জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা পাচ্ছেন ৭৫ লাখ টাকা!

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: ২০১৮ সালের জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণের নীতিমালা জারি করেছিলো সরকার। তবে সেই ঋণের জন্য শুধুমাত্র তারাই আবেদন করতে পেরেছেন যাদের বেতনভাতা ইএফটিতে হচ্ছিলো।

আর আইবাস প্লাসপ্লাস নামের ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে যেসব সরকারি চাকরিজীবীরা বেতনভাতা পাননি তারা ওই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেননি।

কিন্তু এবার সকল সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা সেই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কারণ, আগামী জুন মাস থেকে সরকারের সব চাকরিজীবীদের বেতনভাতা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটির আওতায় আসবে। তখন কম সুদের গৃহঋণ নিয়ে বাড়ি, প্লট ও ফ্ল্যাট নির্মাণ বা কিনতে পারবেন চাকরিজীবীরা।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ফ্ল্যাট ও প্লট কিনতে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণের নীতিমালা জারি হয় ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই, যা ওই বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর ধরা হয়।

নীতিমালা অনুযায়ী, জমি বা ফ্ল্যাট কিনতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন তারা। যেকোনো সরকারি চাকরিজীবী ৯ শতাংশ সুদে এ ঋণ নিতে পারবেন। ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণের ৫ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবেন। বাকি ৪ শতাংশ সরকার মাসিক কিস্তিতে ভর্তুকি দেবে।

সেই নীতিমালা জারির পর রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরিজীবীদের এ ঋণ দেয়ার কথা।

নিয়ম অনুযায়ী, যেকোনো চাকরিজীবী ঋণ পাওয়ার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের যেকোনো একটিতে আবেদন করবেন। ব্যাংক ওই আবেদন যাচাই-বাছাই করে ইএমআই শেষে আবেদনকারী কর্মকর্তা যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত আছেন, ওই মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। ওই মন্ত্রণালয় থেকে তা অনুমোদন করে অর্থ বিভাগে ‘গৃহ নির্মাণ ঋণ কোষ’ শাখায় পাঠানো হবে। তখন এ শাখা থেকে প্রাথমিক জিও জারি করে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেয়া হবে। তার ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণ দেবে।

ঋণ দেয়ার পর অর্থ বিভাগ চূড়ান্ত জিও জারি করে আইবাস প্লাসপ্লাসে ওই কর্মকর্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যাতে প্রতি মাসে সুদের ভর্তুকির অর্থ স্থানান্তর হয়, সে ব্যবস্থা করবে। ঋণ নেয়ার পর ২০ বছর বা ঋণগ্রহীতার পিআরএলের মধ্যে যেটি আগে হবে, ততদিন প্রতি মাসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভর্তুকির অর্থ পৌঁছে যাবে। নতুন বাজেটে গৃহনির্মাণ ঋণ খাতে সুদ ভর্তুকি বাবদ ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ঋণ বিতরণে গতি না আসায় ভর্তুকির এ অর্থ খরচ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ সালে তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আইবাস প্লাসপ্লাস সফটওয়্যার উদ্বোধন করেন। তারপর থেকে সচিবালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ ঢাকায় সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে হচ্ছে। আর ঢাকাসহ সারা দেশের বাকিদের বেতন হচ্ছে চেকের মাধ্যমে। যেহেতু এ ঋণের সুদ ভর্তুকির টাকা সরকার থেকে আইবাস প্লাসপ্লাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে দেয়া হয়, তাই যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন এখনো এ সফটওয়্যারের আওতায় আসেনি, তারা এ ঋণ নিতে পারছিলেন না।

তিনি আরও জানান, তবে এবার দেশের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন দেয়াসহ সরকারের সব ধরনের আর্থিক কর্মকাণ্ড আইবাস প্লাসপ্লাস সফটওয়্যারের আওতায় আনার কাজ চলছে। এজন্য পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট (পিএফএম) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

নিয়ম অনুযায়ী, চাকরিজীবীর বেতন যে শাখার যে হিসাবে হবে, ওই হিসাব থেকেই ব্যাংক ঋণের কিস্তি কেটে রাখবে। আর সরকারের ভর্তুকিও ওই হিসাবে জমা হবে। কিন্তু যারা চেকের মাধ্যমে বেতন পান, তারা চেক কোন ব্যাংকের কোন হিসাবে জমা দেবেন, তার নিশ্চয়তা না থাকায় তাদের ঋণ দেয়া সম্ভব এতোদিন হচ্ছিলো না। আবার সরকার ঋণগ্রহীতার ঋণের সুদের ভর্তুকি কোন হিসাবে দেবে, তারও ঠিক করা ছিলো না। এবার ইএফটি সেবা চালু এসব সমস্যা আর থাকবে না।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে নবম থেকে প্রথম গ্রেডে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা ইএফটির মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতাও ইএফটির আওতায় দেয়া হবে। এছাড়া বেসামরিক প্রশাসনের কর্মরত অবস্থায় কেউ মারা গেলে বা স্থায়ী অক্ষম হলে তাদের দেয়া আর্থিক অনুদানও ইএফটির আওতায় আনা হচ্ছে। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *