সৈয়দ আশরাফের মৃত্যু: সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা নিয়ে জটিলতায় ইসি

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক:

সদ্য প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা নিয়ে আইনি জটিলতায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দশম না একাদশ জাতীয় সংসদে তার আসন শূন্য ঘোষণা হবে- এ নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে ইসির আইন শাখা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৩ জানুয়ারি রাতে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এদিনই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।যেহেতু তিনি শপথ গ্রহণ করেননি, তাই একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলে গণ্য হয়নি। এদিকে, তার দশম সংসদের সদস্য পদটি চলতি মাসের ২৮ তারিখে পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করবে।তদুপরি তিনি মৃত্যুর সময়ও ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী। পদে থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি জয়লাভ করেন। এ অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি তার জয়ী হওয়ার গেজেট প্রকাশ করে ইসি।এমন অবস্থায়, তার কোন আসনটি শূন্য হবে, তা নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।

ইসি সূত্র জানায়, সংসদ সচিবালয় এ জটিলতার কারণেই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পদটি শূন্য ঘোষণা করতে পারছে না। আর এ কারণে আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা পালন নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো সংসদ সদস্যের মৃত্যু হলে সংবিধানের ১২৩ (৪) ধারা অনুযায়ী তার আসনটি শূন্য এবং নির্বাচন করা হয়। ওই ধারা অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো কারণে কোনো সদস্য পদ শূন্য হলে ৯০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে হয়।

ইসির আইন শাখা জানায়, দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৮ জানুয়ারি। কাজেই তার এ পদটি শূন্য ঘোষণা করা যাবে না। কেননা, এ পদটি শূন্য ঘোষণা করা হলে ১৯ দিনের মধ্যেই (২৮ জানুযারি) আবার নির্বাচন করতে হবে। আবার যেহেতু ১৯দিন পর দশম সংসদ ভেঙে যাবে, তাই দশম সংসদের কোনো শূন্য পদে নির্বাচনের অর্থ হয় না। এছাড়া এতো কম সময়ে নির্বাচন আয়োজন করাও সম্ভব নয়।

আবার একাদশ সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি শপথ নিতে না পারায় তার আসনটিও শূন্য করতে পারছে না সংসদ সচিবালয়। কেননা, সংবিধান অনুযায়ী- শপথ না নিলে কার্যভার গ্রহণ করেছে বলে গণ্য হয় না অথবা সংশ্লিষ্ট নির্বাচিত ব্যক্তি সংসদ সদস্য হওয়ার ‘যোগ্য’ হন না বা ‘অযোগ্য’ বলে বিবেচিত হন।

শপথ না নিলে আসন শূন্য হওয়ার বিষয়ে সংবিধানে ৬৭ (ক) ধারায় বলা হয়েছে- সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে নব্বই (৯০) দিনের মধ্যে তৃতীয় তফসিলে নির্ধারিত শপথগ্রহণ বা ঘোষণা করতে ও শপথপত্রে বা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে অসামর্থ হলে সংশ্লিষ্ট আসন শূন্য হবে। আর নির্বাচন করতে হবে আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে।

এরই মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে আগামী ৩০ জানুয়ারি। তাই সংবিধানের ৬৭(ক) বিধান অনুযায়ী, একাদশ সংসদের কিশোরগঞ্জ-১ আসনটি শূন্য ঘোষণা করতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরো তিন মাস। এক্ষেত্রে আসনটিতে ভোট হবে আগামী জুন মাস নাগাদ।

এ অবস্থায় ইসির অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা বলছেন, এসব আইনি জটিলতা থেকে মুক্তির অন্য একটি পথ সংবিধানে খোঁজা যেতে পারে। সেটি হচ্ছে ৭১ ধারা। এখানে একই ব্যক্তি একই সময় দুই বা ততোধিক নির্বাচনি এলাকার সংসদ সদস্য থাকতে পারবেন না, বলা আছে। কাজেই এ বিধানের স্পিরিট আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একাদশ জাতীয় সংসদের আসনটি শূন্য করতে পারে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বলেন, একটা জটিলতা আছে। কিন্তু আইনের স্পিরিট বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন আসনটি শূন্য ঘোষণা করতে পারে। এক্ষেত্রে তার আসনটি সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের মৃত্যুর দিনকেই শূন্য হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। আর নির্বাচন হবে আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *