স্বদেশ বাণী ডেস্ক: জামিনে মুক্ত হওয়ার পর সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের সঙ্গে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের ফোনালাপের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। ফোনালাপে ডিসি সুলতানা সাংবাদিক আরিফকে মিডিয়া এড়িয়ে চুপচাপ থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘তোমার মামলা প্রত্যাহার করিয়ে দিব। একটু সময় দিবা।’
জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরই ডিসি সুলতানা এক ব্যক্তির মাধ্যমে আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ফোনে কথা বলেন। তাদের মধ্যকার ওই কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফোনে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এখন মিডিয়াকে অ্যাভয়েড (এড়ানো) করে থাকো। মিডিয়াতে কথা বোলো না। দেখা যাক আল্লাহ ভরসা। তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আপাতত চিন্তা করার দরকার নাই। ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তা করার কিছু নাই। আমরা তোমার পাশে থাকব। তোমার মামলা প্রত্যাহার করে নেব। একটু সময় দিয়ো। একটু পজিটিভলি দেখতে হবে।’
মোবাইল ফোনে কথোপকথন রেকর্ডে দেখা যায়, আরিফের কাছে ডিসি সুলতানা পারভীন প্রথমে তার অবস্থা জানতে চান। আরিফ তখন তাকে বেধড়ক মারধর কেন করা হয়েছে তা জানতে চান। একই সঙ্গে তার কাছ থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় স্বাক্ষর নেওয়া চারটি কাগজ ফেরত চান। প্রত্যুত্তরে ডিসি সুলতানা পারভীন বলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তোমাকে ফেরত দেব… কথা বলে নিজে আমি তোমাকে ফেরত দেব… যদি নিয়ে থাকে ওরা। কোন কাগজে সই নিয়েছে। তোমার মোবাইল কোর্টের ইয়াতে সই ছিল, বুঝছো!’
আরিফ এ সময় বলেন, ‘আমার চোখ বাঁধা অবস্থায় চারটা সই নিয়েছে।’
প্রত্যুত্তরে ডিসি বলেন, ‘মোবাইল কোর্টের আদেশে তোমার সই নিয়েছে। ওটা মোবাইল কোর্টের ইয়াতেই। আচ্ছা যা-ই হোক, এখন ঘটনা যেভাবে ঘটে গেছে, যা ঘটেছে তুমিও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেইখো। আমি নিজেও আসলে অনুতপ্ত। তুমি একটু রেস্ট নাও। যাও। থাকো। নিরিবিলি একটু থাকো, ঠিক আছে!’
আরিফুল ইসলাম রিগান এ সময় তিনি এনকাউন্টারে দেওয়ার মতো অপরাধ করেছেন কি না তা ডিসির কাছে জানতে চান।
প্রত্যুত্তরে ডিসি সুলতানা পারভীন বলেন, ‘এনকাউন্টারের মানসিকতা আসলে আমাদের ছিল না। ওইভাবে ছিল না।’
আরিফ ডিসিকে বলেন, ‘আপনি আমাকে একদিন ডাকতে পারতেন, আমি কি আসতাম না?’ এর উত্তরে ডিসি বলেন, ‘না, সেটা আসতা। এখনো আসবা, সমস্যা নাই। এখন ধর যে, কষ্ট তো তুমিও পাচ্ছ, কষ্ট আমিও… হয়ে গেছে যেটা, এটা এদিকে দেখতে হবে একটু পজিটিভলি। এটাই বলার জন্য…।’
আরিফ এ সময় ডিসিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তারা কী উদ্দেশ্যে এ কাজটি করলেন এটা আমার জানা বাঞ্ছনীয়। এবং তারা আমার চারটি কাগজে সই নিয়েছে, কেন নিয়েছে এটা আমার দেখতে হবে। আমার দুই নামেই সই নিয়েছে তারা। এবং আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই চিন্তিত।’
প্রত্যুত্তরে ডিসি বলেন, ‘তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে এতটা চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই। চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে, ভালো থাকবা ইনশা আল্লাহ।’ মিডিয়ায় ডাকতে পারে জানালে ডিসি বলেন, ‘এখন কী করতে চাচ্ছ? আমি যেটা বলব যে, এখন মিডিয়াকে অ্যাভয়েড করে থাকো। যাও। দেখা যাক আল্লাহ ভরসা। আমরাও তোমার পাশে আছি আরকি।’
আরিফ এ সময় আবার চোখবাঁধা অবস্থায় স্বাক্ষর করা কাগজের প্রসঙ্গ তুললে ডিসি বলেন, ‘ঠিক আছে আমি খোঁজ নিয়ে দেখি। এটা তো মোবাইল কোর্টের নির্দেশনাতেই ছিল। অন্য কিছুতে নেয়নি। আর তোমার বিষয়ে অত ইয়া তো আমাদের… যা-ই হোক… ঘটনাটা ঘটেছিল।’
মামলা প্রসঙ্গে ডিসি বলেন, ‘তোমার মামলা প্রত্যাহার করে দেব, সমস্যা নাই। একটু সময় দিয়ো। একটা-দুইটা শুনানির সময় লাগবে। তোমার চাকরির ব্যাপারেও আমি দেখব। চাকরির ব্যাপারে কোনো টেনশন কোরো না।’
এই ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে আরিফুল ইসলাম জানান, কারাগার থেকে বের হওয়ার পর জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন এক ব্যক্তির মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ফোনে তার সঙ্গে কথা হয়। অন্যদিকে ফাঁস হওয়া কথোপকথনের বিষয়ে সুলতানা পারভীন এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি।
প্রসঙ্গত যে, সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণ হওয়ায় গত সোমবার কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন এবং জেলা প্রশাসনের তিন কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী কমিশনার (আরডিসি) নাজিম উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু কান্তি দাশ ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। সুলতানা পারভীনের স্থলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগকৃত নতুন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। আগামী বৃহস্পতিবার তিনি কুড়িগ্রামে কাজে যোগদান করতে পারেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।
স্ব.বা/শা