরের ওই কলোনিতে। সেখানে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে মানিক। পরে বার বার বিয়ের আশ্বাস দিলেও বিয়ে করেনি। উল্টো তিন মাস ঘরে বন্দি রেখে সে ধর্ষণ করেই চলেছে। তাকে কখনোই ঘরের বাইরে বের হতে দিতো না। বন্দি রাখতো।

এদিকে, উদ্ধারের পর নির্যাতিতা স্ত্রী ও তরুণীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে পাঠায় পুলিশ। তারা বর্তমানে সেখানেই আছে। তবে গ্রেপ্তারের পর শাহ আলম আহমদ মানিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

মোগলাবাজার থানার ওসি আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, মানিক লম্পট। গ্রেপ্তারের পর সে একাধিক মেয়েকে বাসায় এনে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। সর্বশেষ সে ছাতকের ওই মেয়ে এনে তিন মাস আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে বলে স্বীকার করে। এরপর আগেও সে বাসায় একই ঘটনা ঘটায়। আর এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে তার স্ত্রীকে অকথ্য নির্যাতন করে। ছাতকের তরুণীকে তার শ্যালিকা বলে এলাকার মানুষের কাছে সে প্রচার করেছিল।

এদিকে স্ত্রী ও ওই তরুণীকে উদ্ধারের পর নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী বাদী হয়ে মোগলাবাজার থানায় ঘরে বন্দি রেখে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা করেছে। আর এ মামলার আসামি হিসেবে মানিককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ওসি জানান, মানিক পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনা স্বীকার করেছে। এ কারণে পুলিশ ন্যায় বিচারের স্বার্থে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করা হবে। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *