হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সাংবাদিক আরিফুল

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: অবশেষে জামিন পেলেন বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুত্বর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন আরিফুল।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার মধ্যরাতে বাড়ির দরজা ভেঙে আমাকে প্রথমে আঘাত করে আরডিসি। উনি আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন এবং টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত এবং চোখ বেঁধে ফেলেন। এরপর ইনকাউন্টার দেয়ার কথা বলে আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।‘

আরিফুল বলেন, ‘আমি অনেক আকুঁতি-মিনতি করি এবং আমি আমার আল্লাহর কসম দেই। আমার সন্তানদের কসম দেই এবং আমার প্রাণ ভিক্ষা চাই তাদের কাছে। এরপরও তারা ক্ষান্ত হচ্ছিলেন না। আমাকে বারবার বলছিলেন যে, কলমা পড়ে নে, কলমা পড়ে নে। এ সময় আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এরপর কোন এক জায়গা থেকে ঘুরিয়ে আমাকে আবারও ডিসি অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে কোনরকম হাত দিয়ে চোখের বাঁধন আলগা করে দেখি আমি ডিসি অফিসে।‘

‘এরপর আবার শক্ত করে চোখ বেঁধে আমাকে একটি রুমে নিয়ে আরডিসি’র নেতৃত্বে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং নির্যাতন করা হয়। আরডিসি নিজেই আমাকে মার দিয়েছেন। আমাকে বিবস্ত্র করে আমার ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। এরপর আমার কাছ থেকে ৪টি স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে চোখ বাঁধা অবস্থায়। কিসের স্বাক্ষর নিয়েছে সেটা আমি এখন পর্যন্ত জানি না। এরপর তাড়াহুড়া করে তারা আমাকে কারাগারে নিয়ে যায়। আমাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার চিহ্ন আমার সারা শরীরে রয়েছে।‘

জামিনের আবেদন করেছেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাবে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে আসার আগ পর্যন্ত যা হয়েছে সব আমার অমতে হয়েছে।

এর আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট আনসার সদস্যদের নিয়ে সাংবাদিকের শহরের চড়ুয়াপাড়ার বাড়িতে যায়। এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে স্ত্রী-সন্তানের সামনেই আরিফুলকে মারধর করে ধরে নিয়ে আসে তারা। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে এসে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারনের পর আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা রাখার অভিযোগে তাকে ১ বছরের কারাদণ্ড দেয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। জামিন পাওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এসব বর্বর নির্যাতনের বর্ণনা দেন নির্যাতিত সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম।

এদিকে আহত অবস্থায় জামিন নিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পরে জেলাজুড়ে। জেলা প্রশাসকসহ জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে আসেন এলাকাবাসী। হাসপাতালে এসে জড়িতদের বিচারের দাবিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তার সহকর্মী সাংবাদিক ও তার পরিবারের সদস্যরা।

আরিফুলের বড় বোন শিক্ষিকা রিজিকা বেগম জানান, আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে জামিনের কোন আবেদন করা হয়নি। তারা আমার ভাইকে মারার উদ্দেশ্যে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। সাংবাদিকদের তৎপরতায় তা পারেনি। আমি আমার ভাইয়ের ওপর নির্যাতনের বিচার চাই।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব জানান, সাংবাদিকরা আরিফুলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করে আসলেও আদালত ২৫ হাজার টাকা মুচলেকায় মামলাটি চলমান রেখে জামিন দেন। এ অবস্থায় সাংবাদিক ও এলাকাবাসী আরিফুলের নিঃশর্ত মুক্তিসহ মামলা প্রত্যাহার ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল আই প্রতিনিধি শ্যামল ভৌমিক জানান, এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকসহ যেসব কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে, তাদের শুধু প্রত্যাহার করলে হবে না। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং আরিফুলের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তা নাহলে আমরা আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *