দক্ষিণ সুনামগঞ্জে জনশুমারীর নিয়োগ নিয়ে তোলপাড়

জাতীয় লীড

কাজী মোঃ জমিরুল ইসলাম মমতাজ (দক্ষিন সুনামগঞ্জ): দক্ষিণ সুনামগঞ্জে জনশুমারীর প্রকাশিত নিয়োগ নিয়ে সর্বত্রই দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। জনশুমারীর নিয়োগে অনিয়মে ভরপুর বলে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেক আবেদনকারীরাই। জনশুমারীর নিয়োগ নিয়ে ক্ষোভে ফুসে উটেছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ। অনেক আবেদন কারীদের অভিযোগ কোন প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্ষা না করেই স্বজনপ্রিতী করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সুপার ভাইজার পদে  স্নাতকোত্তর পাসের বিধান থাকলেও মানা হয়নি সেই নিয়ম।

স্নাতকোত্তর পাস নয় এমন ব্যক্তিকেও সুপার ভাইজার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পরে তা দ্রুত কেটে দিয়ে নতুন নাম যুক্ত করে নিয়োগ কমিটি। এমনকি চাকরি থাকা সত্ত্বেও উপজেলা ইউএনও অফিসের ট্যাকনিশিয়ান মনোয়ার হোসেনকেও রাখা হয় সুপার ভাইজার পদে। এর আগে এরকম অনিয়ম দেখেনি দক্ষিণ সুনামগঞ্জবাসী। ফলে সর্বত্রই এখন এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝর।

অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, নিয়োগ পরিক্ষার আগে উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের জুনিয়র পরিসংখ্যান সহকারী শংকর দাস অনেককেই টাকা দেয়ার কথা বলেন। টাকা দিলে পরিক্ষার আগেরদিন প্রশ্ন দিবেন বলে প্রতিশ্র“তিও দেন এই কর্মকর্তা। কিন্তু আবেদন কারীরা টাকা না দেয়ায় নিয়োগ হয়নি তাদের। শুধু এতেই শেষ নয় এই পরিসংখ্যান অফিসারের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। গত বছরেও আরেকটি নিয়োগে অনিয়ম উঠে তার বিরুদ্ধে। নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এই অফিসার নিজের খেয়াল খুশিমতই কাজ পরিচালনা করেন।

ক্ষমতার দাপটে নানা অনিয়ম করেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন এই কর্মকর্তা। আরও জানা যায়, জনশুমারীর নিয়োগ পরিক্ষা ০৫ ফেব্র“য়ারি উপজেলা পরিষদের হলরুমে হওয়ার কথা থাকলেও পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ৮ ফেব্র“য়ারি পাগলা হাইস্কুল এন্ড কলেজে। তারিখ পরিবর্তনের বিষয়ে অনেকেই জানেন না বলেও প্রমাণ মিলেছে। এদিকে জনশুমারীর তথ্য জানার জন্য একাধিকবার কল দিলেও কল রিসিভ করেন নি পরিসংখ্যান অফিসের জুনিয়র সহকারী শংকর দাস। হঠাৎ ফোন বন্ধ, হঠাৎ ব্যস্থ, আবার কখনো কল কেটে দেন এমন করেই দুই ঘন্টা পার হয় এ প্রতিবেদকের।

নিয়োগের বিষয়ে তথ্য আনতে উপজেলায় গেলে উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস থালা বদ্ধ পাওয়া যায়। ১ ঘন্টা অপেক্ষা করার পরেও অফিস না খোলায় তথ্য না নিয়েই ফিরতে হয় এই প্রতিবেদকের। নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

শুয়েব মিয়া নামের একজন লিখেছেন “দক্ষিন সুনামগঞ্জ উপজেলা জনশুমারী তে জয়কলস ইউনিয়নে দুইজন ছেলে পাশ করেছে। আর এই দুইজন দক্ষিন সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসারের খুব কাছের লোক। বাদবাকী অনেক ছেলেরা পেল করেছে। আমার মনে অয় জয়কলস ইউনিয়নের সেরা ছাত্র এরা দুইজন।

মোহাম্মদ নুর হোসেন নামের আরেকজন লিখেছেন ” শুধু নাম মাত্র পরিক্ষা জনশুমারী ও গৃহগণনা ২০২১ এর পরীক্ষায় চান্স পেয়েছেন অধিক মেধাবিরা। অভিনন্দন মেধাবীদের, কেনো এই নাটকটা করা হলো? যাতায়াত খরচটা দিয়ে দিলেই তো ভালো হতো।

জনশুমারীরতে সুপার ভাইজার পদের আবেদনকারী নিতাই দাস বলেন, আমাকে প্রশ্ন দেয়ার জন্য টাকা দেয়ার কথা বললে আমি টাকা না দেয়ায় আমার নিয়োগ হয়নি।
আল মাহমুদ সুহেল নামের একজন বলেন, আমি আমার ছোট ভাইকে নিয়ে গিয়েছিলাম পরিসংখ্যান অফিসে তখন শংকর বাবু আমার কাছে ২ হাজার টাকা চান। আমি টাকা না দেয়ায় আমার ভাইয়ের নিয়োগ হয়নি।

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের জুনিয়র সহকারী শংকর দাসকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা প্রাথমি শিক্ষা অফিসার বজলুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে ইউএনও মহোদয়কে কল দিন সব জানতে পারবেন।

উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, পরিক্ষা ১০০% ভালো হয়েছে। একটা ভুল ছিল দ্রুত ঠিক করে দেয়া হয়েছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেবুন নাহার শাম্মী বলেন, ভুলক্রমে একজন ছিল। তাকে বাতিল করা হয়েছে।

জেলা পরিসংখ্যান উপ-পরিচালক মোঃ কামাল উদ্দীন বলেন, প্রত্যেকটা উপজেলায় একটা কমিটি থাকে আর সেই কমিটিই নিয়োগের সকল সিদ্ধান্ত নেয়। সেই কমিটির সভাপতি উপজেলার ইউএনও, আপনারা উনাকে কল দেন সব জানতে পারবেন।

উল্লেখ যে, সরকারী ডাটাবেজ তৈরির জন্য ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় জনশুমারি ও গৃহশুমারির তথ্য সংগ্রহের জন্য গণনাকারী ও সুপারভাইজার পদে লোক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৮ ফেব্র“য়ারি শনিবারে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *